মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
করোনায় দিশেহারা ভারত। এর দ্বিতীয় ধাক্কায় সম্প‚র্ণ ভেঙে পড়েছে গোটা ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। দৈনিক সংক্রমণ প্রায় সাড়ে তিন লাখ। হাসপাতালে তিল ধারণের জায়গা নেই। জীবনদায়ী ওষুধ, অক্সিজেনের অভাবে হাহাকার পড়ে গেছে, অকাতরে মরছে মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হ্যাশট্যাগ ইন্ডিয়া নিড অক্সিজেন লিখলেই উঠে আসছে ভারতের করোনা মহামারির চরম ভয়াবহতা।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, ২৬ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত ভারতে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক কোটি ৭৩ লাখ ৬ হাজার ৩শ’ জন এবং মারা গেছেন এক লাখ ৯৫ হাজার ১শ’ ১৬ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবর্তনের পর ভারতের করোনাভাইরাস আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছ এবং প্রচলিত টিকায় এর থেকে সুরক্ষা পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে। ভারতে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটির নাম গবেষকেরা দিয়েছেন ‘বি-ওয়ান-সিক্সসেভেনটিন’। গত অক্টোবরে এটি প্রথম শনাক্ত হয়। স্বজন হারানো আর্তনাদে ভারি দিল্লি, মহারাষ্ট্র থেকে শুরু করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের আকাশ। ভেঙে পড়েছে দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা। শ্মশানগুলোতেও জায়গা নেই দাহ করার। তাই অনেক হাসপাতালের বেইজমেন্টে এবং ভোলা ময়দানে চলছে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। দিল্লিতে কোভিডে মৃতদের চিতা জ্বলার ছবি ইতিমধ্যেই গোটা বিশে^র দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে ফ্রান্স, ইওরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি এবং ইসরাইল, ব্রিটেন, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ।
এরই মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে ৬ শতাধিক বেশি মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ৪ শ’ ৯৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ভেন্টিলেটরসহ বিভিন্ন সুরক্ষাসামগ্রী পাঠিয়েছে ব্রিটেন। এবং অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন তৈরির জন্য ভারতের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউটকে কাঁচামাল সরবাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে ভারতে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠাবে বাইডেন প্রশাসন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্কট মোকাবিলা দপ্তরের কমিশনার জানেজ লেনারসিচ টুইটারে লেখেন, ‘ভারত সাহায্য চেয়েছে। সেই মতো আমরা সব রকম পদক্ষেপ করছি। যত রকম ভাবে সাহায্য করা যায়, করা হবে। অক্সিজেন এবং ওষুধের সরবরাহ বাড়াতে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করা শুরু হয়েছে।’
ইসরাইলের তরফে এখনও কোনও সরকারি বিবৃতি সামনে না এলেও সে দেশের পাবলিক ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের কর্মকর্তা আমিচাই স্টেইন বলেন, ‘ভারতের কোভিড পরিস্থিতি নজরে রাখছি। সরকার সূত্রে খবর, সেখানে মেডিক্যাল সাহায্য পাঠানোর কথা ভাবছে ইজরায়েল।’ ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতও। দুই দেশের মধ্যে সংহতির বার্তা দিয়ে বুর্জ খালিফায় ভেসে উঠেছে ভারতের জাতীয় পতাকা।
জার্মানির এক সাপ্তাহিক পত্রিকা সূত্রে খবর, ভারতে অক্সিজেন পাঠানোর কথা ভাবছে সে দেশের সরকার। চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল বলেছেন, ‘ভারতে মহামারীর ভয়ঙ্কর ঢেউ আছড়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের পাশে আছি আমরা।’ ভারতের ক্রমবর্ধমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সমস্ত রকম সাহায্যের আশ্বাস দিলেন গুগলের নির্বাহী সুন্দর পিচাই। তিনি ১ শ’ ৩৫ কোটি টাকার ফান্ডিংয়ের ঘোষণাও করেছেন। পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন মাইক্রসফ্টের নির্বাহী সত্য নাদেলাও।
মহামারি কোভিড-১৯ এর উর্ধ্বমুখী সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে ভারতকে সহায়তা করতে চায় বলে প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তানও। গত শনিবার এক টুইট বার্তায় এ প্রস্তাব দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেইশি। বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে ইয়াহু নিউজ। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতীয় জনগণের প্রতি সহমর্মিতার প্রকাশ হিসেবে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতকে ত্রাণ ও সহায়তার প্রস্তাব দিচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে ভেন্টিলেটর, বিআই প্যাপ, ডিজিটাল এক্সরে মেশিন এবং পিপিইসহ আরো অন্যান্য মেডিক্যাল সরঞ্জামাদি।’
এক টুইট বার্তায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জাহিদ হাফিজ চৌধুরী বলেন, ‘ত্রাণ ও অন্যান্য সামগ্রীগুলোর সরবরাহ করতে পাকিস্তান ও ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রæত কাজ শুরু করতে পারে। মহামারির এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা সহায়তার সম্ভাব্য আরো উপায়ও আবিস্কার করতে পারে।’ একইদিন আরেকটি টুইট বার্তায় ভারতের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। একইসঙ্গে যারা ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে লড়াই করছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টাইম্স, আজকাল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।