Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সখিপুরে অবাধে কাটা হচ্ছে পাহাড় টিলা, জলবায়ু ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৪১ পিএম

টাঙ্গাইলের সখিপুরে অবাধে চলছে লাল মাটির পাহাড় ও টিলা কাটার মহোৎসব। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এসব পাহাড় ও টিলা কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। ফলে জলবায়ু ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। এক সময় সখিপুর পাহাড়ি অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী বসবাস করতো। কালক্রমে জনসংখ্যার আধিক্য বনাঞ্চল নিধন,পাহাড় টিলা কেটে বাড়ি ঘর,ফ্যাক্টরী তৈরীর ফলে বন্যপ্রানির মধ্যে কিছু বানর চোখে দেখা যায়-এরাও খাদ্যাভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এ ধরিত্রীতে জনমানব বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহি শাল-গজারি কপিচ বাগান নিধন করে পাহাড়ের লাল মাটি কেটে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর ও নিচু জমি। বিভিন্ন ফসল ও সবজি আবাদের নাম করে কিংবা বাড়িঘর নির্মাণের কথা বলে ২০-৩০ ফুট উঁচু টিলা কেটে সমতলভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে। সখিপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের নাকশালা গ্রামের উজ্জল মিয়া ইতোমধ্যে টিলার বিশাল আকৃতির দুটি গাছ ও মাটি কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাদের মাধ্যমে প্রতি বছর চলে পাহাড়ি টিলা কাটার ধুম। একইভাবে এ বছরও লাল মাটির সুউচ্চ টিলা কেটে মাটি বিক্রি করে অনেকটাই সমতলভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার দাড়িয়াপুর ইউনিয়নের নাকশালা বাজারের ২০০ গজ পূর্বে ৩০ ফুট উঁচু বিশাল আকৃতির একটি টিলা কেটে মাটি বিক্রি করার দৃশ্য। স্থানীয়রা বলছেন, ইতোমধ্যে টিলা কেটে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকার মাটি বিক্রি করা হয়েছে। যাদবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে উজ্জল গংরা মিলে ছোটো-বড়ো লাল মাটির অনেক পাহাড়-টিলাসহ বন বিভাগের জমির মাটি কেটে বিক্রি করছেন বলে এলাকাবাসী জানান। বন বিভাগের সংরক্ষিত জমিতে এক্সকেভেটর (ভেকু) দিয়ে পাহাড় কাটার মহোৎসব চললেও এ ব্যাপারে বন বিভাগ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নেই। সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার কীর্ত্ত খোলা,দাড়িয়াপুর , কৈয়ামধু,দেওবাড়ি,গজারিয়া,পাথার, প্রতিমাবংকী গ্রামে গিয়েও দেখা যায় বন বিভাগের উচু জমি কেটে পুকুর তৈরি ও পাহাড় কাটার দৃশ্য।

উপজেলার প্রতিমাবংকী এলাকায় প্রায় ৪০ শতাংশ বনের জমিতে সৃজিত শাল-গজারি বাগান কেটে প্রায় ৪০শতাংশ জমি ভেকু দিয়ে গর্ত করে পুকুর তৈরি ও মাটি বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায় ওই এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আ. ছালাম অর্থের বিনিময়ে প্রতিমা বংকী মৌজায় বনের উচু জমি থেকে প্রথমে গাছ কেটে পরিস্কার করে পরে মাটি কেটে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে বলেও একাধিক গ্রামবাসী অভিযোগ করেন।

উপজেলার ভেকু ও মাটি ব্যবসায়ী বাদল ও মোস্তফার সহায়তায় বনের পাহাড়ী উঁচু জমির মাটি ভেকু দিয়ে কেটে নিচু করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও সালমা ডেন্টাল ক্লিনিকের মালিক আ. ছালাম।

এবিষয়ে আ. ছালাম বলেন মাটি ব্যবসায়ী বাদল ও মোস্তফা বনবিভাগ সহ সকল ঝামেলার দায়িত্ব নিয়েছেন, এখন যে এতো ঝামেলা হবে তা তো বুঝিনি।

ডিবি গজারিয়া(কৈয়ামধু) বিট কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, বনের গাছ আগে কাটতে পারে। তবে ভেকু দিয়ে বনের জমি থেকে মাটি কাটার খবর পেয়ে ওই মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। তবে দীর্ঘদিন মাটি কাটার পর কাজ বন্ধ করার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি ওই বিট কর্মকর্তা।

যাদবপুরের উজ্জল মিয়াকে বনের জমিসহ অন্যান্য জমিতে অবৈধভাবে মাটি কাটার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় জানার পর দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে যান। পরে উজ্জল মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। যাদবপুর ইউনিয়ন তহশিলদার মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর লোক পাঠিয়ে বাধা দিয়েছিলাম। টিলা হলেও জমিটি তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। বাধা দিলেও তারা মানেন না।’ বাঁশতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, ‘পাহাড় বা টিলা রক্ষা করার দায়িত্ব ইউএনওর আর বন রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। ওই জায়গাটি বন বিভাগের কিনা তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।সখিপুর’ ইউএনও চিত্রা শিকারী বলেন, পাহাড় যদি কোনো ব্যক্তির হয় তাহলেও কাটতে পারবেন না। এ রকম যদি কেউ কেটে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জলবায়ু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ