পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরপূর্তি এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় টেলিভিশন ও বেতারে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সুবর্ণজয়ন্তীর এই শুভক্ষণে আমাদের শপথ নিতে হবে কেউ যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। দেশের গণতান্ত্রিক এবং উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে না পারে। আসুন, সকল ভেদাভেদ ভুলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমার বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রণিধানযোগ্য। তাঁর এই ভাষণ মাইলফলক হয়ে থাকবে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার তাঁর আহ্বানের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অভিপ্রায়েরই প্রতিফলন রয়েছে। বঙ্গবন্ধু সারাজীবন বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ এবং যুথবদ্ধ করার ক্ষেত্রে নিরলস প্রয়াস-প্রচেষ্টা করে গেছেন। স্বাধীনতার জন্য সাড়ে সাত কোটি মানুষকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাদের একই ছাতার নিচে সমবেত করেছিলেন। এ কারণেই স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হয়েছিল। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও দক্ষ নেতৃত্বের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সেই দর্শন ও লক্ষ্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
যেকোনো দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। বিভেদ-বিভাজনের মধ্যে কোনো জাতির পক্ষে অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে প্রথমেই জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশকে এগিয়ে নেয়ার দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। রাজনৈতিক পক্ষ-বিপক্ষ শক্তির মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি করে গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথ প্রশস্থ করেছিলেন। তিনি এই মত পোষণ করেছেন, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি সমগ্র জাতি। পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে জীবন-মরণ সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। তিনি ভাল করেই জানতেন, বিভক্তির মধ্য দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে নেয়া কঠিন। বঙ্গবন্ধু যে আজীবন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী ছিলেন, তা তার আত্মজীবনী থেকেই জানা যায়। ১৯৫০-এর দশকে এক লেখায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি অন্তত এটুকু জানি যে, আমার থেকে ভিন্নমত পোষণ করেন বলে কাউকে খুন করা উচিত নয়।’ গণতান্ত্রিকভাবে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তাঁর এই রাজনৈতিক দর্শন চিরন্তন। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের মধ্য দিয়ে যেমন প্রবাহিত হয়েছে, তেমনি তা সার্বজনীন রূপ লাভ করেছে। এ কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয়, পুরো জাতির ঐক্যবদ্ধ চেতনা। এ চেতনাপ্রবাহের মধ্য দিয়েই দেশের স্বাধীনতার ভিত্তি রচিত হয়েছে এবং স্বল্প সময়ে দেশ স্বাধীনতার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতার মধ্য দিয়ে এগুলেও স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, সমতা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সকলের কম-বেশি ভূমিকা রয়েছে। তবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে পলিসি ভিন্ন ভিন্ন হলেও লক্ষ্য যে সমৃদ্ধি অর্জন, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। প্রায় একযুগ ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর ঐক্যবদ্ধ জাতির দর্শন নিয়েই দেশ পরিচালনা করছেন। এই একযুগে দেশের সার্বিক অর্থনীতি অনেক দূর এগিয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার রূপকল্প প্রণীত হয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিতি পেয়েছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে। বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলমান শাসনকালে দেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে এক অসামন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। বঙ্গবন্ধুর যে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন তা বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব উপমহাদেশে বাংলাদেশকে অত্যন্ত সম্মানজনক আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। এসব সম্ভব হয়েছে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং ঐক্যবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রয়াসের কারণে।
বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই মধ্যপন্থা অবলম্বনকে সমর্থন করে। কারো সাথে বৈরিতা নয়, সবার সাথে বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। তারা যেমন উগ্র ডানপন্থা পছন্দ করে না, তেমনি উগ্র বামপন্থাও পছন্দ করে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সবক্ষেত্রেই ভারসাম্যমূলক অবস্থান তাদের কাছে অগ্রগণ্য। গণতন্ত্র তাদের কাছে পরম কাক্সিক্ষত। যখনই এর ব্যত্যয় ঘটেছে, তা তারা গ্রহণ করেনি। ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুলে’র রাজনীতি বা বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া প্রত্যাখ্যান করেছে। মধ্যপন্থা ও ভারসাম্যমূলক পরিবেশ তাদের পছন্দ। জনআকাক্সক্ষার এই মৌলিক বৈশিষ্ট্য নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে এগিয়ে নেয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন, সময়ের নিরিখে তা যেমন রাষ্ট্রনায়কোচিত, তেমনি প্রশংসনীয়। বিভাজন জাতিকে শুধু পিছিয়ে দেয় না, স্থবিরতা ও বিশৃঙ্খলার পথও প্রশস্ত করে দেয়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের ক্রমবর্ধমান ও ধারাবাহিক অগ্রগতি অধিক বেগবান করতে ঐক্যবদ্ধতা যেমন অপরিহার্য, তেমনি গণতন্ত্র, সমতা, সামাজিক ন্যায়বিচার, সুশাসন, মূল্যবোধ সুদৃঢ় করাও জরুরি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।