Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপচে পড়ছে কবর লাশের স্তূপ শ্মশানে!

করোনাকালে ভারতের চিত্র

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

লক্ষে্লীতে ধরা পড়ল মর্মান্তিক দৃশ্য। ভৈনসাকুন্ড শ্মশানে মৃত্যু মিছিল। স্বজন হারাদের কান্নায় আকাশ-বাতাসে হাহাকার। চতুর্দিকে ধোঁয়া, কেবল ধোঁয়া। একের পর এক মৃতের স্তূপ জমছে। কোথাও আবার লাইনে শুয়েছে লাশ। বেশ কিছুদিন ধরেই লক্ষেèৗতে দৈনিক কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজারের বেশি ছাড়িয়েছে। শুক্রবার সে রাজ্যে অ্যাক্টিভ কেস পেরিয়েছে ৪০ হাজার। স্বাস্থ্যক্ষেত্রও যেন ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে এক বছরের টানা লড়াইয়ের পর ফের ময়দানে নেমে। হাসপাতালে সব আসন ভর্তি। মাটিতেও রয়েছে রোগী। আশা কেবল চিকিৎসার। রেমডেসিভির থেকে অক্সিজেন ঘাটতিই ঘাটতি। শ্মশানের চিত্র থেকে স্পষ্ট ঘাটতি কেবল নেই মৃত্যুতে।

কিন্তু কোভিড যে বায়ুবাহিত ভাইরাস। মৃতদেহের স্তূপ থেকে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। যদিও এ বিষয়ে কিছুটা আশ্বস্ত করেছেন লক্ষেèৗ পুরসভার কমিশনার অজয় দ্বিভেদী। তিনি বলেন, ‘আমরা কোভিড আক্রান্ত মৃত রোগীদের দেহ সুরক্ষিতভাবে সৎকারের চেষ্টা করছি। তা সে ইলেকট্রিক চুল্লি হোক কিংবা কাঠের। যেখানে এসব লাশ পোড়ানো হচ্ছে সেই এলাকা আলাদা করে ব্যারিকেড করা হয়েছে। প্রতিদিন ৫০ এর বেশি লাশ দাহ করতে হচ্ছে। আগে সেই সংখ্যা ছিল ১০ থেকে ১৫’।

এদিকে আইশবাগ কবরস্থানের অবস্থাও মারাত্মক। পয়লা এপ্রিল থেকে ৩২৮টি লাশ কবর দেওয়া হয়েছে। কবরস্থানের দায়িত্বে থাকা আব্দুল মাতিন বলেন, ‘আগে দিনে পাঁচটি কি ছ’টি লাশ আসত। এখন সেই সংখ্যা ২৫ থেকে ৪০ হয়েছে। বৃহস্পতিবার একদিনে ৩৯টি লাশ কবর দেওয়া হয়েছে।”
লক্ষেèৗর মুক্তিধাম শ্মশানঘরে কর্মরত অমর সিংহ (২৯) কখনো ‘এত লাশ’ দেখেননি। শেষকৃত্যের জন্য প্রাঙ্গণের উঁচু প্ল্যাটফর্মে এখন দাঁড়াবার কোনও জায়গা নেই। তিনি বলেন, ‘এটিতে লাশ আর লাশ’।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মুক্তধামে চার যুবক কোভিড শ্মশানের পরবর্তী দফায় পোড়ানোর জন্য সারি সারি ঘাটের একপাশে কাঠের স্তুপ সজ্জিত করছিলেন। তারা যথাযথ পিপিই স্যুট পরেনি। ৩০টিরও বেশি লাশ ইতোমধ্যে দাহ হচ্ছিল এবং আরো লাশ দাহের অপেক্ষায় ছিল। শেষকৃত্যের জন্য আনা লাশগুলোর মধ্যে হ’ল মনোজ। তার আত্মীয় জানিয়েছেন, তার মৃত্যুর আগে চল্লিশের মনোজ কেবল ‘জ্বর ও শরীরের ব্যথার’ অভিযোগ করেছিলেন। ঘাটে শায়িত একজনকে চ‚ড়ান্ত বিদায় জানাতে আসা এক আত্মীয় বলেন, ‘আমরা তাকে বাঁচানোর জন্য প্রতিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, তবে তিনি মারা গেলেন’। তিনি জানতেন না যে, মনোজের কোভিড ছিল কিনা, কারণ পরবর্তীতে পরীক্ষা করার আগেই মারা গিয়েছিলেন।

আত্মীয় বলছিলেন, ‘জো জিন্দা হ্যায়, উনকে টেস্ট কি রেজাল্ট নাহি আ রাহে, ডেড কা কাহাঁ সে টেস্ট কারাতে (জীবিতদের পরীক্ষার ফলাফল সময়মতো আসছে না, মৃতদের পরীক্ষা করার প্রশ্ন কোথায় আসে)?
এদিকে সারা ভারতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু। গত তিন ধরেই দেশটিতে দৈনিক করোনা সংক্রমণ দু’লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিদিনই তা বাড়ছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ভারতে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯২ জন। সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশটিতে দৈনিক মৃত্যুও লাফিয়ে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩৪১ জনের। একদিনে মৃত্যুর হিসাবে যা সর্বোচ্চ। গত বছর ১৬ সেপ্টেম্বর মারা গিয়েছিল ১ হাজার ২৯০ জন। এ সংখ্যা এতদিন সর্বোচ্চ ছিল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শনিবার ছাপিয়ে দিল সেই সংখ্যাকে। করোনাভাইরাস ভারতে এখন পর্যন্ত প্রাণ কেড়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৪৯ জনের।
মহারাষ্ট্র ছাড়াও দেশটির বেশ কয়েক জায়গায় দৈনিক সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে উত্তরপ্রদেশে, দিল্লি, ছত্তীশগঢ়, কর্নাটক, কেরালা, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, হরিয়ানা, পাঞ্জাব। সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, দ্য প্রিন্ট, আনন্দবাজার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ