Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোজা একটি রুহানী সফর

পীরজাদা মুহাম্মদ এমদাদুল্লাহ্ শাজলী | প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৩ এএম

লাখ-কোটি প্রশংসা ঐ সত্তার যিনি আমাদেরকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ট মানুষ বানিয়েছেন। একই সঙ্গে তার মনোনীত একমাত্র ধর্ম ইসলামের দীক্ষা দান করেছেন। আরো শুকরিয়া জানাই যিনি দয়া পরবশে আপন করুনায় উম্মতে মুহাম্মদী (সাঃ) হিসেবে কবুল করেছেন আমাদেরকে । হৃদয় উজার করা ভক্তি আর অনুভূতির সঙ্গে দুরুদ ও সালাম জানাই রাসূলে দোঁজাহা (সাঃ) তার আসহাব ও আহলে বাইতগণের প্রতি। মাগফিরাত কামনা করি উম্মতে মোহাম্মদী (সাঃ) তথা মুসলিম মিল্লাতের জন্য।
ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ বা রোকনকে কোরআনে সাওম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বহুবচনে সিয়াম। কোরআনের ভাষায় সাওম বলে বর্ণনা করা হলেও আমাদের দেশে সাওমের প্রতি শব্দ রোজা কথাটি বহুল পরিচিত । রোজা ফার্সী শব্দ। যে ব্যক্তি সাওম পালন করে তাকে বলে সায়েম। সাওম অর্থ বিরত থাকা, দূরে থাকা, ইচ্ছাকৃত ত্যাগ করা , সন্তুষ্টি হাছিলের চেষ্টা করা ইত্যাদি । শরীয়তের পরিভাষায় সাওম অর্থ হলো- যিনি ইসলামী বিধি-বিধান পালনের যোগ্য- এমন ব্যক্তির পক্ষে ভোরের উদয় হতে সূযাস্ত পর্যন্ত রোজার নিয়তে ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার , স্ত্রী সম্ভোগ, এবং সব ধরনের অবান্তর কাজ হতে বিরত থাকা । সাওমের বিধান কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমানিত। আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগন! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হলো , যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর । যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার । (সূরা বাকারা আয়াত-১৮৩) ।
এ আয়াত থেকে জানা গেল রোজার মূল উদ্দেশ্য হলো- তাকওয়া বা আল্লাহর ভীতি অর্জন করা এবং রোজা পূর্ববর্তী উম্মতগণের উপর ও ফরজ ছিল। কুরআনে কারিমে সাওমাকে সবর (ধৈর্য্য ধারন) শব্দ দ্বারাও বর্ননা করা হয়েছে। পবিত্র হাদিসে রমজানকে ধৈর্য্য ও সহানুভ‚তি মাস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ দিক হতে এ মাস আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণ এবং সমাজের বিত্তহীনদের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপনের মাস ।
রোজা একটি রুহানী প্রশিক্ষন । এ প্রশিক্ষন গ্রহনকারীর প্রসংশা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। তিনি বলেন : ‘তারা তাওবাকারী , ইবাদাতকারী , আল্লাহর প্রশংসাকারী , সিয়াম পালনকারী, রুকুকারী , সিজদাকারী, সৎকাজের নির্দেশ -দাতা, অসৎ কাজের নিষেধকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখার সংরক্ষনকারী এসব মুমিনদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও।’ (সূরা তওবা : আয়াত-১১২)।
রোজাদার শুধুমাত্র আল্লাহকে রাজী খুশি করার জন্য রুহানী প্রশিক্ষন গ্রহন করে থাকেন। আর এই জন্যই হাদাীছে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, ‘রোজা কেবল আমরাই জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেব।’ সাওমের প্রশিক্ষন গ্রহন করার আরেকটি উদ্দেশ্য হলো গুনা থেকে বেঁচা থাকা। রোজা সায়েমকে গুণাহ থেকে বেঁচে থাকতে প্রচন্ড রকম সাহায্য করেন। রাসূল (সাঃ) বলেন: ‘রোজা ঢাল স্বরূপ’। রোজাদার একজন রুহানী সফরকারী ব্যক্তি। এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজীদে আল্লাহ বলেন : ...যারা হবে আত্মসমর্পনকারী, বিশ্বাসী,অনুগত, তওবাকারী, ইবাদতকারী, সিয়াম পালনকারী....(সূরা তাহারীম আয়াত-৫)।
এ রুহানী সফরের মাধ্যমে রোজাদার জমিনে থেকেও আল্লাহর রহমতের সুঘ্রান তথা জান্নাতের রহমাতি বাতাস উপভোগ করে থাকেন। রোজার সঙ্গে দোআ কবুল হওয়ার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এ জন্যই কুরআন মাজীদে সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে রমজানের উল্লেখ শেষে বিশেষভাবে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও দোআ কবুলের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন : ‘আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্বন্ধে তোমাকে প্রশ্ন করে, আমিতো নিকটেই । আহবানকারী যখন আমাকে আহবান করে আমি তার আহবানে সাড়া দেই। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক , আমাতে বিশ্বাস স্থাপন করুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে। (সূরা বাকারা-১৮৫) ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রুহানী সফর

৩০ এপ্রিল, ২০২১
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ