Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পদ্মা নদীর পানি কমে যাওয়ায় জিকে সেচ প্রকল্পের পাম্প বন্ধ, সেচ কাজ ব্যাহত

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০২১, ৮:৩০ পিএম

পদ্মা নদীতে পানি কমে যাওয়ায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষের (জিকে) দুটি পাম্প মেশিনই বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (২৬ মার্চ) সন্ধ্যার পর থেকে পাম্প দুটির পানি সরবরাহ শূন্যে নিয়ে আসা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পাম্প হাউসের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান।

মিজানুর রহমান বলেন, ‘পদ্মায় পানি কমে গেছে। পানি সংকটের ফলে অনেক সমস্যা হচ্ছিল। কারণ পানি ৪.৫ মিটার আরএলের নিচে নামলে পাম্প মেশিনের কয়েল ও বিয়ারিংয়ের তাপমাত্রা বাড়ে। এতে করে মেশিনে শব্দ ও ঝাঁকুনি হয়। এই সব সমস্যার কারণেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাদের নির্দেশনায় পাম্প দুটি বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি।’

সেচ প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পের আওতায় বোরো মৌসুমে এবার প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। চার জেলায় ১৯৪ কিলোমিটার প্রধান খালের মাধ্যমে তা দেওয়ার কথা ছিল।

জানা গেছে, চার জেলার কৃষির গুণগত মান বৃদ্ধি, স্বল্প ব্যয় এবং উৎপাদন বাড়ানো এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল। চার জেলার ১৩ উপজেলার ৪ লাখ ৮৮ হাজার একর জমি প্রকল্পের আওতাধীন ছিল প্রথম দিকে। পরে পদ্মা নদীতে পানি কমায় পাম্পের প্রধান খালের মুখে পলি ও বালুচর জমে। পানি না থাকায় একে একে ভরাট হতে থাকে জিকে প্রজেক্টের খালগুলো। পরে প্রকল্পের আওতাও কমে আসে।

২০২১ সালের ১৫ ও ১৭ জানুয়ারি সেচ সুবিধা দিতে জিকে সেচ প্রকল্পের দুটি পাম্প চালু করা হয়। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা এবং ঝিনাইদহের কৃষকদের এই সুবিধা দেওয়ার কথা ছিল। এগুলো একযোগে সেকেন্ডে এক হাজার ২০০ কিউসেক পানি সরবরাহে সক্ষম। চালুর পর থেকে পাম্প দুটি ১০ মাস নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চালানোর কথা ছিল।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জিকে সেচ প্রকল্পের প্রধান পানির উৎস পদ্মা নদী। পাম্পটি চালু করতে যেমন প্রয়োজন ইনটেক চ্যানেলে পানি তেমনি প্রয়োজন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পানির স্তর ১৮ ফুট উঁচু হওয়া। কিন্তু পদ্মা নদীতে প্রয়োজনীয় পানির স্তর নেই। ফারাক্কার বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং পানি চুক্তি করেও পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় পদ্মা এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে।

পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর এক কিলোমিটার ভাটিতে দেশের অন্যতম বৃহৎ সেচ প্রকল্প জিকে প্রজেক্ট। সেচের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে সরকার ১৯৫৪ সালে ভেড়ামারা জিকে সেচ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়। ১৯৬৯ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়।

মিরপুর উপজেলার বলিদাপাড়া এলাকার কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমার ধানের জমিতে পানির দরকার। হঠাৎ করেই কয়েকদিন ধরে দেখছি ক্যানেলে পানি নেই। জিকের পানির আশায় আমরা ধানের আবাদ করে থাকি এ সময়ে। কিন্তু আশেপাশে পানির ব্যবস্থা না থাকায় টেনশনে আছি।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, যেভাবে জিকে সেচ প্রকল্প চলছে তাতে একদিন পানির অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। প্রকল্পটি সচল এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলকে খাদ্যে স্বনির্ভর করতে সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে অ্যান্টি ফারাক্কা তথা গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ।

পাম্প হাউসের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘পদ্মায় পানির লেভেল গত সপ্তাহে কমে আসায় শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার পর পাম্প দুটির সরবরাহ শূন্য করতে হয়েছে। ওই সপ্তাহে পানি পাওয়া গেছে ৪.১ থেকে ৪.১৮ মিটার রিডিউসড লেভেল (আরএল) পর্যন্ত।’ তিনি জানান, আগামী ৩১ মার্চ বাংলাদেশের প্রাপ্যতা শুরু হবে। সে সময় পানি সরবরাহ বাড়লে পাম্প দুটির পানি সরবরাহ আবার সচল হবে। ফারাক্কা চুক্তির অনুযায়ী এ মৌসুমে গঙ্গার পানির প্রাপ্যতা অনুযায়ী ১০ দিন বাংলাদেশ এবং ১০ দিন ভারতের পাওয়ার কথা।



 

Show all comments
  • Jack Ali ৩০ মার্চ, ২০২১, ৯:০৭ পিএম says : 0
    If our ruled by the Law of Allah than Allah install fear India then India never dare to harm us. We need to rule our country by Quran then Allah will solve majority of Problem
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুষ্টিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ