পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বহুদিন ধরে চলমান বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পে একই দিনে দুটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে গতকাল রোববার সকালে বিমানবন্দর ঠিক বিপরীত পাশে প্রকল্পের গার্ডার তোলার সময় তা ভেঙে পড়ে। এতে চীনা নাগরিকসহ কমপক্ষে ১০ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর আগে গত রাতে একই প্রকল্পের আব্দুল্লাহপুর পলওয়েল কনভেনশন সেন্টারের সামনে একটি গার্ডারের ঢালাই ধসে পড়ে। অবশ্য এ দুর্ঘটনায় কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। সকালে বিমানবন্দর সড়কে দুর্ঘটনার পর পরই দুর্ঘটনাস্থলের পাশ দিয়ে যান চলাচলের জন্য সরু বিকল্প রাস্তা তৈরী করে কোনোমতে যান চলাচল করে। এ কারণে গতকাল দিনভর বিমানবন্দর এলাকায় ছিল যানজটের ভোগান্তি। ট্রাফিক পুলিশের কন্ট্রোলরুম সূত্র জানায়, দুপুরের পর বনানী থেকে উত্তরার দিকে যান চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক থাকলেও ঢাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে যানজট ছিল দীর্ঘ। যার প্রভাবে কড়িল-বাড্ডা-রামপুরা সড়কেও ছিল দীর্ঘ যানজট। একই কারণে বিকালে অফিস ছুটির পর পুরো রাজধানীজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে নগরবাসী।
রাজধানীর প্রবেশপথে এবং ব্যস্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বিআরটি প্রকল্পের পর পর সংঘটিত দুটি দুর্ঘটনায় নতুন করে শঙ্কা তৈরী হয়েছে। এ সড়কে চলাচলরত যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক, এমনকি অভিজাত উত্তরা এলাকার বাসিন্দারা এ দুর্ঘটনার পর থেকে রাস্তায় বের হতেই ভয় পাচ্ছেন। তাদের আশঙ্কা না জানি কখন কি ঘটে যায়! অনেকেরই অভিযোগ, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করেই বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে ঢিমেতালে। প্রায় ৯ বছর ধরে চলমান এই প্রকল্পের কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের অসতর্কতার কারণে একদিনে দুটি দুর্ঘটনা নতুন করে শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। একই প্রকল্পের কাজের জন্য বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার রাস্তা কয়েক বছর ধরে চলাচলের অযোগ্য হয়ে আছে। যানজট আর ধুলায় এ পথ পাড়ি দিতে ২/৩ ঘণ্টা লাগে। ধুলাদূষণ এখন ১৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। তাতে বহু মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। অনেকের ব্যবসা লাটে উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ঠিক উল্টো দিকে বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণাধীন গার্ডার উপরে তোলার সময় ভেঙ্গে পড়ে। এতে দু’জন বাংলাদেশি এবং দু’জন চীনা নাগরিক গুরুতর আহত হন। এ ছাড়া উপরে থাকা ১০/১২জন বাংলাদেশি শ্রমিক আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। তাৎক্ষণিক ঘটনার সময় তারা ওই প্রকল্পে কাজ করছিলেন। ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। গার্ডারটি কিভাবে ভেঙে পড়েছে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে নি। তবে, সেখান যারা কাজ করছিলেন তাদের অদক্ষতার কারণে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে জানান স্থানীয়রা। বিআরটি প্রকল্পের চিফ কিউসি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রহমান দুর্ঘটনার কারণ নিশ্চিত করে জানাতে পারেন নি। সাইফুল ইসলাম নামে প্রত্যক্ষদর্শী এক প্রবাসী বলেন, সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে বিমানবন্দরের বিপরীত পাশে বিকট শব্দ হয়। তাকিয়ে দেখি ধুলো উড়ছে, মানুষ এদিক-সেদিক দৌঁড়াদৌড়ি করছে। পরে কাছে গিয়ে দেখি গার্ডার ভেঙে পড়েছে। আহতেদের মধ্যে চীনা দু’জন নাগরিকের অবস্থা খারাপ ছিল। সাথে সাথে আমরা তাদের অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেই।
তিনি জানান, গার্ডারের উপর ১০ থেকে ১২ জন লোক ছিল। যারা সবাই কম-বেশি আহত হয়েছে। নিরাপত্তা সরঞ্জাম না থাকায় তারা উপর থেকে নীচে ছিটকে পড়ে বলেও জানান সাইফুল ইসলাম। বিমানবন্দর এলাকায় গার্ডার ভেঙে পড়ার ঘটনার কিছুক্ষণ পরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, (বিমানবন্দর এলাকার) দুর্ঘটনায় দুজন চীনা নাগরিকসহ চারজন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে তিনজনকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আর একজনকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা আমাদের জানিয়েছেন, সবাই মোটামুটি শঙ্কামুক্ত। তবে চীনা নাগরিকদের একজন মাথায় আঘাত পেয়েছেন। তার সিটি স্ক্যান করার পর জানা যাবে, প্রকৃত অবস্থা কী।
অন্যদিকে, শনিবার দিবাগত রাতে বিআরটি প্রকল্পের আব্দুল্লাহপুর পলওয়েল কনভেনশন সেন্টারের সামনে একটি গার্ডারের ঢালাই ধসে পড়ে। ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর ইসলাম বলেন, গতরাতে ঢালাই দেওয়া পিয়ার ক্যাপটির সাপোর্ট রাতেই কোনো এক সময় সড়ে যাওয়ায় এটি ধসে পড়েছে। এতে কেউ আহত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ওই ঘটনার সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি।
এক দিনে বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণকাজে দুটি দুর্ঘটনায় বিমানবন্দর থেকে টঙ্গী-গাজীপুর সড়কে চলাচলরত যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক ও অভিজাত এলাকা উত্তরার বাসিন্দাদের মধ্যে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গুলিস্তান থেকে গাজীপুর রুটে চলাচলরত যাত্রীবাহী বাসের যাত্রী, চালক ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে তাদের শঙ্কার বিষয়টি জানা যায়। বলাকা বাসের চালক জসীম উদ্দিন বলেন, বিআরটি প্রকল্পের কাজের ধীরগতির ভোগান্তি পোহাচ্ছি কয়েক বছর ধরে। টঙ্গী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশায় এখন যাত্রী পাওয়া যায় না। বিকল্প রাস্তা বলতে যা আছে তাতে গাড়ি হেলে দুলে চলে। যানজট লেগে থাকে। সাথে ধুলা তো আছেই। এখন দেখছি নতুন করে ভয় যুক্ত হলো। কখন কোন গার্ডার ভেঙে পড়ে কে জানে? মতিঝিলের এক ব্যবসায়ী বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উত্তরা থেকে গুলশানের দিকে আসার সময় ওই দুর্ঘটনার কথা শুনেছি। আমার গাড়ি তখন জসীম উদ্দিন রোডের মাথায় ছিল। যানজটে অনেকক্ষণ আটকে ছিলাম। পরে আসার পথে দুর্ঘটনাস্থল দেখলাম। তিনি বলেন, একটা বড় প্রকল্পের কাজে এরকম দুর্ঘটনা ঘটবে কেন? আর গার্ডার উপরে তোলার সময় তো দিনে না। রাতে যখন যান চলাচল কমে যাবে তখন এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করা উচিত। আল্লাহ না করুক বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে রাস্তার যানবাহনও রেহাই পাবে না। এজন্য আরও সতর্ক হওয়া জরুরি। অনেকের মতে, ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ চলছে জাপানীদের তত্ত্ববধানে। মেট্রোরেলের গার্ডার তোলা হয় রাতে। এমনকি যে স্থানে গার্ডার স্থাপন করা হয় সেই রাস্তা আগে থেকেই বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই পথে তখন মানুষও চলাচল করতে পারে না। এতে দুর্ঘটনা ঘটলেও হতাহতের কোনো আশঙ্কা থাকে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।