Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

করোনার নতুন স্ট্রেনের বিরুদ্ধে কার্যকর নয়

অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের। মাঝে কিছু দিন আটকে থাকার পরে ইউরোপের দেশগুলিতে ব্যবহারের ছাড়পত্র দেয়া হলেও, ব্রিটেনের এক জার্নালের রিপোর্টে ওই প্রতিষেধক নিয়ে নতুন করে অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে।

দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ বলা হয়েছে করোনাভাইরাসের যে ‘দক্ষিণ আফ্রিকা’ স্ট্রেন গোটা বিশ্বে ছড়াতে শুরু করেছে, তার বিরুদ্ধে আদৌও কার্যকর নয় কোভিশিল্ড। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন কোভিশিল্ডের দুই দফার প্রতিষেধক নেয়ার পরেও গবেষণায় অংশ নেয়া করোনা আক্রান্ত প্রায় ৯২ শতাংশের সংক্রমণের পিছনে দায়ী ওই স্ট্রেন। ভাইরাসের চরিত্র সময়ের সঙ্গে বদলে থাকে। অনেকেরই মতে, ভাইরাসের চরিত্র পাল্টে গেলে আদৌ কার্যকর হবে না প্রতিষেধক। বাস্তবে সেটাই হয়েছে বলে ব্রিটিশ জার্নালটিতে দাবি করেছেন এক দল গবেষক। তাদের গবেষণায় দেখা গিয়েছে করোনাভাইরাসের যে স্ট্রেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়েছে, তার বিরুদ্ধে কাজ করছে না কোভিশিল্ড প্রতিষেধক। জার্নালে বলা হয়েছে, একাধিক কেন্দ্রে ‘ডাবল বøাইন্ড’ পরীক্ষা করা হয়েছিল। এ ধরনের পরীক্ষায় গবেষক ও অংশগ্রহণকারী কোনও পক্ষই জানতে পারেন না কে প্রতিষেধক পাচ্ছেন আর কাকে ওষুধের পরিবর্তে স্যালাইন (প্ল্যাসিবো) দেয়া হচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সিদের ১:১ অনুপাতে প্রতিষেধক ও প্ল্যাসিবো (এখানে সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবণ) দেয়া হয়েছিল ২১ এবং ৩৫ দিনের ব্যবধানে। প্রাথমিক ভাবে দেখা গিয়েছে, যারা প্ল্যাসিবো পেয়েছিলেন তাদের ৭১৭ জনের মধ্যে ২৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। অন্য দিকে কোভিশিল্ড প্রতিষেধক পেয়েছেন এমন ৭৫০ জনের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ জন। দু’টি দলে সব মিলিয়ে যে ৪২ জন আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন ‘সাউথ আফ্রিকা স্ট্রেন’-এর কারণে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই পরীক্ষা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, কোভিশিল্ডের দু’ডোজের প্রতিষেধক করোনাভাইরাসের সাউথ আফ্রিকা স্ট্রেনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা কবচ দিতে ব্যর্থ।

এ বিষয়ে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি (আইআইসিবি)-এর ইমিউনোলজিস্ট দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘কোভিশিল্ডের মতো যারাই কেবল ভাইরাসের একটি স্পাইককে ভিত্তি করে প্রতিষেধক বানিয়েছে, তারাই এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে বাধ্য। কোভ্যাক্সিন যেহেতু সার্বিক ভাবে মৃত ভাইরাসের উপরে প্রতিষেধক বানিয়েছে তাই নীতিগত ভাবে তাদের প্রতিষেধকের নতুন স্ট্রেনের বিরুদ্ধে সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এখন কোভ্যাক্সিনের উচিত এই ধরনের স্ট্রেনগুলির বিরুদ্ধে তাদের প্রতিষেধক কতটা কার্যকরি সেই গবেষণার ফল প্রকাশ করা। এতে অনেক ধোঁয়াশা কেটে যাবে।’ তার আশঙ্কা, আগামী দিনে সাউথ আফ্রিকা স্ট্রেন যদি ব্যাপক হারে অন্য দেশে ছড়াতে থাকে, সে ক্ষেত্রে অনেক দেশ ওই প্রতিষেধক প্রত্যাখ্যান করবে।

যদিও বিদেশের মাটিতে হওয়া ওই গবেষণার ফলাফল নিয়ে এখনই মুখ খুলতে চাইছেন না ভারতের স্বাস্থ্যকর্তারা। তাদের বক্তব্য, বিদেশ থেকে আসা স্ট্রেনের কারণে অসুস্থের সংখ্যা চারশোর ঘরে রয়েছে। সংখ্যাটি যাতে না-বাড়ে তার জন্য প্রতিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা ছাড়া ভারতে যে করোনার স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছে, সেগুলি বিরুদ্ধে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন সফল ভাবে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ভারতজুড়ে সংক্রমণ ৪০ হাজারের গন্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি যে ক্রমশ উদ্বেগজনক হতে চলেছে তা স্বীকার করে নিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। সেই কারণে দ্রুত প্রবীণদের পাশাপাশি অল্পবয়সি, কিন্তু বিভিন্ন রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

এইমসের শীর্ষকর্তা রণদীপ গুলেরিয়ার মতে, বর্তমানে যে প্রবীণ ও ৪৫-৫৯ বছর বয়সিদের টিকাকরণ চলছে, তা আগামী তিন মাসের মধ্যে শেষ করার কথা ভাবা হচ্ছে। যাতে অন্যদের প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়। সূত্রের মতে পরবর্তী ধাপে ৩৫-৪৫ বছর বয়সি, কিন্তু ডায়াবেটিকস, রক্তচাপ বা কিডনির দীর্ঘ সমস্যা রয়েছে. তাদের প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসার কথা ভাবা হয়েছে। তবে ভারতে বিদেশি ভাইরাস স্ট্রেনে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও চারশোর ঘরে থাকায় বিষয়টি নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন নন স্বাস্থ্যকর্তারা। বরং আগামী তিন মাসের মধ্যে বর্ষীয়ান ও নির্দিষ্ট অসুস্থতা-সহ ৪৫-৫৯ বছর বয়সিদের টিকাকরণের কাজ যথাসম্ভব শেষ করে আরও কমবয়সিদের প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসাই লক্ষ্য সরকারের। সূত্র : টিওআই।



 

Show all comments
  • MD Mourshed Maya ২২ মার্চ, ২০২১, ১২:৫৬ এএম says : 0
    বাংলাদেশ যে টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ করেনি, খুবই ভাল সিদ্ধান্ত ছিল। ইউরোপ টিকাদান বন্ধ করে আবার টিকাদান শুরু করা, কিছুটা পিছিয়ে থাকবে। সমগ্র পৃথিবীতে আবার টিকাদান কর্মসূচী শুরু হোক দ্রত গতিতে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ২২ মার্চ, ২০২১, ১২:৫৬ এএম says : 0
    এই খবর আমাদের হতাশাজনক।
    Total Reply(0) Reply
  • Morshed Anam ২২ মার্চ, ২০২১, ১২:৫৭ এএম says : 0
    করনার এবারের ঢেউটা শুধু সাংবাদিক আর মিথ্যা কথা বলা রাজনৈতিক নেতাদের উপর দিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে বিশ্ব সাস্থ সংস্থা(WHO)
    Total Reply(0) Reply
  • Mahabub Alam HiRa ২২ মার্চ, ২০২১, ১২:৫৭ এএম says : 0
    করনা ভাইরাস হলো যুদ্ধবাজ দেশগুলোর প্রভাব বিস্তার পলিটিক্স আর ধান্দাবাজি ভ্যাকসিন ব্যবসা।
    Total Reply(0) Reply
  • Imtiaz Ali ২২ মার্চ, ২০২১, ১২:৫৮ এএম says : 0
    তাই তো বলি আমাদের দেশের ভঙ্গ ভ্যাসকিনে পরিক্ষা বন্ধ কেনো করে দিলো কোনো কারণ ছাড়া
    Total Reply(0) Reply
  • Mujibur Rahman ২২ মার্চ, ২০২১, ১২:৫৮ এএম says : 0
    আমরা উন্নত দেশের কাতারে,আমাদের কোন সমস্যা নাই!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ