পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারার কয়েকটি গ্রাম এখন পুরুষশূন্য। এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণে পাঁচজন শ্রমিক নিহতের ঘটনায় দুটি মামলার পর থেকে শুরু হয়েছে ধরপাকড়। এস আলম গ্রুপ ও পুলিশের দায়েরকৃত এ দুটি মামলায় আহত শ্রমিক, তাদের স্বজন, পরিবারের সদস্য এবং গ্রামবাসীসহ সাড়ে তিন হাজার মানুষকে আসামি করা হয়েছে। পুরো এলাকাজুড়ে এখন গ্রেফতার আতঙ্ক। সংঘর্ষের পর থেকে বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ। গতকাল রোববারও গন্ডামারা এলাকার পরিস্থিতি ছিল থমথমে।
শ্রমিক এবং স্থানীয় গ্রামবাসী জানিয়েছেন, মামলা দায়েরের পর থেকে এলাকায় পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে। আতঙ্কে এলাকার লোকজন বিশেষ করে পুরুষেরা পালিয়ে গেছেন। পবিত্র রমজানেও লোকজন বাড়িঘরে থাকতে পারছেন না। নারী এবং শিশুরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। রাতে-দিনে বাড়িঘরে চলছে তল্লাশি অভিযান। অভিযানে পুলিশের সাথে যোগ দিচ্ছেন এস আলমের ভাড়া করা শ্রমিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা সাংবাদিকদের জানান, এস আলম গ্রুপ প্রতাপশালী এবং অঘটন ঘটন পটিয়সী। তাদের টাকা ও প্রভাব-প্রতিপত্তির জোরে ২০১৬ ও ১৭ সালের ঘটনার মত এবারও পুলিশ শ্রমিক এবং গ্রামবাসীর উপর জুলুম, নির্যাতন শুরু করেছে। এস আলমের মামলায় গুলিবিদ্ধ আহত অনেক শ্রমিককেও আসামি করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। এমনকি নিহতদের স্বজনেরাও মামলার আসামি। এতে আতঙ্কিত এসব পরিবারের সদস্যরা। নির্বিচারে গুলিতে আহত অন্তত ৩০ জন এখনও হাসপাতালে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। হতদরিদ্র এসব শ্রমিকরা চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহে হিমশিম খাচ্ছেন।
নিয়মিত বেতন পরিশোধ, পবিত্র রমজান মাসে ইফতারি ও নামাজের সময় দেয়াসহ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল বিদুৎকেন্দ্রের শ্রমিকেরা। এর অংশ হিসাবে শনিবার অবরোধ ও বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের ব্যাপক গুলিবর্ষণে পাঁচজন শ্রমিক নিহত এবং ৫০ জনের বেশি আহত হন। এই ঘটনায় শনিবার রাতে বাঁশখালী থানায় শ্রমিক ও এলাকাবাসীসহ সাড়ে তিন হাজার মানুষের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল কবির বলেন, পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধাদানের ঘটনায় বাঁশখালী থানার এসআই মো. কামরুজ্জামান বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় দুই হাজার থেকে আড়াই হাজারজনকে আসামি করা হয়। আসামিরা শ্রমিক এবং গ্রামবাসী। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান ওসি।
একই সময়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা, গাড়ি পোড়ানোসহ ২৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ করে এস আলম গ্রæপের মালিকানাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের চিফ কো-–অর্ডিনেটর ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে আরও একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারে গুলিবিদ্ধ শ্রমিকসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে এক হাজার ৫০ জনকে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এস আলমের এ মামলায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দখলকৃত জমির ন্যায্যমূল্য না পেয়ে যারা আন্দোলন করেছিলেন তাদেরও আসামি করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে হতাহত শ্রমিকদের পরিবারের পক্ষ থেকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি। জানা গেছে, ভয়ে তারা কেউ মামলা করতে থানায় যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না।
এদিকে সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে আহত ৩০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের কয়েকজনের অবস্থা এখনও আশঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত শ্রমিকেরা হলেন আমিনুল ইসলাম (২৫), মো. আমির (২৪), মো. দিদার (২১), মো. বিল্লাল (২৬), মো. আযাদ (১৮), মো. কামরুল (২৬), শিমুল (২৮), শাকিল (২৩), মো. মুরাদ (২৫), মো. মিজান (১৮), মো. রাহাত (২৮), মো. হাবিবুল্লাহ (১৮), মো. হাসান (৪০) ও মো. অভি (২০)। একই হাসপাতাল ভর্তি আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন মো. ইয়াসির (২৪), আহমদ কবির (২৬) ও আসদুজ্জামান।
চিকিৎসকরা জানান, আহত শ্রমিকদের সবাই গুলিবিদ্ধ। আর তিন পুলিশ সদস্য ইট-পাটকেলে আহত। নিহত পাঁচজনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা হলেন- কিশোরগঞ্জের ফারুক আহমেদের ছেলে মাহমুদ হাসান রাহাত (২২), চুয়াডাঙ্গার অলি উল্লাহর ছেলে মো. রনি হোসেন (২৩), নোয়াখালীর আবদুল মতিনের ছেলে মো. রায়হান উদ্দিন (১৯), চাঁদপুরের মো. নজরুলের ছেলে মো. শুভ (২২) এবং বাঁশখালীর গন্ডামারা পূর্ব বড়ঘোনার আবু সিদ্দিকের ছেলে মাহমুদ রেজা (১৯)।
মাসের ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ, পবিত্র রমজান মাসে কর্মঘণ্টা ১০ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টা, শুক্রবার ৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৪ ঘণ্টা করাসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজের শ্রমিকেরা। তাছাড়া নানা বঞ্চনার কারণে শ্রমিক অসন্তোষ দানা বেধে উঠে। এরমধ্যে পবিত্র রমজানে ইফতার ও মাগরিবের নামাজের বিরতি না দেয়ায় শ্রমিকরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এ ধারাবাহিকতায় দাবি আদায়ে মাঠে নামলে শনিবার শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। গুলিতে পাঁচজন নিহত হন। আহত হয়েছেন আরও ৫০ জনের বেশি। আহত শ্রমিকেরা বলছেন কোন উস্কানি ছাড়াই পুলিশ সরাসরি গুলি করেছে। তবে পুলিশের দাবি তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি বর্ষণ করেন।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, অতিরিক্ত ডিআইজির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটি যদি এক্ষেত্রে পুলিশের কোন দায় পায় তখন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘটনার কারণ সূত্রপাত, শ্রমিকদের কী ভূমিকা, পুলিশ এবং মালিক পক্ষের কী ভূমিকা ছিল তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পৃথক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুই কমিটিকেই সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। দুই কমিটির সদস্যরা তদন্ত কাজ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
বাঁশখালীর উপক‚লবর্তী গন্ডামারা ইউনিয়নের পূর্ব বড়ঘোনা এলাকায় ১৩শ’ ২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে এস আলম গ্রুপ। সেখানে প্রায় ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। বিতর্কিত এই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকে ঘিরে এর আগেও কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষে এ পর্যন্ত প্রায় ১২জন মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।