পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাহমুদ রেজা ওরফে মীর খান (১৮) পবিত্র কোরআনের হাফেজ। দাখিল পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু লকডাউনে পরীক্ষা দেয়া হয়নি। দুই বছর আগে বাবা মারা যান। তিন বোনের বিয়ে দিতে গিয়ে ধার দেনায় বিপর্যস্ত গোটা পরিবার। এ অবস্থায় পরিবারের হাল ধরতে মাত্র ১০ দিন আগে মাসিক ১৬ হাজার টাকা মজুরিতে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকের কাজ নেন মীর খান। মাস শেষ হওয়ার আগেই গুলিতে লাশ হয়ে ফিরেন তিনি।
তার এমন মৃত্যুতে অভাবগ্রস্ত পরিবারটি এখন দিশেহারা। বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব বড়ঘোনা গ্রামের আহমদ আলী মিয়াজি বাড়িতে এখনও চলছে শোকের আহাজারি। বিলাপ করে কাঁদছেন সন্তানহারা মা নূরাইন জান্নাত। ভাই-বোনসহ পরিবারের স্বজনদের কান্নায় ভারী এলাকার বাতাস। তাদের সান্ত¡না দিতে যারা এসেছেন তাদেরও চোখে পানি।
হাফেজ মীর খানের মত গুলিতে নিহত আরও চারজনের বাড়িতেও কান্নার রোল। হতদরিদ্র এসব পরিবারের অভাব-অনটন গুছিয়ে সবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তারা ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকের কাজ নেন। কিন্তু তাদের সে আশা পূরণ হলো না। কফিনে বন্দি হয়ে ফিরে যেতে হলো নিজ নিজ বাড়িতে। তাদের মৃত্যুতে দিশেহারা এসব পরিবার। একমাত্র উপার্জনক্ষমকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন।
গত শনিবার সকালে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় এস আলম গ্রæপের মালিকানাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। গুলিতে ঘটনাস্থলে চারজনসহ পাঁচজন শ্রমিক প্রাণ হারান। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন আরও ৩০ জন শ্রমিক।
কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশের গ্রামেই নিহত মীর খানের বাড়ি। রোজা রেখেই ওইদিন কারখানায় যান তিনি। কয়েক ঘণ্টা পর বাড়িতে খবর আসে পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন মীর খান। মীর খানের ভাই আহমদ রেজা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমাদের এখন সংসার চলবে কিভাবে। তিন বোনের বিয়ে দিতে গিয়ে বহু ঋণ হয় আমাদের। দুই বছর আগে বাবা মারা গেলে সীমাহীন বিপদে পড়ি আমরা। এরপরও মা বড় ভাইকে ঋণ করে ওমান পাঠান। কিন্তু সেখানে তিনি ভালো চাকরি না পাওয়ায় আয়–রোজগার তেমনটা হতো না। আমিও শহরের একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করি। আমাদের কষ্ট লাঘবেই মীর খান শ্রমিকের চাকরি নিয়েছিল। তার স্বপ্ন ছিল পরিবারের দুঃখ গোছাবে।
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার আদর্শ গ্রামের আবদুল মতিনের ছেলে মো. রায়হান। মা-বাবার কষ্ট লাঘবে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকের চাকরি নেন। থাকতেন শ্রমিক ব্যারাকে। রোজা অবস্থায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ যায় তার। চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থানার মিনাজপুর এলাকার দরিদ্র পরিবারের সন্তান মো. রনি। অভাবী পিতা ওলীউল্লাহর সংসারের কষ্ট গোছাতে সুদূর বাঁশখালীতে এসে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। কয়েক মাস বেতনও পেয়েছেন। বাড়িতে কিছু টাকাও পাঠিয়েছেন। ঈদের ছুটিতে মা-বাবা, ভাই-বোনদের জন্য নতুন কাপড় নিয়ে ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু ফিরতে হল সাদা কাফনে কফিনবন্দি হয়ে।
একই কষ্টগাথা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার নজরুলের ছেলে মো. শুভ’র। বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নের পূর্ব বড়ঘোনা এলাকার ফারুক আহমদের ছেলে মাহমুদুল হাসান রাহাতেরও। তাদের পরিবারেও চলছে আহাজারি। হাসপাতালে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন গুলিবিদ্ধ ৩০জন। সন্তানের পাশে পিতা-মাতার বিনিদ্র রজনী পার হচ্ছে। সংসারের হাল ধরতেই তারা এসেছিলেন বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এখন তাদের ভবিষ্যত অন্ধকার। চিকিৎসকরা বলছেন, গুলিবিদ্ধ অনেকের অবস্থা এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। হাসপাতাল ছাড়তে তাদের সময় লাগবে। এদের কয়েকজন পুরোপুরি সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে কিনা তা নিয়েও সংশয়ে চিকিৎসকেরা।
মাসের ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ, পবিত্র রমজান মাসে কর্মঘণ্টা ১০ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টা, শুক্রবার ৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৪ ঘণ্টা এবং ইফতার ও মাগরিবের নামাজের বিরতিসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেন বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজের শ্রমিকেরা। বিক্ষোভের একপর্যায়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন কিছু শ্রমিক। তখনই পুলিশ গুলি ছুড়তে থাকলে এ ঘটনা ঘটে। হতভাগ্য এসব শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি করেছে বিভিন্ন সংগঠন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।