Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাবিতে মোদিবিরোধী কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের বেপরোয়া হামলা

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০২১, ১২:০২ এএম

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসার প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো মশাল মিছিলে বেপরোয়া হামলা করেছে ছাত্রলীগ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সংগঠনগুলোর কয়েক’শ নেতাকর্মী আহত হওয়ার দাবি করেছে তারা। একই ঘটনায় ছাত্রলীগের হামলায় মাথা ফেঁটে যায় প্রথম আলোর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় প্রতিনিধি আসিফ হাওলাদারের। গুরুতর আহত হয়ে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। অন্যদিকে বিকেলে মোদি বিরোধী ‘জেয়াফত’ নামের একটি কর্মসূচিতে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের হামলার ভিড়িও ধারণ করায় ঘটনাস্থলে বেপরোয়া মারধর করা হয় বাংলা ট্রিবিউনের বিশ^বিদ্যালয় প্রতিনিধি আবিদ হাসান রাসেলকে। এসময় তার মোবাইল ছিনাতাই করে নিয়ে যাওয়া হয়। ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা যারাই ভিড়িও করবে তাদের মোবাইল কেড়ে নেয়ার নির্দেশ দিতে দেখা যায় সিনিয়র কয়েকজন নেতাকে। এরআগে মোদি বিরোধী কর্মসূচি পালনকারীদের কলিজা ছিঁড়ে ফেলার হুমকি দেয় ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। সনজিতের হুমকির পর থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে।
খুঁজে খুঁজে মারধর: পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সন্ধ্যা ৭টায় নীলক্ষেত থেকে কর্মসূচি শুরু করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। মশাল মিছিলে প্রগতিশীল ৯টি সংগঠনের কয়েক’শ নেতাকর্মী অংশ নেয়। এরআগে থেকেই ‘হামলার উদ্দেশ্যে’ বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি চত্ত¡রে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মীসহ শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিটিউটের পাশে অবস্থান নেন। মিছিলটি স্মৃতি চিরন্তনের দিকে আসলে ছাত্রলীগ হামলা করে।
ছাত্রলীগের হামলায় জোটের নেতারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে ছাত্রলীগের কয়েকটি গ্রæপ বেপরোয়া মারধর করে তাদের। জোটের কিছু নেতাকর্মী ফুলার রোডের দিকে পালিয়ে গেলে সেখানে তাদের মারধর করা হয়। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিভিন্ন মিডিয়ার ফটো জার্নালিস্টদের ধারয়া দেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পালাতে থাকা জোট কর্মীদের খুঁজে খুঁজে মারধর করা হয়। ২৫ মার্চের কালোরাতে ছাত্রলীগের এমন বেপরোয়া আচরণে ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রমতে, সংঘর্ষের সময় বাম নেতা ভেবে ছাত্রলীগের এক নেতার মাথায় আঘাত করেন আরেক নেতা। এতে ছাত্রলীগের একজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। ছাত্র ফ্রন্টের ঢাবি শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘ছাত্রলীগ আমাদের ওপর ভিসি চত্বরে মিছিল নিয়ে এসে হামলা করে। এতে আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। ছাত্রলীগের এসব সন্ত্রাসী কর্মকাÐের বিরুদ্ধে আমাদের সবার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’ এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার ফোন করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
সাংবাদিককে মারধর, মোবাইল ছিনতাই: পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ছাত্রলীগের বেপরোয়া হামলার শিকার হয়েছেন বাংলা ট্রিবিউনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আবিদ হাসান রাসেল। বৃহস্পতিবার টিএসসির সঞ্জীব চত্বরে তার ওপরে হামলা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদে ‘জেয়াফত’ নামে একটি কর্মসূচি দেয় ‘বাংলাদেশের জনগণ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। কর্মসূচি শুরুর আগে উপস্থিত আন্দোলনকারীদের মারধর করে তাদের ব্যানার ছিনিয়ে নেয় ছাত্রলীগ। ওই ঘটনায় সেখানে উপস্থিত ‘সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া সত্তে¡ও’ রাসেলের ওপরে হামলা করা হয়। হামলায় আহত আবিদ হাসান রাসেলের ওপর হামলার নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি উৎপল দাস। হামলা থেকে বাঁচতে রাসেল টিএসসির ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও টিএসসির গেট বন্ধ থাকায় সেখানে গিয়ে তাকে পেটান হামলাকারীরা। হামলায় অংশ নেয়া অন্যদের মধ্যে রয়েছে জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা, ছাত্রলীগ নেতা রাকিব হাওলাদার। উপস্থিত চার-পাঁচ জন বাঁশের লাঠি দিয়ে রাসেলের মাথা, পিঠ ও ডানহাতে মারধর করেন। হামলায় আহত সাংবাদিক আবিদ হাসান রাসেলকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে নেওয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক মাহি বলেন, আমরা তাদের সাংবাদিক পরিচয় দিলেও তারা আবিদকে বেধড়ক মারপিট করে। পরে তাকে উদ্ধার করে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) নিয়ে আসা হয়। আহত আবিদ জানান, টিএসসিতে একটি সংগঠন মোদীবিরোধী ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। ছবি তুলতে গেলে হঠাৎ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাকে মারপিট শুরু করে। পরিচয় দিলেও তারা কোনো কর্ণপাত করেনি। আমার আইডি কার্ড ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া বলেন, হামলার শিকার হয়ে এক সাংবাদিক জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছেন।



 

Show all comments
  • Abdullah AL-Mamun ২৬ মার্চ, ২০২১, ২:৪৭ এএম says : 0
    ‘ স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, এটা কোন দলের একক সম্পত্তি নয়। এটা আওয়ামীলীগের দলীয় অনুষ্ঠান নয়। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কোন সেলিব্রেশন নয়। এটা দেশের আঠারো কোটি জনতার আনন্দঘন অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সীমান্তখুনী, বাংলাদেশের সীমান্তে কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানীর লাশের রক্তে রঞ্জিত নরেন্দ মোদিকে চাই না।’
    Total Reply(0) Reply
  • Aloy Ahmed Babul ২৬ মার্চ, ২০২১, ২:৪৮ এএম says : 0
    মোদি আসায় এ গানটা বাজানো উচিত, 'তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো, আজ আমার প্রাণনাথ আসিতে পারে...'
    Total Reply(0) Reply
  • Jack Ali ২৬ মার্চ, ২০২১, ৪:৪১ পিএম says : 0
    Bangladesh is not Belonged to Awami League. We liberated our country. We are muslim and country must be ruled by Qir'an. Those who are ruling by man made law they are enemy of Allah and they are traitor of our beloved country. When this ruler leave our country then we will enjoy our real independent day. May Allah also curse them who invited the butcher of Muslim and destroy them from Allah's world. Ameen
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মোদি

২৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ