পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাইরের দেশগুলোতে সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা রফতানির ওপর সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়েছে ভারত। যে কারণে সিরামের সঙ্গে ক্রয় চুক্তির আওতায় ফেব্রæয়ারি মাসের ৩০ লাখ ডোজ এবং মার্চ মাসের ৫০ লাখ ডোজ টিকা কবে আসবে, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট তথ্য নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে। ফলে টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ এবং চলমান কার্যক্রম নিয়েও দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।
প্রথম ডোজের টিকার পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু হতে যাচ্ছে ৮ এপ্রিল থেকে। টিকার চালান আসতে দেরি হলে মজুদে টান পড়বে। তখন নতুন টিকা প্রদান ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা প্রদান একই সঙ্গে চালানো নিয়ে সংকট তৈরি হতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, টিকা গ্রহিতাদের দ্বিতীয় ডোজের মজুত রেখে প্রথম ডোজের টিকাদান চলছে। টিকা না আসলে এ সংক্রান্ত কমিটি দ্রুতই বসে পরবর্তী পদক্ষেপ নিবে।
এদিকে বিশ্বজুড়ে ন্যায্যাতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে গড়ে ওঠা জোট কোভ্যাক্সের টিকা কবে নাগাদ পাওয়া যাবে সেটা নিয়েও নিশ্চিত তথ্য নেই সরকারের কাছে। দেশে সবশেষ সিরাম থেকে ৩০ লাখ ডোজ টিকার চালান আসে গত ২২ ফেব্রুয়ারি।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মানুষের মাঝে এখন আগ্রহ যে হারে বাড়ছে, তাতে টিকার যোগানে ঘাটতি হলে চাহিদা সামলানো কঠিন হতে পারে। একই সঙ্গে যারা টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন, তাদের জন্য একই পরিমাণ দ্বিতীয় ডোজ রেখে দিতে হবে। দ্বিতীয় ডোজ শুরু হচ্ছে আগামী ৮ এপ্রিল। আর তাই চুক্তি অনুযায়ী সিরাম থেকে দ্রæত সময়ের মধ্যে টিকা না পেলে বাংলাদেশের জন্য টিকা কার্যক্রম নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হবে। যদিও অনেকেই টিকা পাওয়া নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। আবার অনেকেই বলেছেন, টিকা যে পরিমাণ বাংলাদেশকে দেয়ার প্রতিশ্রুতি করে, বাস্তবে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি ভারত। আর এক্ষেত্রে কাজ করছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির টিকা রাজনীতি। অথচ বাড়তি বাহবা পেতে মোদি সরকার ২০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশকে উপহার দেয়। একই সঙ্গে আজ আরো ১২ লাখ ডোজ টিকা উপহার দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে মোদি ভোটের রাজনীতিতে টিকাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। তিনি নিজের ইমেজ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সিরাম ইনস্টিটিউটকে নতুন নতুন দেশকে টিকা দেয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন। আর এরই প্রেক্ষিতে সিরামেও টিকার ক্রাইসিস দেখা দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নরেন্দ্র মোদির এই টিকা রাজনীতির জন্যই বাংলাদেশের সময়মতো টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞদের কথা হলো, উপহারের প্রয়োজন ছিল না। বাংলাদেশকে ক্রয়কৃত প্রাপ্ত টিকা দিলেই হবে।
অবশ্য চাহিদা অনুযায়ী টিকা দিতে না পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিষয়টি তারাও উদ্বিগ্ন। তাদের মতে, টিকার জোগান অনেকটাই ঝুলে গেছে। এতে করে চলমান টিকাদান কার্যক্রম নিয়েই তারা একরকম হিমশিম খাচ্ছেন। কবে এই টিকা আসবে এটা নিশ্চিত করতে পারেনি কেউই।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে যে টিকা আসার কথা তা সময়মতো চলে আসবে বলে আমি আশাবাদী। ভারতে করোনা বাড়ায় এবং চাহিদা বেশি হওয়ায় রফতানিতে হয়তো কিছুটা সময় লাগছে। তবে এ নিয়ে কোনো রাজনীতি হচ্ছে বলে আমি মনে করি না বলে উল্লেখ করেন এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের (এনসিডিসি) পরিচালক ও মিডিয়া সেলের মুখপাত্র প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন জানান, রফতানি স্থগিতাদেশের কারণে টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে আজ উপহার হিসেবে ১২ লাখ ডোজ টিকা পাঠাচ্ছে ভারত।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে বিবিসি বলছে, ভারতে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শিগগির তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা থেকেই ভ্যাকসিন রফতানি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিজেদের জনগণকে অগ্রাধিকার দিতে ভারতের ভ্যাকসিন প্রয়োজন।
বিবিসি জানিয়েছে, দেশটিতে আগামী ১ এপ্রিল থেকে ৪৫ বছরের বেশি বয়সীরা ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এতে করে দেশের অভ্যন্তরে ভ্যাকসিনের চাহিদা বাড়বে। একইসঙ্গে কর্মকর্তারা ভ্যাকসিন রফতানির স্থগিতাদেশকে ‘সাময়িক’ বলেও উল্লেখ করেছেন।
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার টিকার দাম আগাম পরিশোধ করে। চুক্তির শর্ত অনুসারে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশে আসার কথা। গত জানুয়ারিতে ৫০ লাখ ডোজ টিকা এলেও ফেব্রæয়ারি মাসে এসেছে মাত্র ২০ লাখ। চলতি মাসে এখনও কোনো টিকা আসেনি।
গত জানুয়ারি মাসেও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে ২০ লাখ টিকা পাঠানো হয়। যদিও চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের কেনা ফেব্রæয়ারি মাসের ৩০ লাখ এবং মার্চ মাসের ৫০ লাখসহ মোট ৮০ লাখ ডোজ টিকা এখনও দিতে পারেনি সিরাম ইনস্টিটিউট।
সময়মতো টিকা না এলে কর্মসূচি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর (এমএনসিএইচ) এবং পরিচালক (স¤প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) ডা. শামসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, এ মাসের শুরুতেই টিকা আসার কথা। কিন্তু এখনো না আসেনি। তাই কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছি। তবে টিকা প্রয়োগ পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে ৯০ লাখ ডোজ টিকা ছিল। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ৬০ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেব। বাকি ৩০ লাখ দ্বিতীয় ডোজ হিসাবে সংরক্ষণ থাকবে। সেই হিসাবে এরইমধ্যে ৫০ লাখের বেশি মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।
যদিও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী ৭ এপ্রিল দ্বিতীয় ডোজ টিকাদান শুরু করা হবে। যে পরিমাণ টিকা হাতে আছে সেগুলো এক দিন চালিয়ে নেয়া যাবে। আশা করছি এর মধ্যেই টিকার পরবর্তী চালান দেশে আসবে।
এদিকে, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বিবিসিকে জানায়, এপ্রিল পর্যন্ত টিকা সরবরাহের ওপর চাপ তৈরির সম্ভাবনা আছে। তবে মে মাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। ততদিনে দেশটিতে কমপক্ষে আরও একটি নতুন টিকাকে জরুরি অনুমোদন দেয়া হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের টিকা রফতানি স্থগিত হওয়ার প্রভাব কোভ্যাক্স স্কিমের আওতায় থাকা প্রায় ১৯০টি দেশের ওপর পড়তে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিøউএইচও) নেতৃত্বে পরিচালিত কোভ্যাক্স স্কিমের লক্ষ্য হলো সব দেশের মধ্যে ভ্যাকসিনগুলোর সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করা।
এর আগে গত জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। ভারতের টিকার চাহিদা মেটানোর আগে অন্য দেশকে বাণিজ্যিকভাবে টিকা না দেওয়ার বিষয়ে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউটের কারণে ওই সময়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। পরে কিছুদিন বিলম্ব হলেও বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়ায় প্রথম ডোজের ৫০ লাখ ডোজ টিকা দিতে বাধ্য হয়।
স্বাধীনতা দিবসে ১২ লাখ টিকা উপহার দিচ্ছে ভারত
মহান স্বাধীনতা দিবসের উপহার হিসেবে ১২ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেবে ভারত। করোনা মহামারি প্রতিরোধে দ্বিতীয়বারের মতো ভারত সরকার উপহার হিসেবে এই টিকা পাঠাচ্ছে। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে ভারত ২০ লাখ ডোজ টিকা উপহার দিয়েছিল।
স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ভারতীয় হাইকমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইটে (এএল ১২৩০) আজ শুক্রবার দুপুর দেড়টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে এই টিকা।
গত বুধবার বাংলাদেশ সরকারের কাছে ভারতীয় হাইকমিশন থেকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, এই ১২ লাখ ডোজ টিকা ভারত সরকারের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে দেয়া হচ্ছে। করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রæতির অংশ হিসেবে এই ১২ লাখ ডোজ টিকা পাঠানো হচ্ছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ফ্লাইটটি সকাল সাড়ে ৮টায় মুম্বাই বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করবে। টিকাগুলো দ্রুত খালাসের জন্য বিমানবন্দরে রেফ্রিজারেশন ট্রাক, ফর্ক লিফট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর অনুমোদনসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়ে প্রস্তুতি রাখতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আর কাজ সহজ করতে এয়ারওয়ে বিল, প্যাকিং লিস্ট, ব্যাচ রিলিজ সার্টিফিকেট ইত্যাদি কাগজপত্র এই চিঠির সঙ্গেই পাঠানো হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।