Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রয়োজনে রাস্তায় সেনা নামানো হোক

| প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৮ এএম

ক্রমেই বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। অবস্থা এখন লাগামহীন, নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে ওঠার উপক্রম হয়েছে। এরই মধ্যে করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার গত বছরের পিক অবস্থার উপরে উঠে গেছে। গতকাল পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় দেশে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং ৫৯ জনের মৃত্যু ঘটেছে। শনাক্তের হার শতকরা প্রায় ২৩ ভাগ, এটা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। বলা হচ্ছে, দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। তবে বিশ্বের আর কোথাও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রথম ঢেউয়ের পিক-টাইমের সংক্রমণ ও মৃত্যুহারকে অতিক্রম করেনি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশেই সম্ভবত এখন পর্যন্ত এই ব্যতিক্রমী রেকর্ড সৃষ্টি হল। মার্চের শুরুতে পূর্বের চেয়ে মারাত্মক আকারে করোনা প্রাদুর্ভাবের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলেও জনসচেতনতা এবং নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা খুবই ঢিলেঢালা। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ড পুরোদমে চলছে, যেখানে স্বাস্থ্য বিধি ও শারিরিক দূরত্ব তেমন একটা মানা হচ্ছে না। সরকারি নির্দেশনা অনুসারে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ স্টিকার এঁেট দিয়েই যেন সব কর্তৃপক্ষ তাদের দায়দায়িত্ব শেষ করেছে। করোনা পরিস্থিতি অবনতির প্রেক্ষাপটে সরকার অনেক দেরীতে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করলেও তার কার্যকারিতা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। প্রায় এক সপ্তাহ আগে সরকার জনসমাবেশ নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সংক্রান্ত নির্দেশনা জারির পরও গতকাল পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুহারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থেকেই বুঝা যাচ্ছে, সরকারের নির্দেশনা না মানার কারণে এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

এর চেয়ে অনেক কম সংক্রমণ ও মৃত্যুহার সামনে রেখে গত বছর এ সময়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শাটডাউন লকডাউনে গৃহবন্ধী হয়ে পড়েছিল। আরেকটি দীর্ঘমেয়াদি শাটডাউনের বোঝা বহনের ক্ষমতা আমাদের জাতীয় অর্থনীতির নেই। তবে মানুষের জীবন রক্ষা করতে সম্ভাব্য সবকিছুই করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সামাজিক সচেতনতা, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার এবং সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি সীমিত রাখার মাধ্যমেই কেবল আমরা একটি অনিবার্য বিপর্যয় থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে করোনা সংক্রমণ রোধে নিজের দায়িত্ব পালন ও সতর্কতা অবলম্বন না করলে এ বিপর্যয় রোধ করা অসম্ভব। ইতিমধ্যে হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের জন্য শয্যাসংকট দেখা দিয়েছে। সেই সাথে এবারের করোনা সংক্রমণে ফুসফুসের প্রদাহে তীব্রতা এবং অপেক্ষাকৃত তরুণ রোগীদের জন্য অক্সিজেন, ভেন্টিলেশন ও আইসিইউ কেয়ারের প্রয়োজনীয়তা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে যথাসম্ভব সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি হাসপাতাল পরিষেবা বৃদ্ধি এবং আইসিইউ সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। গত বছর বিভিন্ন কর্পোরেট কোম্পানীর উদ্যোগে বিশেষ করোনা হাসপাতাল চালুসহ করোনা চিকিৎসায় যে সব উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল মাঝপথে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। প্রয়োজনে সে সব উদ্যোগ এখন নতুনভাবে চালু করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

শুধু সরকারি ও প্রাতিষ্ঠানিক নির্দেশনায় কাজ হচ্ছে না। রাস্তায় জনসমাগম কমেনি। গণপরিবহণে ভাড়া বাড়িয়ে অর্ধেক সিট খালি রেখে চলাচলের নির্দেশনা এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। অসংখ্য মানুষ এখনো যত্রতত্র মাস্ক ছাড়াই রাস্তায় চলাচল করছে। হাত ধোয়া ও সেনিটাইজার ব্যবহারের রেওয়াজও আগের মত কেউ গ্রাহ্য করছে না। সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত করোনা টেস্টিংয়ের মধ্যেও প্রতিদিন ৫ হাজারের বেশি মানুষের সংক্রমণ এবং সরকারি হিসাবেই অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যুর বাস্তব চিত্র দেখেও অনেক মানুষের টনক না নড়া দুর্ভাগ্যজনক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে কঠোর উদ্যোগের কথা বলছেন সচেতন মহল। এ ক্ষেত্রে রাস্তায় জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে পুলিশের পাশাপাশি সেনা সদস্যদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া হলে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের সব বিনোদন কেন্দ্র, শপিংমল, মার্কেট এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে জনসমাগম বন্ধ রাখতে হবে। সরকারি অফিসের পাশাপাশি বেসরকারি অফিসেও কর্মচারি-কর্মকর্তাদের উপস্থিতি যথাসম্ভব সীমিত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। লোকজনকে ঘরে থাকার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। তবে করোনাকালে বছর ধরে বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনলাইন কার্যক্রম বাড়ানোর পাশাপাশি ইন্টারনেট সেবা আরো গতিশীল করার উদ্যোগ নিতে হবে। বিচারিক আদালত সমুহের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ভার্চুয়াল ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। করোনায় আবারো অর্থনৈতিক কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ায় কর্মহীন মানুষের দুর্দশা লাঘবে বিশেষ প্রকল্প চালুর প্রয়োজনীয়তা অগ্রাহ্য করা যাবে না। সেই সাথে করোনা টিকা কার্যক্রম জোরদার করতে টিকা সংগ্রহের উপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম সহজ স্বচ্ছ ও গতিশীল করতে হবে।



 

Show all comments
  • সৈকত ফকির ২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৩৫ এএম says : 0
    এক বাড়ির সামনে দেখি ১৯-২০জন ছেলে যাদের বয়স ১০ থেকে ২২ ক্রিকেট খেলছে।তাদের নিষেধ করতে ধমক দিলো দারোয়ানকে তারা।্শুনলাম তারা বখাটে।পরিত্রান পাওয়ার উপায় কি??
    Total Reply(0) Reply
  • তানিম আশরাফ ২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৩৬ এএম says : 0
    স্বাগতম।আশা করি আমাদের দেশপ্রেমিক ও দক্ষ সেনাবাহিনী করোনা সঙ্কটের এই ক্রান্তিলগ্নে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ বাংলাদেশের প্রতি সহায় হন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • মুক্তিকামী জনতা ২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৩৭ এএম says : 0
    আমাদের দেশ এর নাগরিকরা, কোন দিন ও চিন্তা করতে পারে না মহামারি কি। টিভি, রেডিও, মোবাইল এ এর ভয়াবহতা বর্ণনা করে আমাদের বিচ্ছিন্ন থাকতে বাধ্য করতে পারলে ই মনে হয় আমরা সফল হব।
    Total Reply(0) Reply
  • তপন ২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৩৮ এএম says : 0
    মারাত্মক লেভেলের লেইট করে ফেলছে সরকার।... দেশ নিয়ে তো পরিকল্পনা ছিলোই না। আরও আগে থেকে সেনা নামানো উচিত ছিল।
    Total Reply(0) Reply
  • Abu Wafi ২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৪০ এএম says : 0
    ধন্যবাদ ইনকিলাবকে। থানা পর্যায়ে সেনা ক্যাম্প খোলার জোর দাবি জানাচ্ছি,,,।
    Total Reply(0) Reply
  • Nusrat Jahan ২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৪০ এএম says : 0
    Dear Army you are the only hope now. Get well protection. Stay safe.
    Total Reply(0) Reply
  • Saidur Shohagrana ২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৪১ এএম says : 0
    আসল কাজটি যদি না করেন তবে আরো অনেক প্রানহাণীর সংখ্যা উড়িয়ে দেয়া যায় নাহ ...! সেনা বাহিনী আক্রান্ত ব্যক্তি অথবা সন্দেহভাজন ব্যক্তির সাস্থ পরীক্ষা নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরী । দেশে লাখ লাখ মানুষ জ্বর সর্দি কাঁশিতে আক্রান্ত আছে যার ৯০% এর বেশি মানুষ জানেনা কেনো এসব হচ্চে, ভিবিন্ন প্রকার ধারনস করে বসে আছে। আবার হসপিটাল গুলোতে গেলেও সুচিকিৎসার অভাব, টেস্টকীট নাই ইত্যাদি। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর মেডিকেল টীম দারুন ভাবে মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিতে পারেন। সরকার থেকে পর্যাপ্ত বাজেট আদায় করে জনস্বার্থে সেনাবাহিনী মানুষের সূচিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারেন....
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Irfanur ২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৪২ এএম says : 0
    সেনাবাহিনী দুইটা কাজ বেশী জরুরি করা দরকার এক বাজার মনিটরিং করা, দুই কাজ ছাড়া যে ঘর থেকে বের হয় অাড্ডা দে তাদের শাসন করা।
    Total Reply(0) Reply
  • Moktal Hossain ২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৪২ এএম says : 0
    সেক্ষেত্রে কি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে? প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও তো বিদেশফেরত অনেক আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Shimin Akter Shorna ২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:৪৩ এএম says : 0
    তাদের কি করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি নাই??? দেশের যেকোন কঠিন পরিস্থিতিতে সর্বদা তাঁদেরকেই এগিয়ে আসতে হয় জীবনের মায়া ছেড়ে। Salute to those heroes including my father(retd) & some of my relatives.
    Total Reply(0) Reply
  • Babul ২ এপ্রিল, ২০২১, ৯:৩৯ এএম says : 0
    I am agree with you.
    Total Reply(0) Reply
  • Kader sheikh ২ এপ্রিল, ২০২১, ৯:৪০ এএম says : 0
    May Allah save us from corona virus.
    Total Reply(0) Reply
  • মুন্সি আওয়াল ২ এপ্রিল, ২০২১, ৪:৩৮ পিএম says : 0
    সেনাবাহিনী গত বছরের ২৪ মার্চ থেকে গ্রামে-গঞ্জে, মাঠে-বাজারে মাইকিং করেছেন জনগণকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করার জন্য, সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরিয়ে সাহায্য করেছেন। অস্ত্র উঁচিয়ে যুদ্ধের ময়দানে নয় বরং নিজের জীবন বাজি রেখে অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে মানুষের জীবন বাঁচাতে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই আবারও তাদের মাঠে নামানোর দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • মীর হোসেন ২ এপ্রিল, ২০২১, ৪:৩৯ পিএম says : 0
    এ কথা সত্য সাধারণ মানুষের মাঝে সেনাসদস্যদের উপস্থিতি ও সহায়তার কারণে গতবছর গণ-মনস্তত্ত্বে স্বস্তি এসেছে। কারণ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ জুড়ে কাজ করায় আইন-শৃঙ্খলারও উন্নয়ন ঘটেছে। এবারও আমরা সেনাবাহিনীকে পাশে চায়।
    Total Reply(0) Reply
  • জয়া আহসান ২ এপ্রিল, ২০২১, ৪:৪০ পিএম says : 0
    আসলে আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত এবং যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় পারঙ্গম আমাদের সেনাবাহিনী সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের পাশে থাকলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • রুকাইয়া খাতুন ২ এপ্রিল, ২০২১, ৯:১৮ পিএম says : 0
    ধন্যবাদ, ভালো একটা পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে। সরকারকে বলবো বিষয়টি গুরুত্বের সাথে ভেবে দেখতে।
    Total Reply(0) Reply
  • বাইজিদ বস্তামি ২ এপ্রিল, ২০২১, ৯:১৮ পিএম says : 0
    বাঙালির চলাফেরা যে উদাসীন তাতে সেনা নামালে ভালো হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন