মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইন্টানেরটের অন্যান্য ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ভারতের নজিরবিহীন করোনা সংক্রমণ এবং দেশটির শ্মশান ও সমাধিস্থলগুলিতে স্তূপ করে রাখা মৃতদেহগুলির ছবি প্রমান করছে যে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সুনামির মতো দেশটির চিকিৎসা ব্যবস্থাকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভারতের প্রতিদিনের নতুন সংক্রমণ বিশ্বরেকর্ড তৈরি করে শুক্রবারে এটি আরও বেড়ে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৭ শ’ ৩০-এ পৌঁছেছে।
ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আইকন শহর গুজরাটের বিজেপি নেতা কমলেশ সেইলরের বরাত দিয়ে বøুমবার্গের খবরে বলা হয়েছে, ‘শ্মশান চুল্লিটির কাঠামোগুলি যেমন ধাতব ফ্রেম এবং চিমনি গলছে এবং ভেঙে যাচ্ছে।’ কমলেশ বলেছেন, ‘এটি মেরামত করা এবং এটি চালিয়ে যাওয়া একটি চ্যালেঞ্জ, তবে আমাদের অন্য কোনও উপায় নেই, মৃতদেহগুলি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিষ্পত্তি করতে হবে।’ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার পরিস্থিতির সমালোচনা করে বলেছেন যে, করোনা সংক্রমণ ঘটনা আজ সারা বাংলা থেকে শুরু করে সারা দেশে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি নরেন্দ্র মোদীর কারণে। তিনি বর্তমান পরিস্থিতির জন্য মোদিকে দায়ী করে বলেন, ‘এটা জনগণের তৈরি নয় বিপর্যয় নয়, এটা মোদির তৈরি।’
বিজেপি মমতার এই মন্তব্যের পাল্টা সমালেচনা করলেও দু:খজনক বিষয়টি হচ্ছে, সর্বশেষ নির্বাচনে জয়লাভ করে মোদি ভারতের এযাবত কালের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী প্রধানমন্ত্রীতে পরিণত হয়েছেন। বিজেপি সংসদের দুটি কক্ষই নিয়ন্ত্রণ করছে এবং বেশিরভাগ রাজ্য সরকারগুলিকে পরিচালনা করছে। ফলে তার এই আত্মতৃপ্তি ও দিগি¦জয় করার ভ্রম ভারতের করোনা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে গেছে।
জনাকীর্ণ শহর এবং দুর্বল স্বাস্থ্যখাত নিয়ে করোনা প্রতিহত করার জন্য ভারত কোনও সহজ জায়গা নয়। এর মধ্যে মোদির আত্মপ্রসাদ এবং উন্নাসীকতা ১৪ ই এপ্রিল ভারতের জন্য একটি ঐতিহাসিক বিপর্যয়ের দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। দ্য ইকোনোমিস্টর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এই দিনে নতুন বছর উপলক্ষে অসংখ্য হিন্দু ও শিখ সমবেত হয়েছিল। বহু মুসলিম বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে সমবেত হরয় সাহরি করে রমজানের প্রথম দিনটি উদযাপন করেছে। এই দিনে মন্দিরের শহর হরিদ্বারে হিন্দু উৎসব কুম্ভ মেলার আয়োজন করে, যা ১ থেকে ৩ মিলিয়ন লোকের বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাগম।
সেইসাথে ছিল, এমাসে ৪ টি নির্বাচনী রাজ্যের অন্যতম পশ্চিমবঙ্গেও মোদির নিরলস দলীয় প্রচারনা। মোদি এবং তার সহযোগীরা মাস্ক বা সামাজিক দূরত্বকে কাঁচকলা দেখিয়ে সপ্তাহব্যাপী প্রচারনায় অগণিত জনসাধারণ নিয়ে বিশাল সমাবেশ করেছেন। মোদির ডান হাত ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এপ্রিলের প্রথম ১৮ দিনের ১২ দিনই প্রচার প্রচারণায় ছিলেন। এটি অবশ্যই ভারতের ১ শ’ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে করোনা মহামারী ছড়ানোর অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করেছে। এবং রোগটিকে ছড়িয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছে।
এর আগে, গত বছর মোদি দেশব্যাপী লকডাউন প্রতিষ্ঠা করলেও লাখ লাখ বেকার অভিবাসী কর্মীদের জন্য নিরাপত্তা পরিকল্পনা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তারা প্রথমে শহরগুলিতে জড়ো হয়, আটকে পড়ে এবং সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। এরপর করোনা সংক্রমণ নিয়ে তাদের নিজ নিজ রাজ্যগুলিতে ফিরে যেতে দেওয়া হয়।
এরপর, জানুয়ারিতে মোদি গর্ব করে বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের সমস্যাগুলিই কেবল সমাধান করিনি, বিশ্বকে মহামারী মোকাবেলায় সহায়তাও করেছি।’ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ মোদি সরকার জনসংখ্যার মাত্র ৩ শতাশের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ভ্যাকসিন ডোজ অর্ডার করে। মোদির ভ্যাকসিন নীতি কেন লাইনচ্যুত হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে তার এই আত্মপ্রসাদ যথেষ্ট সহায়ক।
নিউজ এক্টিভের প্রকাশিত এক খবরে মমতা বলেছেন, ‘বিজেপি রাজনৈতিকভাবে এক দেশ, এক দল, এক রাজনীতিবিদ, তবে ভ্যাকসিনের সময় ১ টি ভ্যাকসিন বিক্রি হচ্ছে এবং বিভিন্ন মূল্যে। কেন কেন্দ্র সেটি ১ শ’ ৫০ রুপিতে কেনে এবং রাজ্যগুলি ৪ শ’ রুপিতে? এটি কি রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব নয়?
কংগ্রেসের মুখ্য মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা মোদির সাম্প্রতিক ভাষণ সম্পর্কে কৌতুকপূর্ণভাবে বলেছেন যে, মোদির জ্ঞানের সারমর্মটি হ›ল তার করার কিছুই ছিল না এবং জনগণের নিজেদেরই নিজেদের জীবন রক্ষা করা উচিত। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালগুলিতে শয্যা বাড়াতে, অক্সিজেন সরবরাহ করতে এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহে কী করেছেন তা জানার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু তিনি তার সমস্ত দায়িত্ব এবং ভারতকে বাঁচানো থেকে সরে আসলেন। ’
এশিয়ার ৩য় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারতের এই মানবিক বিপর্যয় শুধু অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকেই নয়, করোন ভাইরাস মহামারী বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী ভারতের বেসরকারী সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউট ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কোভ্যাক্স প্রকল্পের কাছে আরও বেশি ভ্যাকসিন সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতির খেলাপ করেছে। আফ্রিকান দেশগুলি যেগুলি ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের সাহায্যের অপেক্ষায় ছিল, তারা এখন হতাশ।
মূল করোনাভাইরাস নির্মূল বা প্রতিহত না করে এর বিস্তার ঘটতে দেয়ায় ভারতে প্রথমে এর একটি উদ্বেগজনক বৈকল্প ধরণ সনাক্ত হয়েছে, যার নাম ‘ডবল মিউট্যান্ট’, যা আমেরিকা ও ব্রিটেন সহ আরও বেশ কয়েকটি দেশে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এবং আরও বিকল্প ধরণগুলির সন্ধান মিলছে। এগুলি যে কত বড় হুমকি সৃষ্টি করেছে, তা বোঝার জন্য এখন বিজ্ঞানীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভারতের এই পরিস্থিতি বাকিদের জন্য শক্তিশালী সতর্ক বার্তা যে, ২০২১ সালে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা আগের মতো রয়েছে এবং আরও বেশি মারাত্মক। তথ্য সূত্র : দ্য ইকোনোমিস্ট, বøুমবার্গ, নিউজট্র্যাক, বেলিংক্যাট, নিউজট্রি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।