Inqilab Logo

রোববার ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুষ্টিয়ায় বাড়ছে যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সব চেয়ে বেশী ও খোকসায় কম

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০২১, ৬:৩৬ পিএম

কুষ্টিয়া জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে যক্ষ্মা রোগ নির্মূলে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা সত্বেও কুষ্টিয়ায় যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, রোগ নির্ণয়ে শতভাগ নির্ভুল পদ্ধতি অবলম্বন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে জেলায় যক্ষ্মা রোগী সনাক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিস সূত্রের গত চার বছরের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জেলায় প্রতি বছরই যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

কুষ্টিয়া জেলার ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিগত চার বছরের যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৭ সালে জেলায় যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ছিল ৪১৬৪ জন। পরের বছর ২০১৮ সালে আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫৩৬ জন। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ৩৭২ জন বেড়েছে। আবার ২০১৯ সালে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৮৬৮ জন। অর্থাৎ ২০১৮ সালের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৩৩২ জন। তবে গত বছর ২০২০ সালে যক্ষ্মা রোগী সনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৯৯৩ জন। স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২০ সালে যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০১৯ সালের চেয়েও বেশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্য কর্মীদের পক্ষে মাঠ পর্যায় থেকে সঠিক তথ্য তুলে আনা সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের প্রদত্ত তথ্য মতে, কুষ্টিয়া জেলার ৬ টি উপজেলার মধ্যে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দৌলতপুর উপজেলায়। এর পর কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর, ভেড়ামারা ও কুমারখালী উপজেলায়। আর সব চেয়ে কম যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা হচ্ছে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায়। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালে দৌলতপুর উপজেলায় ৯০৭ জন রোগী সনাক্ত হয়। ২০১৮ সালে সনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১০৭১ জন। ২০১৯ সালে ১০৯৩ জন এবং ২০২০ সালে ৮০৩ জন। ২০২০ সালে জেলার মধ্যে সর্বনি¤œ যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ছিল খোকসা উপজেলায় ২৭৭ জন। যক্ষ্মা রোগী সনাক্তের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে চারটি ফেজ তৈরি করা হয়েছে। ১ম ফেজ জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত, ২য় ফেজ এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত, তৃতীয় ফেজ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এবং ৪র্থ ফেজ অক্টোবর মাস খেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। এদিকে চলতি বছরের প্রথম ফেজ অর্থাৎ জানুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত জেলায় যক্ষ্মা রোগী সনাক্তের সংখ্যা প্রায় এক হাজার ছুঁয়েছে। এর মধ্যে দৌলতপুর উপজেলায়ই আক্রান্তের সংখ্যা ২০১ জন।

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হয় জেলায় প্রতি বছর যক্ষ্মা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ কি? জবাবে তিনি বলেন, মানুষ জনের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে। মানুষ এখন একটু কিছু হলেই চিকিৎসকের কাছে ছুটে আসছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে যক্ষ্মা রোগী সনাক্তের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার হারও বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে অত্যাধুনিক জিন এক্সপার্ট মেশিনের সাহায্যে যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের শতভাগ নির্ভুল পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। তিনি জানান, কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে কুমারখালী এবং খোকসা উপজেলা ছাড়া বাকি চারটি উপজেলাতেই বর্তমানে জিন এক্সপার্ট মেশিনের সাহায্যে যক্ষ্মা রোগ সনাক্ত করা হচ্ছে। যে দুটি উপজেলায় এই মেশিন নেই সেটিও চলতি বছরই চালু করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। কুষ্টিয়া জেলার সদর, মিরপুর, ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলায় ব্যাপক হারে তামাকের চাষাবাদ হয়। সরেজমিন অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য বিভাগের অনেকেই মন্তব্য করেন ব্যাপক হারে তামাক উৎপাদনের কারণে জেলায় যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন বলেন, তামাকের কারণে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন কোন তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে না থাকলেও অনেকেই তামাকের কারণে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেন বলে তিনি স্বীকার করেন। কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলার মধ্যে দৌলতপুর উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক থেকে দৌলতপুর উপজেলা সব চেয়ে বড়। ভারত সীমান্তবর্তী এ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তামাকের চাষাবাদ হয়। বর্তমানে কুষ্টিয়া শহরের কাটাখানা মোড়স্থ কুষ্টিয়া বক্ষ ব্যাধি ক্লিনিক, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল এবং কুষ্টিয়া সদর উপজেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলাতে বিনামূল্যে যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ঔষধ প্রদান করা হয়ে থাকে। এছাড়াও বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ব্র্যাকসহ কয়েকটি এনজিও যক্ষা নির্মূলে কাজ করছে। যক্ষা সম্পূর্ণ নির্মূলযোগ্য একটি রোগ। আক্রান্ত রোগীকে ৬ মাস এবং ক্ষেত্র বিশেষে এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হয়।

কুষ্টিয়া বক্ষ ব্যাধি ক্লিনিকে কর্মরত মেডিকেল অফিসার ডা: শারমিন আক্তার জানান, চলতি বছর এ পর্যন্ত অত্র ক্লিনিকে ১৪৫ জনের যক্ষা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জনের যক্ষা সনাক্ত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়া বক্ষ ব্যাধি ক্লিনিকে লোকবলের সংকট রয়েছে। ১৭ টি পোষ্টের বিপরীতে বর্তমানে এখানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১০ জন। এর মধ্যে দুই জন চিকিৎসকের বিপরীতে দীর্ঘদিন ধরে একজন দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৫ সালে এখানকার মেডিকেল অফিসার ডা: আসাদুজ্জামান ফিরোজ মাদক সংক্রান্ত মামলার কারণে সাসপেন্ড হয়ে রয়েছেন। এর পর থেকে তার জায়গায় আর অন্য কাউকে পদায়ন করা হয়নি। যক্ষা রোগ নির্ণয়ের জন্য একমাত্র জিন এক্সপার্ট মেশিনটি গত বছরের অধিকাংশ সময়ই বিকল হয়ে পড়ে ছিল। বিগত প্রায় চার মাস মেশিনটি সচল হলেও চারটি মডিউলের মধ্যে একটি নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুষ্টিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ