চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
পদাঘাতে উহুদ পর্বতের কম্পন বন্ধ : একবার রাসূল (সা.) আবু বকর, উমর ও উসমান (রা.) কে সাথে নিয়ে উহুদ পর্বতের উপর আরোহণ করলেন। তখন তাদেরকে নিয়ে পাহাড়টি দুলে উঠল ও কাঁপতে শুরু করল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন পাহাড়কে পা দিয়ে আঘাত করে বললেন, হে উহুদ পর্বত! থামো, স্থির হও। তোমার উপর নবী, সিদ্দিক ও দুজন শহীদ রয়েছে। তখন রাসূল (সা.) এর পদাঘাতে পাহাড়ের কম্পন বন্ধ হয়ে গেল । (বুখারী: ১/৫২১; ৩৬৮৬)
ভবিষৎদ্বাণীর বাস্তবায়ন : রাসূল (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় অসংখ্য ভবিষৎদ্বাণী করেছিলেন যার অধিকাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে এবং কিয়ামতের পূর্বে বাকীগুলোও পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হবে। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, আদী ইবনু হাতিম (রা.) বলেন, একদা আমি রাসূল (সা.) এর মজলিসে উপবিষ্ট ছিলাম। রাসূল (সা.) আমাকে বললেন, হে আদী! তুমি কি হীরা নামক স্থানটি দেখেছ? আমি বললাম, দেখি নাই তবে স্থানটি আমার জানা আছে। তিনি বললেন, তুমি যদি দীর্ঘজীবি হও তবে দেখবে একজন উষ্ট্রারোহী হাওদানশীল মহিলা হীরা হতে রওয়ানা হয়ে রায়তুল্লাহ শরীফে তাওয়াফ করে যাবে। সে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করবে না। অতঃপর বললেন, তুমি যদি দীর্ঘজীবি হও তবে দেখতে পাবে যে, তোমরা কিসরার ধনভান্ডার দখল করেছ। তারপর আবার বললেন, তোমার আয়ু যদি দীর্ঘ হয়, তবে অবশ্যই তুমি দেখতে পাবে যে, লোকজন মুঠভরা যাকাতের স্বর্ণ-রৌপ্য নিয়ে বের হবে এবং এমন ব্যক্তির খোঁজ করে বেড়াবে যে তাদের এ মাল গ্রহণ করবে। কিন্তু গ্রহণকারী একটি লোকও পাবে না।
পরবর্তীতে আদী (রা.) বলেন, আমি আমার জীবদ্দশায়ই রাসূল (সা.) এর এ ভবিষৎদ্বাণীর বাস্তবায়ন দেখেছি যে, এক উষ্ট্রারোহী মহিলা হীরা হতে একাকী রওয়ানা হয়ে কা’বাহ শরীফ তাওয়াফ করেছে। সে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। আর পারস্য সম্রাট কিসরার ধনভান্ডার যারা দখল করেছিল তাদের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম। শোনে রেখো, তোমরা যদি আরো কিছুদিন বেঁচে থাক তাহলে অবশ্যই রাসূল (সা.) এর এ ভবিষৎদ্বাণীর বাস্তবায়নও দেখতে পাবে যে, এক ব্যক্তি এক মুষ্টি ভর্তি সোনা-রূপা নিয়ে বের হবে কিন্তু কেউ তা নিতে চাইবে না। (বুখারী: ৩৫৯৫)
সহীহ বুখারির অপর বর্ণনায় এসেছে, আবু হুরাইরাহ (রা.) বলেন, আমরা খাইবার যুদ্ধে উপস্থিত ছিলাম। রাসূল (সা.) তখন তাঁর সঙ্গীদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি সম্পর্কে বললেন, লোকটি জাহান্নামী। অথচ লোকটি শত্রুবাহিনীর সাথে ভীষণভাবে জিহাদ-যুদ্ধ করেছিল এমনকি যুদ্ধে তার দেহ বিক্ষতও হয়েছিল। এতে কারো কারো মনে রাসূল (সা.) এর ভবিষৎদ্বাণীর উপর সন্দেহ সৃষ্টি হলো। তখন একজন সাহাবী ঐ লোকটির অবস্থা প্রত্যক্ষ করার জন্য লোকটির পিছন অনুসরণ করা শুরু করল। অতঃপর সে দেখল যে, লোকটি এক পর্যায়ে আঘাতের যন্ত্রণায় অসহ্য হয়ে নিজের তীরটি বক্ষদেশে ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করল। তা দেখে কতিপয় সাহাবী দ্রুত ছুটে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তাআলা আপনার ভবিষৎদ্বাণীকে সত্য প্রমাণিত করেছেন। (বুখারী: ২৮৯৮, ৩০৬২, ৪২০৪)এছাড়াও সহীহ বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রাসূল (সা.) বদরের দিন মক্কার মুশরিকদের নিহত ও গ্রেফতার হওয়া, মুতার যুদ্ধে যায়দ বিন হারিস, জাফর বিন আবি ত¦ালিব ও আব্দুল্লাহ বিন রওয়াহা (রা.) এই তিনজন একের পর এক শহীদ হওয়া, উমর, উসমান ও আলী (রা.) এর শাহাদাত এবং কায়সার ও কিসরার ধ্বংস ও বিলুপ্তি, রোম, পারস্য, ইয়ামান, ইরাক, শাম ও কুসতুন্তুনিয়া (ইস্তাম্বুল) বিজিত হওয়ার ব্যাপারে যেসকল ভবিষৎদ্বাণী করেছেন সবই বাস্তবায়িত হয়েছে। এমনকি কিয়ামতের পূর্বে কিয়ামতের আলামত স্বরূপ নানা ফেতনা-ফাসাদ ও ভূমিকম্প হওয়া, দাজ্জালের আর্বিভাব, ইমাম মাহদী ও ঈসা (আ.) এর আগমন,দাব্বাতুল আরদ ও আগুনের উদ্ভব, পশ্চিম আকাশে সূর্য উদয় ইত্যাদি যেসকল ভবিষৎদ্বাণী করেছেন সেগুলোও বাস্তবায়িত হবে ইনশাআল্লাহ।সহীহ মুসলিমের অন্য একটি বর্ণনা থেকে রাসূল (সা.) এর ভবিষৎদ্বাণী বাস্তবায়নের সত্যতা আরো সুস্পষ্ট হয়। রাসূল (সা.) বলেন, অচিরেই ইয়ামান বিজিত হবে। ফলে একদল লোক নিজেদের পরিবারবর্গ ও অনুসারীদের নিয়ে তথায় চলে যাবে। অতঃপর শাম (সিরিয়া.) বিজিত হবে। ফলে একদল লোক নিজেদের পরিবারবর্গ ও অনুসারীদের নিয়ে তথায় চলে যাবে। অতঃপর ইরাক বিজিত হবে। ফলে একদল লোক নিজেদের পরিবারবর্গ ও অনুসারীদের নিয়ে তথায় চলে যাবে। অথচ মদীনাই ছিল তাদের জন্য কল্যাণকর যদি তারা অনুধাবন করতে পারত। (মুসলিম: ৩২৫৬)এ হাদীসে বর্ণিত রাসূল (সা.) এর মু’জিযাপূর্ণ ভবিষৎদ্বাণী তাঁর ওফাতের ১৪ বছরের মধ্যে বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। প্রথমত: রাসূল (সা.) ইয়ামান, সিরিয়া ও ইরাক বিজয়ের ভবিষৎদ্বাণী করেছেন যা খুলাফায়ে রাশেদার হাতে বিজিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত: লোকেরা ঐ সকল স্থানে বসতি স্থাপন করবে এবং তথায় তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে যাবে এটাও বাস্তবায়িত হয়েছে। তৃতীয়ত: আল্লাহর রাসূল (সা.) যে ক্রমানুসারে বর্ণনা করেছেন ঠিক সে ক্রমানুসারেই একটির পর আরেকটির বিজয় সংঘটিত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
পানিশূন্য কূপ পানিতে পূর্ণ হওয়া : হুদাইবিয়াহ একটি কূপ। হুদাইবিয়ার যুদ্ধের সময় এই কূপ থেকে সাহাবায়ে কেরাম এমনভাবে পানি উঠিয়েছে যে, এক ফোঁটা পানিও এতে অবশিষ্ট ছিল না। পরবর্তীতে পানি ফুরিয়ে গেলে আবার পানির প্রয়োজন হয় তখন রাসূল (সা.) কূপের কিনারায় বসে সামান্য পানি দিয়ে অযু করলেন এবং অবশিষ্ট পানি কূপে নিক্ষেপ করলেন। তখন সাথে সাথে পানিশূন্য কূপটি পানিতে পূর্ণ হয়ে গেল। উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম তা থেকে তৃপ্তিসহকারে পানি পান করলেন এবং পানির যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করলেন। তাদের উটগুলোও পানি পান করে পরিতৃপ্ত হলো। বর্ণনাকারী বলেন, হুদাইবিয়ায় তখন আমরা প্রায় চৌদ্দশত লোক ছিলাম। (বুখারী: ৩৫৭৭)
পরিশেষে বলছি, উপরোল্লিখ মু’জিযাসমূহ ছাড়াও রাসূল (সা.) এর আরো অসংখ্য মু’জিযা অকাট্যভাবে প্রমাণিত রয়েছে। প্রবন্ধের কলেবর দীর্ঘায়িত হওয়ার আশংকায় এখানেই ইতি টানছি। প্রকৃতপক্ষে বিশ^নবী (সা.) এর প্রতিটি মু’জিযাই তাঁর নবুওয়াত ও রিসালাতের সুউজ্জল ও জীবন্ত প্রমাণ বহন করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।