চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ জীবনে একে অপরের সাথে মিলেমিশে চলতে হয়। তাই কুরআন ও হাদিসে প্রতিবেশীর হক বা অধিকার আদায়ের ব্যাপারে অত্যাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। প্রতিবেশী কারা? হযরত হাসান (র) থেকে বর্ণিত, তাঁকে প্রতিবেশী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছেন, নিজ ঘর হতে সম্মুখের চল্লিশটি, পশ্চাতের চল্লিশটি, ডান পাশের চল্লিশটি ও বাম পাশের চল্লিশটি যাদের ঘর রয়েছে এরাই প্রতিবেশী। প্রতিবেশীর প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কি? বিপদে আপদে অতি সহজে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর একমাত্র কাছের লোক হলো প্রতিবেশী। তাই তাদের প্রতি আমাদের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।
প্রথমত, প্রতিবেশীকে নিরাপদে বসবাস করার অধিকার দিতে হবে। সুতরাং তাকে হাত কিংবা মুখ অথবা অন্য কোন উপায়ে কষ্ট দেয়া যাবে না। হাদিসে এসেছে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ- নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। জিজ্ঞেস করা হল, ‘কোন্ ব্যক্তি? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, যে লোকের প্রতিবেশী তার অনি থেকে নিরাপদে থাকে না।
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অনি থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদে থাকে না। (বুখারী ৬০১৬, মুসলিম ১৮১ নং) দ্বিতীয়ত, প্রতিবেশী অভুক্ত থাকলে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। সামর্থ্য থাকা সত্তে¡ও যদি প্রতিবেশীর খাদ্যের ব্যবস্থা না করে তাহলে গুনাহগার হতে হবে। হাদিসে এসেছে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ- তিনি বলেন, আমি শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, সে মুমিন নয়, যে ভরপেট খায় অথচ তার পাশে তার প্রতিবেশী অনাহারে থাকে। (বুখারীর আদাব ১১২, ত্বাবারানী ১২৫৭৩, হাকেম, বাইহাকী ২০১৬০, সহীহুল জামে ৫৩৮২ নং)।
তৃতীয়ত, কোনো প্রতিবেশী যদি ভুলবশত কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো অপরাধ করে ফেলে, তাহলে অবশ্যই সে দোষ গোপন করে প্রতিবেশীর মান-সম্মান রক্ষা করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা) বলেছেন, যদি কোনো মুসলমান ব্যক্তি অপর কোনো মুসলমানের দোষ গোপন করে তাহলে আল্লাহ কেয়ামতের দিন সেই ব্যক্তির দোষ গোপন করবেন। চতুর্থত, প্রতিবেশীকে সুখে-দুঃখে সাহায্য-সহযোগিতা করা অপর প্রতিবেশীর নৈতিক দায়িত্ব। বিশেষ করে প্রতিবেশী যখন বিপদে পড়ে যায় তখন তার সাহায্য এগিয়ে যাওয়া উচিত।
পঞ্চমত, প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে। যেমন কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, এবং তোমরা আল্লাহরই ইবাদাত কর এবং তাঁর সাথে কোন বিষয়ে অংশীদার স্থাপন করনা; এবং মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার কর এবং আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, দরিদ্র, সম্পর্কবিহীন প্রতিবেশী, পার্শ্ববতী সহচর ও পথিক এবং তোমাদের দাস-দাসীদের সাথেও সদ্ব্যবহার কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারী আত্মাভিমানীকে ভালবাসেননা। (সুরা নিসা: ৩৬)
ষষ্ঠত, প্রতিবেশীকে সম্মান করতে হবে। কারণ অপরকে সম্মান করলে নিজে সম্মান লাভ করতে পারে। হাদিসে এসেছে হযরত আবূ শুরায়হ খুযায়ী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ- নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, অথবা নীরব থাকে। (মুসলিম ১৮৫ নং, কিছু শব্দ বুখারীর)
এছাড়াও প্রতিবেশীর প্রতি আরো কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সেগুলো হলো, কোনো প্রতিবেশী অসুস্থ হলে দ্রুত তার আরোগ্যের জন্য দোয়া করা এবং সরাসরি তার সেবা-শুশ্রূষা করা আবশ্যক। প্রতিবেশীর সাথে দেখা হলে তার সাথে সালাম ও কুশলাদি বিনিময় করা। প্রতিবেশীর সাথে ঝগড়া বিবাদ না করা ইত্যাদি। সর্বোপরি, প্রতিবেশীর সাথে সদ্ভাব বজায় রাখা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।