মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের নৈরাজ্য সকল সীমা ছাড়িয়েছে। প্রকান্তরে তারা যাত্রীদের পকেট লুট করছে। করোনার পরিস্থিতি যত ভয়ঙ্কর হচ্ছে, ততই যেন মাত্রাচাড়া দিয়ে উঠছে অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের জুলুম-নির্যাতন। কখনও কোনও অ্যাম্বুল্যান্স চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে করোনা রোগীকে ফেলে পালানোর, আবার কখনও টাকায় পোষাচ্ছে না বলে রোগীর অক্সিজেন মাস্ক খুলে নামিয়ে দেওয়ার। বহু ক্ষেত্রেই জরুরি সময়ে ডেকেও মিলছে না অ্যাম্বুল্যান্স।
কলকাতার আর জি কর থেকে মেডিক্যাল কলেজের দূরত্ব ৫.৮ কিলোমিটার। এইটুকু পথ যেতে কখনও ভাড়া হাঁকা হচ্ছে তিন হাজার, কখনও চার হাজার টাকা। এছাড়া পার্ক সার্কাস মোড় থেকে এসএসকেএম পর্যন্ত মাত্র ৩.৫ কিলোমিটার পথ অক্সিজেন ছাড়া যেতে ভাড়া আড়াই হাজার টাকা। আর লোক বুঝে অক্সিজেন-সহ সেটাই হয়ে দাঁড়াচ্ছে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি! এন আর এস হাসপাতাল থেকে রোগীকে নিয়ে রাস্তার উল্টো দিকের প্যাথোলজি সেন্টার পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য ভাড়া ২০০০ টাকা। শুধু পৌঁছে দিতে হলে ভাড়া দেড় হাজার! আর রোগী কোভিড আক্রান্ত হলে তো ভাড়ার কোনও ঠিক নেই।
রাজ্যের গিরিশ পার্কের বাসিন্দা এক ভুক্তভোগীর কথায়, “আমার বাবার বয়স ৭২। গত বুধবার তাঁর করোনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। জ্বরে ভুগছিলেন তারও তিন-চার দিন আগে থেকে। রবিবার রাতে অবস্থা খারাপ হওয়ায় অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য ফোন করা শুরু করি। সরকারি হেল্পলাইন বন্ধ পাচ্ছি। পাড়ার ক্লাবও অ্যাম্বুল্যান্স দিতে পারেনি। এক পরিচিতের দেওয়া নম্বরে ফোন করলে শেষে এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক বলেন, ‘মেডিক্যাল কলেজে নামিয়ে দিয়ে চলে আসব, আট হাজার টাকা লাগবে! দিনের বেলা হলে চার হাজারে হয়ে যেত’!” শেষে এক প্রতিবেশীর গাড়িতে কোনও মতে বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা। পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা স্বপন ঘোষ নামে এক ব্যক্তি আবার জানালেন, তাঁর বছর তেরোর ছেলে সংক্রমিত হয়েছিল। দিন সাতেক আগে হঠাৎ তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অনেক খুঁজে একটি বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে প্রথমে এসএসকেএমে যান তাঁরা। সেখান থেকে মেডিক্যালে পাঠানো হয়। ওই পর্যন্ত পৌঁছে আর দাঁড়াতে পারবেন না বলে জানান অ্যাম্বুল্যান্সের চালক। তখনও শয্যা পাওয়া যায়নি। স্বপনবাবু বলেন, “চালক ওয়েটিং চার্জ লাগবে বলে চেঁচাতে শুরু করেন। ততক্ষণে দুই হাসপাতাল ঘোরার জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা নিয়েছে। আর টাকা নেই বলে আমি জরুরি বিভাগের ভিতরে খোঁজ করে এসে দেখি, অক্সিজেন মাস্ক খুলে ছেলেকে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নামিয়ে দিয়েছে!’’
এমন অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। গত বছর করোনার বাড়বাড়ন্তের সময়েও টাকা মেটাতে না পারায় রোগীর কানের দুল খুলে নেওয়ার মতো ঘটনা যেমন সামনে এসেছিল, তেমনই সংক্রমিত রোগিণীকে অ্যাম্বুল্যান্সেই ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল এক চালকের বিরুদ্ধে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সে সময়ে কড়া অবস্থান নিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত। হয়রানি রুখতে রাজ্যগুলিকে অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া বেঁধে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রতি জেলায় কোভিড রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত অ্যাম্বুল্যান্স নিশ্চিত করতে হবে রাজ্য সরকারকে, এ কথাও জানিয়েছিল বিচারপতি অশোক ভূষণের বেঞ্চ। কিন্তু তার পরেও বদলায়নি পরিস্থিতি।
কলকাতার পৌর প্রশাসকেরা জানান, এই মুহূর্তে শহরে পৌরসভার ১৪টি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা পাঁচশোরও বেশি। যে কেউ নতুন গাড়ি কিনে অ্যাম্বুল্যান্সের পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কর ছাড়ও পাওয়া যায়। বহু ক্লাবকে নানা সময়ে দেওয়া অনুদান থেকেও কিছু অ্যাম্বুল্যান্স কেনা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্লাবের অ্যাম্বুল্যান্সই তৃতীয় কোনও পক্ষকে ভাড়ায় দেওয়া থাকে, ফলে সেগুলির উপরে ক্লাবের কার্যত কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এক পুরকর্তার কথায়, “গত বছর কিছু ক্লাবের সঙ্গে বৈঠক করে শহরের মধ্যে হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল যাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বাধিক ৬০০ টাকা ভাড়া বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, অক্সিজেন লাগলে অতিরিক্ত ১০০ টাকা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এখনও চলছে যেমন খুশি ভাড়া হাঁকা।” সূত্র : আনন্দবাজার
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।