বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
অকাল মৃত্যুতে পরপারে চলে গেছেন সিলেট (দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ একাংশ)-৩ আসনের এমপি মাহমদু উস সামাদ চৌধুরী কয়েছ। গত ১৫ মার্চ সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে শূণ্য ঘোষনা করা হয়েছে তার এ আসনটি। এখন নির্বাচনমুখী পরিবেশ-পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে এই আসন ঘিরে। নির্বাচন নিয়ে যতটা সরব ক্ষমতাশীন দল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা, ততটা নিরব বিএনপি তথা অন্যান্য রাজনীতিক দল। নির্বাচন নিয়ে নেই কোন আগ্রহ বা উৎসাহ তাদের। তবে এই আসনে নৌকার টিকেট নিশ্চিতে, রয়েছেন অসংখ্য প্রার্থী। এদের মধ্যে সাবেক ছাত্রনেতা, প্রবাসী, জনপ্রতিনিধিরাও রয়েছেন। সেই সাথে প্রয়াত এমপি কয়েছের অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নে মনোনয়ন চায় তার পরিবারও। সেখানে নাম উঠে আসছে তার স্ত্রী ফারজানা সামাদের। একান্ত তার পরিবারের কেউ মনোনয়ন নিশ্চিত করতে না পারলেও এমপি কয়েছ বান্ধব কারো ভাগ্য জুটতে পারে নৌকার টিকেট। এই আসনে হেট্রিক এমপি ছিলেন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েছ। দীর্ঘ সময়ে সাধারন জনগন তথা নিজ দলে গড়ে তুলেছিলেন একান্ত একটি শক্তিশালী বলয়। সেকারনে এ বলয়ের সমর্থন ও সহযোগীতা বিশাল ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নৌকার টিকেট নিশ্চিতে। এমপি কয়েছের সাথে স্থানীয় দলের প্রভাবশালী অনেক নেতাদের ছিল আধিপত্য কেন্দ্রিক দুরত্ব। এর মধ্যে বিগত নির্বাচনে এমপি টিকেট নিয়ে সেই নেতাদের বিরোধীতায় পড়েছিলেন এমপি কয়েছ। কিন্ত শেষ হাসি হেসে ছিলেন নৌকার টিকেট হাতে নিয়ে তিনিই। তারপর হেট্রিক এমপির ইতিহাস গড়লেন তিনি। প্রাপ্তির এ সফলতা অনেকটা বিনয়ী হয়েছিলেন বলেই হয়তো মৃত্যুর পূর্বে নিজ উদ্যোগেই দলের স্থানীয় প্রভাবশীলী নেতাদের সাথে সু-সর্ম্পক তৈরীতে আন্তরিক হয়ে উঠেনএমপি কয়েছ। এর মধ্যে তার সাথে দা-কুমড়াঁ সর্ম্পক ছিল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার দুই বারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু জাহিদের। ‘ওপেন সিক্রেট’ ছিল এ দু’জনের সর্ম্পকের দুরত্ব। কিন্তু তা গুছিয়ে হৃদিক এক সম্পর্কে জড়িয়ে যান তারা। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাবেক কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক পিপি এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের সাথেও দুরত্ব ছিল এমপি কয়েছের। তাও কমিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। এরকম অনেকই বিরোধীতা এড়িয়ে এমপি কয়েছের সাথে জড়িয়ে ছিলেন, সহযোগীতাপূর্ণ সর্ম্পকে। এর ক্ষেত্র নিজেই তৈরী করে দিয়েছিলেন এমপি কয়েছ। ভারসাম্যপূর্ণ একটি সর্ম্পকের ইতিবাচক চিত্র দল তথা আপামর মানুষের চোখে ভাসার আগেই করোনার নীল দংশনে পরপারে পাড়ি জমিয়ে অনবদ্য এক স্মৃতি এঁকে দিয়েছেন রাজনীতিক সহযোদ্ধাদের মনে। সেকারনে তার মৃত্যুতে আফসোসের সুর ছিল সকলের মধ্যে। এমন পরিবেশ পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচনী একটি আবেশ দেখা দিয়েছে এ আসনে। চলছে নানামুখী হিসেব নিকেশ। প্রার্থীতা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নৌকার টিকেট আদায়ে দৌড়ঝাঁপ লবিংয়ে সর্বোচ্চটাই করবেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। প্রার্থীদের মধ্যে মানসিক একটি ধারনা তৈরী হয়েছে, টিকেট নিশ্চিত করলেই এমপি। এমন সূবর্ণ সুযোগ হারাতেই চাইছেন না কেউই। আসন শুন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা। সেকারনে হাতেগোনা সময়ের মধ্যে নিবার্চন প্রস্তুতি সহ মনোনয়ন নিশ্চিতে চলছে দৌড়ঝাঁপ। কেউ কেউ নির্বাচনী মাঠ দখলে তৃণমুল নেতাকর্মীদের সাথে করছেন মতবিনিময়। সেই মতবিনিময়ে নেতাকর্মীদের মনোবল বাড়াতে বলছেন, তার ভাগ্যেই জুটবে নৌকা টিকেট। এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী এমন অনেক প্রার্থী প্রয়াত এমপি বলয়ের স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছে টানতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। কেউ কেউ গোপনে গোপনে সর্ম্পকও রাখছেন অতি উৎসাহী মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে। এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে যোগ্যতার দৌড় রয়েছে সকলের। সেই সাথে সিলেট-লন্ডন-ঢাকা কানেকশনে কেউ কম নয়। তাই ঘাম ঝরিয়েই নিশ্চিত করতে হবে নানা বিবেচনায় নৌকার টিকেট। এছাড়া রয়েছে সিনিয়র-জুনিয়র ফারাক। অপ্রকাশিত একটি স্মায়ুযুদ্ধ চলছে এ ইস্যুতে। বলতে গেলে, আপোষহীন এক ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে এ বিষয়টি। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দীর্ঘ তালিকায় দলের ত্যাগী ও সিনিয়র রাজনীতিক রয়েছেন, সেই সাথে রয়েছেন তুলনামুলক জুনিয়র কয়েকজনের দৌড়ঝাঁপ। তারা রাজনীতিক মাঠে পরীক্ষিত না হলেও দলের শীর্ষ মহলে গড়ে তুলেছেন বিশেষ সখ্যতা। সেই জোরে প্রয়াত এমপি কয়েছকে চাপিয়ে রেখেছিলেন নানাভাবে। এখন নেই সেই দিন, নেই এমপি কয়েছও। এমপি হওয়ার স্বপ্নপূরণে জোর কদমে তৎপরতা চালাচ্ছেন দলের অন্দরমহলে মনোনয়ন নিশ্চিতে, সেই সাথে মাঠেও সরব তারা। সিলেট-৩ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সম্ভাব্যদের তালিকায় রয়েছেন, প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েছের স্ত্রী ফারজানা সামাদ। রাজনীতিক বিবেচনার চেয়ে সহানুভূতিতে তার নাম মুখে মুখে বলে বেড়াচ্ছেন প্রয়াত এমপির রাজনীতিক সহযোদ্ধা তথা অনুসারীরা। তারা মনে করছেন তার মাধ্যমে প্রয়াত এমপির অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন সহ নির্বাচনী এলাকায় নিরাপদ ও শান্তিতে থাকতে পারে এমপির বলয়। এছাড়া রাজনীতিক বিবেচনায় মনোনয়ন নিশ্চিতে এগিয়ে থাকতে পারেন সিনিয়র রাজনীতিকের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য, পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু জাহিদ, জেলা বারের পিপি এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, সাবেক সহকারী এর্টনী জেনারেল ও বাংলাদেশ এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু। এর পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠ রাজনীতিতে তৎপর রয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রান ও সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। প্রার্থীতার এমন তালিকায় নামও রয়েছে যুক্তরাজ্যের ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ী, ম্যানচেস্টার আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি স্যার এনাম উল ইসলামের। স্যার এনাম নিজ এলাকায় প্রায় ১১শত কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নয়নযজ্ঞ যাচ্ছেন চালিয়ে। ফেঞ্চুগঞ্জকে মিনি শহর গড়তে উদ্যোগ নিয়েছেন বহুমূখী উন্নয়ন প্রকল্পের। একক প্রচেষ্টায় এমন বিনিয়োগে তার প্রতি সাধারন মানুষের তৈরী হয়েছে এক ইতিবাচক ধারনা
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসন। এ আসনটি সিলেট নগরীর কাছাকাছি এলাকায় গুরত্ব অনেক বেশি। এছাড়া শিল্পনগরী ফেঞ্চুগঞ্জও রয়েছে এ আসনে। বর্তমান সরকারের আন্তরিকতা প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর দক্ষতার ফলে এই এলাকায় বিগত দিনে বেশ উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী সিলেট ৩ আসনে মোট ২ লাখ ৫৫ হাজার ৩০৯ ভোটারের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২৮ হাজার ৬১৮ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৯১ জন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।