বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বরগুনার এক হতদরিদ্র স্বামীহারা এক মা অভাব অনটনের কারণে নিঃসন্তান দম্পতির কাছে নিজের সাত বছরের মেয়েকে লালন-পালন জন্য দিয়েছিলেন। বছরখানেক পূর্ব থেকে পালক পিতার লালসার হয়ে এখন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সন্তান প্রসবের তারিখ ৯ মে। ভর্তি বরগুনা জেলা সদর হাসপাতালে।
মেয়েটির বয়স সবেমাত্র ১৪! বরগুনার আর দশটি সাধারণ শিশুর মতোই নিষ্পাপ চেহারা ওর। এখনও শিশুসুলভ আচরণ। গুছিয়ে সব কথা বলতে পারেন না এখনও। এ বয়সেই পালক বাবার ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে সন্তান প্রসবের জন্য বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি শিশুটি। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে আগামী ৯ মে শিশুটির সন্তান জন্ম দেয়ার তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা আর আইনি জটিলতার কারণে এই প্রতিবেদনে সন্তানসম্ভবা ওই শিশু মায়ের নাম এবং পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
এ বিষয়ে নির্যাতিত ওই শিশুটির মা বলেন, স্বামীর সঙ্গে আমার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এ কারণে আমি খুব অভাবে ছিলাম। ভিটেমাটি বলতে আশ্রয়ন প্রকল্পে সরকারি একটি ঘর। তিন সন্তানকে নিয়েই আমার সেই ঘরে বসবাস। দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য অন্যের বাড়িতে কাজ করতাম আমি। তাই মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চিন্তা করে বরগুনার আনোয়ার হোসেন আর মোর্সেদা বেগম লায়লা নামের এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে আমার মেয়েকে লালন-পালনের জন্য দেই। মূলত ওই দম্পতি তাদের নিজেদের সন্তান পরিচয়ে আমার মেয়েকে লালন-পালনের জন্য নেন।
তিনি আরো বলেন, তারা নিজেদের সন্তানের পরিচয়ে আমার সন্তান লালন-পালনের কথা বলে মেয়ের সর্বনাশ করেছেন। আনোয়ারের ধর্ষণে আমার ১৪ বছরের মেয়ে এখন ৯ মাসের সন্তানসম্ভবা। সন্তান প্রসবের জন্য ওকে বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দরিদ্র হলেও আমারতো সম্মান আছে। লম্পট আনোয়ারের জন্য এখন আমি মানুষকে মুখ দেখাতে পারি না। নিজের সন্তানতুল্য ১৪ বছরের মেয়েকে যে ধর্ষণ করে সন্তানসম্ভবা করতে পারে, আমি তার ফাঁসি চাই। সেই সাথে আমি ক্ষতিপূরণও চাই।
এ ঘটনায় মামলা হলে গত ১ ফেব্রুয়ারি আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর থেকে কারাগারেই আছেন আনোয়ার।
আনোয়ার বরগুনা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের থানাপাড়া এলাকার মরহুম নুর আলম মাস্টারের ছেলে। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। চাকরির সুবাদে স্ত্রী লায়লা এবং পালিত ওই শিশুকন্যাকে নিয়ে তিনি ঢাকায় বসবাস করতেন।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী নির্যাতিত শিশুটির নানী বলেন, ওর যখন সাত বছর বয়স তখন ওকে নিঃসন্তান দম্পতি আনোয়ার ও লায়লা নিজেদের সন্তান পরিচয়ে লালন-পালনের জন্য নেন। এরপর থেকে ও তাদের বাসায়ই ছিল। তবে মাঝে মাঝে আমাদের সঙ্গে ওর যোগাযোগ হতো। অভাব অনটনের কারণে ওর মা (শিশুটির মা) এখন সৌদি আরবে গৃহকর্ত্রীর কাজ করেন। নয় মাস আগে তিনি দেশে এসেছিলেন। পরে ঢাকা থেকে বরগুনা ফেরার সময় ওকে (শিশুটিকে) বরগুনা নিয়ে আসেন। ও (শিশুটি) যে সন্তানসম্ভবা তা তখনই আমরা বুঝতে পারি।
তিনি আরো বলেন, কি হবে ওর ভবিষ্যৎ? কোথায় রাখবে ও এই সন্তান? কিভাবে লালন-পালন করা হবে এই সন্তান? কে নেবে ভরণপোষণের দায়িত্ব? কিছুই তা ভেবে পাচ্ছিনা।
নির্যাতিত শিশুটির ভাই জানান, বিষয়টি জানার পর তারা মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেন। পালিত বাবার ধর্ষণে তার ১৪ বছরের শিশু বোনটি এখন নয় মাসের সন্তানসম্ভবা। বাবা পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে আনোয়ার ওকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করেছে। অথচ ভয়ে কাউকে কিছু বলেনি বা বলার সুযোগ পায়নি তার বোন।
ওই ভাই আরো বলেন, আমরা খুব গরিব ও অসহায়। এ জন্যই ওকে আনোয়ার এবং লায়লার কাছে লালন-পালনের জন্য দিতে রাজি হয়েছিলাম। আর কয়েকদিন পরেই আমার ১৪ বছরের বোন সন্তান প্রসব করবে। সেই সন্তান লালন-পালন করার কোনো ক্ষমতাই আমাদের নেই। আদালতে মামলা করার পর খরচ দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। আসামিরা খুব প্রভাবশালী হওয়ায় এখনও আমাদের অনবরত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডের ওয়ার্ড ইনচার্জ মোসাঃ লাইজু আক্তার বলেন, সন্তান প্রসবের জন্য শিশুটিকে গত ২৭ এপ্রিল বরগুনার সদর হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে ওর সন্তান প্রসবের তারিখ ৯ মে উল্লেখ করা হয়েছে। শিশুটি এখন পর্যন্ত সুস্থ এবং স্বাভাবিক আছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আমরা প্রথমে স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবের চেষ্টার করবো। কিন্তু তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে সিজার করা হবে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানায় কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূরে জান্নাত কেয়া বলেন, বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলায় আনোয়ার হোসেনকে ও ধর্ষণে সহযোগিতা করার জন্য তার স্ত্রী মোর্সেদা বেগম লায়লাকে আসামি করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই আমরা আনোয়ারকে গ্রেফতার করেছি।
তিনি আরো বলেন, ওই শিশুটি সন্তান প্রসব করলে সেই সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। তারপর এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। এরপর মামলার বিচার কাজ শুরু হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।