পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে হতাহত শ্রমিকদের পরিবারগুলো কঠিন সঙ্কটে পড়েছে। এ কঠিন সময়ে কেউ তাদের পাশে নেই। সরকারি কোনো কানাকড়িও পাননি বলে জানিয়েছেন শ্রমিকেরা। বেসরকারি তরফে তেমন কোনো সাহায্য-সহযোগিতাও পায়নি অসহায় পরিবারগুলো। আহতদের অন্তত ১২ জন এখনও বিভিন্ন হাসপাতালে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। টাকার অভাবে ব্যাহত হচ্ছে তাদের চিকিৎসা।
এদিকে গ্রেফতার আতঙ্ক নিয়ে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিক ও আশপাশের এলাকাবাসীর দিন কাটছে। গ্রামবাসীসহ সাড়ে তিন হাজার শ্রমিককে আসামি করায় পুরুষশূন্য গন্ডামারার কয়েকটি গ্রাম। এ সুযোগে পুলিশকে ম্যানেজ করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ চালু হলেও যোগ দেয়নি অনেক শ্রমিক। আহত এবং সেইসাথে মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়ানো অনেকে কর্মস্থলে যোগ দিতে পারছেন না। এতে করে এসব শ্রমিকের পরিবারে অভাব-অনটন, অনিশ্চয়তা ভর করেছে।
গত ১৭ এপ্রিল এস আলমের মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে পুলিশের গুলিতে পাঁচজন শ্রমিক নিহত এবং পুলিশসহ আরও ৫০জনের বেশি আহত হন। পরে হাসপাতালে আরও দুই শ্রমিকদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এস আলম কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ বাদী হয়ে সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক ও গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে থানায় দুটি মামলা করে। রমজান মাসে কর্মঘণ্টা ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ১০ ঘণ্টা এবং শুক্রবারে আট ঘণ্টা ও ইফতার, মাগরিবের নামাজের বিরতির দাবিতে আন্দোলন করছিল শ্রমিকেরা। আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর পুলিশ গুলি চালালে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহত সাত শ্রমিক ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জন ব্যক্তি। মূলত তাদের আয়ে সাতটি পরিবার চলত। এখন সাতটি পরিবারের সামনে চরম অনিশ্চয়তা। গুলিতে শ্রমিক নিহত হওয়ার পর এস আলম কর্তৃপক্ষের তরফে হতাহতদের ‘যথাযথ ক্ষতিপূরণ’ দেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও বাস্তবে তেমন কিছু পাননি হতভাগ্য শ্রমিক ও তাদের পরিবার। নিহতদের পরিবার প্রতি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তিন লাখ টাকা করে দেয়া হয়। আর আহতদের মধ্যে মাত্র ১৫ জনকে দেয়া হয় ৫০ হাজার টাকা করে। অথচ আহতের সংখ্যা অর্ধশতের বেশি।
বিভিন্ন সংগঠন এ হত্যাকান্ডের নিন্দা প্রতিবাদ জানালেও হতাহতদের পরিবারের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। প্রতাপশালী এস আলম গ্রুপ বলে কথা। করোনাকালে কঠোর লকডাউনের মধ্যে কঠিন দুঃসময়ে পড়া এসব পরিবারের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি মাঠের বিরোধী দল বিএনপির কোনো নেতাকে। হতাহতদের পরিবারের প্রতি কোনোরূপ সহানুভূতি জানাতেও বিএনপির কোনো নেতা ঘটনাস্থলে যাননি।
তবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রাজধানী ঢাকা থেকে সুদূর বাঁশখালীর গন্ডামারা পরিদর্শন করেন। হতাহতদের পরিবারের প্রতি সহানুভ‚তি জানানোর পাশাপাশি তিনি নিহতদের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ও পেনশন দেয়ারও দাবি জানান। এ সময় তিনি নিরপরাধ শ্রমিকদের গুলি করে হত্যার ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনেরও দাবি জানান।
গুলিতে নিহত গন্ডামারার হাফেজ মীর খানের মা নূরাইন জান্নাত গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, এস আলমের পক্ষ থেকে তিন লাখ টাকা পেয়েছি। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ইফতারির জন্য তার পকেট থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন। এছাড়া সরকারি তরফে কোনো সহযোগিতা পাইনি। বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানও আমাদের কোনো সহযোগিতা দেয়নি। আমার কর্মক্ষম ছেলেকে গুলি করে মারা হল। বিনিময়ে পেলাম তিন লাখ টাকা। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানানো ছাড়া আর কোনো পথ দেখছি না।
একই অবস্থা নিহত অন্য পরিবারগুলোরও। আহতদের অবস্থা আরও করুণ। চমেক হাসপাতালে বেশ কয়েকজন এখনও চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা এখনও সঙ্কটাপন্ন। আহত শ্রমিকদের স্বজনরা জানান, মাত্র ৫০ হাজার টাকা পেয়েছেন তারা। এ টাকা অনেক আগেই খরচ হয়ে গেছে। গুলিবিদ্ধ শ্রমিকেরা কেমন আছেন তার খোঁজ নিতেও কর্তৃপক্ষের কেউ আসেননি। অনেকেই হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে না পেরে সুস্থ না হতেই বাড়ি ফিরে গেছেন। আহত মাত্র ১৫জনকে সাহায্য দিয়েছে এস আলম কর্তৃপক্ষ। অথচ চমেক হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছিল ৩০ জন। তার মধ্যে ২৩জনই ছিল গুলিবিদ্ধ। পুলিশের ভয়ে যারা বেসরকারি হাসপাতাল এবং বাসাবাড়িতে চিকিৎসা নিয়েছেন তারাও কোনোরকম সাহায্য-সহযোগিতা পাননি।
তবে এস আলমের কর্মকর্তা আকিজ উদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসক যে প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন সে প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী নিহত সাতজনের পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে এবং আহত ১৫জনকে ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। ওই ১৫জনের বাইরে আহতদের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই বলেও জানান তিনি।
এদিকে গুলিতে শ্রমিক নিহতের ঘটনার পর বেশ কয়েকদিন বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকলেও এখন কাজ চলছে বলে জানান থানার ওসি এস এম শফিকুল কবির। তিনি বলেন, প্রশাসনের আশ্বাসের বেশিরভাগ শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছে। মালিক কর্তৃপক্ষও শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া মেনে নিয়েছে।
এ ঘটনা তদন্তে ডিআইজি ও জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হলেও গতকাল পর্যন্ত তা দেয়া হয়নি। জানা গেছে, এডিএমের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিতে আরও কিছু সময় চেয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন জানিয়েছেন, খুব শিগগির তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।