Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্মপাশায় ঢাবি ছাত্রলীগ নেতা লাঞ্ছিত : প্রত্যাহার ওসি : গ্রেফতার স্থানীয় আ’লীগ সেক্রেটারী

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০২১, ৮:১৫ পিএম

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সুনামগঞ্জরে ধর্মপাশায় হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খান। এ ঘটনায় ধর্মপাশা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেলোয়ার হোসেনকে গত বুধবার রাত ৯ টায় সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে করা হয়েছে প্রত্যাহার। এরআগে এই ঘটনায় আরও দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্পাদক আবুল হাসেম আলমকে করা হয় বহিষ্কার। এছাড়া তাকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। পুলিশের দুইজন সদস্যের সামনে ঢাবি ছাত্রলীগ নেতাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ও দায়িত্বে অবহেলার দায়ে ওসিকে থানা থেকে করা হয়েছে প্রত্যাহার। প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

লাঞ্ছিতের পর মঙ্গলবার রাতেই ঢাবি শিক্ষার্থী ঘটনাটি পুলিশ সুপারকে অবগত করতেই ওই্ রাতে রাতে ধর্মপাশা থানার এসআই জহিরুল ইসলাম ও এএসআই আনোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহার করে সংযুক্ত করা হয় সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে। এই ঘটনায় বহিষ্কৃত জয়শ্রী ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বহিষ্কার করার এক ঘণ্টার মাথায় বুধবার বিকাল ৫ টায় আবুল হাসেম আলমকে জয়শ্রী বাজার থেকে আটক করে পুলিশ। বুধবার বিকাল ৪ টায় ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় আবুল হাসেম আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এদিকে, আবুল হাসেম আলম, তার পুত্র আল মুজাহিদ সহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ২৫ জনের বিরুদ্ধে বুধবার রাত ৮ টায় ধর্মপাশা থানায় হত্যা চেষ্টার মামলা দাখিল করেছেন ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খান।

থানায় অভিযোগ দাখিল করার পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে আলমকে। থানার অভিযোগে প্রধান আসামী আলমের পুত্র আল মুজাহিদ, দ্বিতীয় আসামী আবুল হাসেম আলম। প্রত্যাহার হওয়ার আগে বুধবার রাত ৮ টায় মামলার দায়ের করার বিষয়টি নিশ্চিত করে ধর্মপাশা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন,‘ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খানের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনায় স্থানীয় আ’লীগ নেতা আবুল হাসেম আলমকে জয়শ্রী বাজার থেকে করা হয়েছে গ্রেপ্তার। তাকে করা হয় জিজ্ঞাসাবাদ।

ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বিলকিছ বলেন, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলমের বিরুদ্ধে।

উপজেলা কমিটির সিদ্ধান্তটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে জেলা কমিটিতে। আলম অতীতে রাজনীতি করেনি আওয়ামী লীগের। ঘটনার জন্য দায়ী জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলম ও তার পুত্র আল মুজাহিদ। আলমের উপস্থিতিতে তার ছেলে আল মুজাহিদের নেতৃত্বে বেশ কিছু লোক অবরুদ্ধ করে রেখেছিল এবং লাঞ্ছিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খানকে। ’

প্রসঙ্গত, গত ৬ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের জয়শ্রী বাজারে লাঞ্ছনার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও স্যার এফ রহমান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আফজাল খান (২৪)। তার বাড়ি উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী তিনি।

জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা আফজাল গত ২৯ মার্চ দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হেফাজতে ইসলামের সহিংসতা সম্বলিত ছবি দিয়ে একটি পোস্ট দেন। কয়েক ঘণ্টা পর পোস্টটি শুধু নিজে দেখতে পাওয়ার মতো ’অনলি মি’ করে রাখেন তিনি। তবে স্থানীয় তার এলাকার কিছু যুবক আফজাল খানের ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে রাখেন। ৬ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেল ৫ টায় ওই ছাত্রলীগ নেতা নিজের গ্রাম মহেশপুর থেকে যান জয়শ্রী বাজারে। এসময় স্থানীয় জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলমের পুত্র আল মুজাহিদ (২৫) বেশ কিছু মানুষকে নিয়ে ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চান আফজাল খানের কাছে।

শিক্ষার্থী আফজাল তখন উপস্থিত সবাইকে বলেছিলেন, ‘হেফাজতে ইসলামকে ব্যঙ্গ করে কোনো পোস্ট দেননি তিনি। তবে হেফাজতের আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কাজের প্রতিবাদে একটি পোস্ট দিয়েছেন।’ এনিয়ে শিক্ষার্থী আফজাল ও মুজাহিদের মধ্যে হঠাৎ করে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে মুজাহিদ ছাত্রলীগ নেতা চড়াও হয় আফজালের উপর। সে সময় আফজালের কয়েকজন বন্ধু ও স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলেও রক্ষা হয়নি তার। একপর্যায়ে মুজাহিদের পক্ষের লোকজন শিক্ষার্থী আফজালকে আটক করে রাখে জয়শ্রী বাজারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে। দলীয় কার্যালয়ের আশপাশে কয়েক শতাধিক মানুষ অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে ধর্মপাশা থানার এসআই জহিরুল ইসলাম ও এএসআই আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে যান। তারা ছাত্রলীগ নেতা আফজালের বিপক্ষে জড়ো হওয়া উত্তেজিত লোকজনকে শান্ত করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সেখানে উপস্থিত হন ধর্মপাশা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খান গণমাধ্যমে কাছে দাবি করেছেন, ধর্মপাশা থানার ওসির নির্দেশে হাতকড়া পরানো হয়েছিল তাকে এবং ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে উপস্থিত লোকজনের কাছে। এরপর থানায় নিয়ে যাওয়া হয় তাকে তার পরিচয় পেয়ে মাঝপথেই পুলিশ খুলে দেয় হাতকড়া।

থানায় বসে রাতে পুলিশ সুপারের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন তিনি। এরপর ঘটনার বিবরণ সাদা কাগজে লিখে তাতে সই রেখে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে।
অভিযোগের বিষয়ে জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলম ও পুত্র আল মুজাহিদ বলেন,‘ লাঞ্ছিত করা হয়নি আফজাল খানকে।’ হেফাজত ইসলামকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় উত্তেজিত হয়েছিল মানুষ। ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করায় পুলিশকে ঘটনাটি জানিয়ে তাকে দলীয় কার্যালয়ে আটকে রেখেছিল স্থানীয় লোকজন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিলেট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ