বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
কড়া পাহারার মধ্যে দিয়ে সিলেট নগরীতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে নির্ধারিত বিক্ষোভ মিছিল করেছে হেফাজতে ইসলাম। গতকাল (শনিবার) বাদ আছর কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বিক্ষোভ মিছিলটি পরবর্তী সমাবেশে সম্পন্ন করেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সমাবেশে হেফাজত নেতৃবৃন্দ হরতাল পালনের আহবানের পাশাপাশি, সরকারকে হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেন, হরতালে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে এর দাতভাঙা জবাব দেবো আমরাও। এদিকে হেফাজত ইসলামের মিছিল ও সমাবেশে কোন বাধা দেয়নি এসএমপি পুলিশ, তবে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে অবস্থানে ছিল সর্তক। এদিকে, মিছিল বের করতেই পথচারী এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। সবাই শাটার প্রায় বন্ধ করে দোকানের ভেতরে বসে শুরু করেন নীরব পর্যবেক্ষণ।
এসময় বন্দরবাজার-জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কের পথচারীরা ছুটে যান পাশের অলিগলির রাস্তায়। এসময় সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সকল ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পূর্ব থেকেই কঠোর অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শনিবার সকাল থেকে নগরীতে দেখা যায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি টহল। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। শুক্রবার সিলেট জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক স্মারকের ভিত্তিতে দায়িত্ব দেওয়া হয় ৬ ম্যাজিস্ট্রেটকে। অপরদিকে, নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে নগরী নয়াসড়ক এলাকায় এক বিক্ষোভ মিছিল বের করলে জামায়াত-শিবিরের ১৪ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। এসময় জব্দ করা হয় ১৩টি মোটরসাইকেল। দুপুরে এ মিছিল বের করলে পুলিশ বাঁধা দেয়। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে লাঠিচার্জ করে পুলিশও। পুলিশের লাঠিচার্জের ফলে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় জামায়াত-শিবিরের ১৪ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। এসএমপি পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, ‘কোথাও যাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয় সে ক্ষেত্রে সকল রকম প্রস্তুতি আছে আমাদের। সাদা পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি, সাদা পোশাকে পুলিশ, আর্মস ব্যাটেলিয়ন সহ প্রস্তুত আছে বিজিবিও ।
থমথমে এ অবস্থার মধ্যে হেফাজতের নির্ধারিত কর্মসূচী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাড়তি সর্তকতায় নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাদ আছর বন্দরবাজারস্থ কালেক্টরেট মসজিদের সামনে হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য আসরের নামাজের ঘণ্টাখানেক আগ থেকে কালেক্টরেট মসজিদের আশপাশে বিভিন্ন শাখার শতাধিক সদস্য নিয়ে সর্তক অবস্থান গ্রহণ করে পুলিশ। এছাড়াও সকাল থেকে দেখা গেছে নগরীর কোর্ট পয়েন্ট, বন্দরবাজার, চৌহাট্টা, রিকাবিবাজার, সুবিদবাজার, আম্বরখানা, শাহীঈদগাহ, টিলাগড়, শিবগঞ্জ, মিরাবাজার ও উপশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মহড়া। গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এলাকায় বসানো হয় নিরাপত্তাচৌকি।
এ অবস্থার মধ্যে বাদ আছর বিক্ষোভ মিছিল বের করে হেফাজতে ইসলাম। আছরের নামাজের পরে সোয়া ৫টায় বন্দরবাজারস্থ কালেক্টরেট মসজিদের সামনে থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে চৌহাট্টায় পর্যন্ত যেয়ে পুনরায় ঘুরে আসেন বন্দরবাজারে। তবে মিছিল চলাকালে পেছনে সতর্ক অবস্থানে ছিলো পুলিশ। তারপর মিছিল সহকারে সেখানে অবস্থান নিয়ে বিকেল কোর্ট পয়েন্টে বিশাল সমাবেশ করে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে বন্দরবাজারে পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি এ সমাবেশে অংশ নেন। সমাবেশ থেকে হেফাজত নেতারা আচ (রবিবার) স্বতঃ:স্ফূর্ত ভাবে হরতাল পালনের আহ্বান জানান সবাইকে। চট্টগ্রামের ‘চার শহিদের’ রক্ত বৃথা যেতে পারে না উল্লেখ করে সমাবেশে হেফাজত নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা আজকের মতো আগামীকালও শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি (হরতাল) পালন করবো। তারা হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেন, হরতালে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে এর দাতভাঙা জবাব দেবো আমরাও। এরপর বিকেল ৬ টায় এক মোনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্তি করা হয় সমাবেশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।