পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের রাজধানী শহরের বিভিন্ন শ্মশানের বাইরে রাস্তায় টোকেন নিয়ে লাশের দীর্ঘ লাইন তখন অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে চলছে আইপিএল। লাশ পোড়ানোর টোকেন নিয়ে ২০ ঘণ্টা কেটে যাচ্ছে আগুন পেতে। রাস্তায় পড়ে থাকা লাশ ছিঁড়ে খাচ্ছে কুকুর। শ্মশানের দরজায় দরজায় ঘুরে জায়গা না পেয়ে স্রেফ বরফ চাপা দিয়ে ৪৮ ঘন্টাও বাড়িতে শব রেখে দিচ্ছে স্বজনেরা। এ যদি নরক না হয়, তা হলে নরক ঠিক কী? প্রশ্ন দিল্লিবাসীর।
এ করুণ পরিস্থিতির মধ্যেই দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে যথারীতি বসেছে আইপিএল-এর আসর। দর্শকশূন্য মাঠ হলে হবে কী! নিরাপত্তার ব্যবস্থা তো করা চাই! অতএব স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে অ্যাম্বুলেন্স, কোভিড পরীক্ষার যাবতীয় সরঞ্জাম। ওদিকে শহরের মানুষ খাবি খাচ্ছেন, ওষুধের অভাবে, শয্যার অভাবে ধুঁকছেন। আইপিএল চলছে। কারা চালাচ্ছে? কার স্বার্থ রক্ষা করছে ভারতীয় ক্রিকেট? ক্ষোভে ফেটে পড়ছে নাগরিক সমাজ। দিল্লির সুভাষনগর শ্মশানে টিনের চালের নিচে সারি সারি চিতা জ্বলছে। উড়ছে ছাই। এমনিতে নতুন নয় এই দৃশ্য। কিন্তু সেই ছাই উড়ে পড়ছে পাশের যে চাতালে? সেই চাতাল ধরেই এখন মৃতদেহের সর্পিল রেখা। এক ঝলক তাকালেই মাচার সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা অন্তত ১৫-২০টি দেহ চোখে পড়ছে। পাশের উঁচু বাঁধানো জায়গায় ঘি এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে বসে রয়েছেন স্বজনরা। এক, দুই ঘণ্টা নয়, ১৬ থেকে ২০ ঘণ্টাও বসে রয়েছেন কেউ কেউ। যে প্লাস্টিকের ব্যাগে লাশ মোড়া রয়েছে, তার ওপর নাম, নম্বর লেখা। হাতছাড়া হওয়ার ভয় নেই। তাই একটানা বসে না থেকে পোড়া দেহের গন্ধ এবং ধোঁয়া থেকে বেরিয়ে মাঝেমধ্যে বাইরে ঘুরে আসছেন অনেকে।
অপরদিকে, করোনায় মৃত ব্যক্তিদের সৎকারে এগিয়ে এসেছেন মুসলিম স¤প্রদায়। আর মসজিদগুলো উন্মুক্ত করে তৈরি করেছেন করোনা হাসপাতাল। অনেক মৃতব্যক্তির স্বজনরা এগিয়ে না আসায় তাদের লাশ সৎকারে মুসলিম যুবকরা দিন-রাত পরিশ্রম করছেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কঠিন সময় পার করছে ভারত। প্রতিদিন দেশটিতে বেড়ে চলেছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। এই পরিস্থিতিতে ধর্মীয় বিভেদের দেয়াল ভেঙ্গে করোনায় মৃত হিন্দুদের লাশ সৎকার করে মানবতার বন্ধন আরো দৃঢ় করেছেন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মুসলিমরা।
ভারতের উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লক্ষেèৗর বাসিন্দা ইমদাদ ইমান (৩৩) পেশায় গ্রাফিক ডিজাইনার। পাশাপাশি একটি বিপণি বিতানেরও মালিক তিনি। করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর থেকেই মানুষের শেষকৃত্য আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন ইমদাদ। এ কাজে গঠন করেছেন ‘কোভিড ১৯ তদফিন কমিটি’। কমিটির সদস্যসংখ্যা বর্তমানে ২২ জন। ইমদাদ জানান, এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত ৭ জন হিন্দুর সৎকার ও ৩০ জন মুসলিমের দাফনকাজ সম্পন্ন করেছেন তারা। তিনি বলেন, ‘যাদের সৎকার ও দাফন আমরা করেছি, তাদের অধিকাংশের আত্মীয় পরিজন শহরে থাকেন না। কয়েক জনের আত্মীয় থাকলেও দেখা গেছে তারাও করোনায় আক্রান্ত। তাই আমরা এগিয়ে এসেছি।
উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজেও দেখা গেছে একই ছবি। এলাহাবাদ হাইকোর্টের যুগ্ম নিবন্ধনকারী (জয়েন রেজিস্ট্রার) হেম সিংহ সপ্তাহখানেক আগে তার বন্ধু সিরাজকে জানিয়েছিলেন, তিনি করোনায় আক্রান্ত। তারপর হাসপাতালে ভর্তি করালেও বাঁচানো যায়নি তাকে। হেম সিংহের মৃত্যুর পর সংক্রমণের ভয়ে শেষকৃত্যে অংশ নিতে রাজি হননি পরিবারের সদস্যরা। শেষ পর্যন্ত ৪০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে বন্ধুর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন সিরাজ।
ইতোমধ্যেই ইসলামিক মাদরাসা মডার্নাইজেশন টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে প্রস্তাব দিয়েছে, সমস্ত মাদরাসাকে কোভিড পরিষেবার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। দেশের স্বার্থে মাদরাসা শিক্ষকেরা করোনা যোদ্ধা হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী বলেও জানিয়েছে সংগঠনটি। মধ্যপ্রদেশের রাইসেন জেলার মান্ডিদ্বীপ এলাকায় মুসলিমরা ৫ একর ঈদগাহ ময়দান ছেড়ে দিয়েছেন করোনা সেন্টার তৈরির জন্য। স¤প্রতি ওই রাজ্যের বিদিশাতেও হিন্দুর সৎকারে মুসলিম যুবকদের এগিয়ে আসতে দেখা গেছে। গুজরাটের বদ্দোরায় মুসলিমদের উদ্যোগে একটি মসজিদকে কোভিড হাসপাতালে পরিণত করা হয়েছে। শবানুগামীরা দ‚রে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎই এক স্থানীয় ব্যক্তি এসে খবর দেন, রাস্তার কুকুর এসে লাশ ছিঁড়ে দিচ্ছে। তারা দৌড়ে যান। সেই ছবি ও সংবাদ প্রকাশ্যে এসে নিদারুণ বিড়ম্বনায় ফেলেছে দিল্লি সরকারকে। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘নিজের মানুষের দেহের ওপর দাঁড়ানো কোনো সরকার মজবুত হতে পারে না। অন্তিম সংস্কারের জন্য এই অন্তহীন অপেক্ষা শাসকের পাষাণ হৃদয়কেই তুলে ধরছে।’
এদিকে ভারত জুড়ে রূপ পালটে আরো ভয়াবহ হয়েছে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি। গোটা দেশে অক্সিজেনের হাহাকার চলছে। হাসপাতালগুলোতে শয্যা নেই। এহেন পরিস্থিতিতে গতকাল সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানের সাথে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঠকে জেনারেল নারাভানের কাছে করোনা মোকাবেলায় স্থলসেনার প্রস্তুতি ও পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চান মোদি। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে সেনাপ্রধান জানান যে, সেনার হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসা করা হচ্ছে। এবার নিকটবর্তী সেনা হাসপাতালে সাধারণ নাগরিকরা করোনা চিকিৎসার জন্য যেতে পারবেন। এছাড়া, অক্সিজেন মজুত করা ও পরিবহনে কাজ করছে সেনা। সূত্র : এবিপি, এনডিটিভি, টিওআই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।