মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যখন প্রতিদিন মৃত্যু ও সংক্রমণের নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে তখন রাজধানী দিল্লির একটি হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে ২০ জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, শুক্রবার রাতে ২০ জন গুরুতরভাবে অসুস্থ রোগী অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে মারা গেছেন। জয়পুর গোল্ডেন নামের ওই হাসপাতালের পরিচালকের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা খবর প্রকাশ করেছে যে, অক্সিজেনের অভাবে মারা যাওয়া অধিকাংশ রোগীই করোনা আক্রান্ত ছিলেন। প্রত্যেকেই অক্সিজেনের চাপ কমে যাওয়ার কারণে মারা যান। সে সময় হাসপাতালের অক্সিজেনের মজুদ শেষ হয়ে যায়।
ঐ হাসপাতালের পরিচালক ডা. দীপ বালুজা’র দেয়া তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে বর্তমানে থাকা ২০০ রোগীর মধ্যে ৮০ জন অক্সিজেন সাপোর্টে এবং ৩৫ জন আইসিইউতে রয়েছেন। হাসপাতালের পরিচালক হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, ‘শুক্রবার রাত ১০টার মধ্যে হাসপাতালের তরল অক্সিজেনের মজুদ শেষ হয়ে যায়। এরপর আমরা কেন্দ্রীয় গ্যাস পাইপ লাইনের সাথে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংযোগ করে দিলেও অক্সিজেনের চাপ কম থাকায় রোগীরা মারা যান’। গতকাল সকালে হাসপাতালটিতে মাত্র ৪৫ মিনিটের মতো অক্সিজেনের যোগান ছিল বলে দ্য হিন্দু পত্রিকা জানিয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার মধ্যেই হাসপাতালটির অক্সিজেনের যোগান পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু মধ্যরাত পর্যন্তও তারা তাদের জন্য নির্ধারিত অক্সিজেন পায়নি। এমনকি ২০ জন রোগীর মৃত্যুর পরও হাসপাতালটি প্রয়োজনের মাত্র ৪০ ভাগ অক্সিজেন পেয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. বালুজা বলেন, ‘আমরা আবারও সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে। ২০০ জনের জীবন এখন ঝুঁকিতে। গত শুক্রবার রাতে আমরা অধিকাংশ রোগীকে বাঁচাতে পারলেও আজ (শনিবার) তা পারবো না। আমাদের অক্সিজেনের জরুরি মজুদও শেষ হয়ে গেছে’। শুক্রবারও দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালে অক্সিজেন মজুত শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে ২৫ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছিল।
এর আগে ২১ এপ্রিল মহারাষ্ট্রের নাসিক শহরের একটি সরকারি কোভিড হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘিœত হয়ে একসঙ্গে অন্তত ২২ জন রোগী মারা যান।
ওই হাসপাতালের সামনে একটি ট্যাঙ্কার থেকে অক্সিজেন লিক হওয়ার জেরেই ঐ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। সেসময় আধা ঘণ্টার মত হাসপাতালের অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ ছিল, যার ফলে ২২ জন রোগী প্রাণ হারান। সেদিন সকালেও সেখানে অন্তত দেড়শো রোগী ভর্তি ছিলেন, যাদের হয় ভেন্টিলেটরে রেখে বা চব্বিশ ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ করে চিকিৎসা চলছিল।
অক্সিজেন সঙ্কটে মৃত্যুর ঘটনা এমন সময়ে ঘটছে, যখন একদিনে সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে টানা তৃতীয় দিনের মতো বিশ্বে রেকর্ড করেছে ভারত। বিগত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে তিন লাখ ৪৬ হাজারেরও বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত তিন দিনে দেশটিতে প্রায় দশ লাখ নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ভারতের কিছু কিছু এলাকার স্বাস্থ্য সেবা খাত তাদের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছে। বিশেষ করে হাসপাতালগুলো চরমভাবে অক্সিজেন সঙ্কটে ভুগছে। অক্সিজেনের তীব্র আকাল এই ভয়াবহ পরিস্থিতিকে আরও হৃদয়বিদারক করে তুলেছে - দেশের বহু হাসপাতালই অক্সিজেনের অভাবে ধুঁকছে।
উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লক্ষেèৗতে রোগীর পরিবারের সদস্যরা সারা রাত ধরে লাইন দিচ্ছেন অক্সিজেন কেনার জন্য - একেকটা সিলিন্ডারের দাম ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছিল, কিন্তু সেটাও এখন পাওয়া যাচ্ছে না বলে বিবিসি-র সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন।
ওই উত্তরপ্রদেশেরই একজন সিনিয়ার সাংবাদিকের কথা জানা যাচ্ছে, যিনি একের পর এক টুইট করে আবেদন করছিলেন অক্সিজেন চেয়ে - লিখছিলেন যে তার অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত কমে আসছে। তিনি শেষ পর্যন্ত অক্সিজেন পাননি - মৃত্যু হয়েছে তার। তবে পূর্ব ভারতে অক্সিজেনের ঘাটতি এখনও হয়নি।
যেহেতু মূলত ইস্পাত শিল্প কারখানাগুলো অবস্থিত - ওই কারখানাগুলোতেই শিল্পের জন্য অক্সিজেন মজুত থাকে - তারা চিকিৎসার জন্যও অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। তাই এই অঞ্চলের অক্সিজেন থেকেই অক্সিজেন যেতে শুরু করেছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে। তবে এ কাজটা আরও আগে শুরু করা উচিত ছিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরবরাহ বাড়াতে অতিরিক্ত ট্রেন মোতায়েন করেছে সরকার। সেই সঙ্গে সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিমান বাহিনীকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। খবর পাওয়া যাচ্ছে, জার্মানি থেকেও অক্সিজেন পাঠানো হচ্ছে।
ভারত সরকারকে তিরস্কার হাইকোর্টের
অক্সিজেন সঙ্কটের কারণে ভারত সরকারকে তিরস্কার করেছেন দিল্লি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। গুরুতর অসুস্থ করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন সঙ্কটের কারণে মহারাজা আগ্রাসেন হাসপাতাল দিল্লির হাইকোর্টে আবেদন করে। শুনানির পর আদালত কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানতে চান, ‘’এপ্রিলের ২১ তারিখে ৪৮০ মেট্রিকটন অক্সিজেন সরবরাহের আশ্বাস দেয়া হয়েছিল, সেটা কখন পাওয়া যাবে’?
হাইকোর্ট বলেন, অক্সিজেন সঙ্কটের জন্য যারা দায়ী, তাদের ছেড়ে দেয়া হবে না। এর আগে আদালত সরকারকে বলেছিল ‘ভিক্ষা করুন, ধার করুন, চুরি করুন - যা খুশি করুন কিন্তু অক্সিজেন সরবরাহ করুন’। সূত্র : বিবিসি বাংলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।