Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলছে আগামী বছর জুনে

বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর আতঙ্কের প্রকল্প বিআরটি ৭৯ দশমিক ২৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ৭৯ দশমিক ২৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে ২০২৩ সালের জুন মাসে। ঢাকার উত্তরা ও টঙ্গী এলাকার সাড়ে ২০ কিলোমিটার ফ্লাইওভার ও রাস্তার ফিজিক্যাল এ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে এয়ারপোর্ট ফ্লাইওভার, জসীমউদ্দিন ফ্লাইওভার, হাউজবিল্ডিং থেকে স্টেশন পর্যন্ত নির্মিত ফ্লাইওভার, টঙ্গীতে ফ্লাইওভার অংশে নির্মাণাধীন স্টেশন, সমতলে নির্মাণাধীন স্টেশন (তারাগাছ স্টেশন), বিআরটি করিডোরের নির্বাচিত সড়কের অংশ, গাজীপুর চৌরাস্তা স্টেশন ও ফ্লাইওভার, বিআরটি ডিপো (নলজানি, গাজীপুর)। ১৬ কিলোমিটারের ৮২ দশমিক ৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বিবিএ অংশের সাড়ে ৪ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৭২ দশমিক ৩৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ৭৯ দশমিক ৯ শতাংশ।
ইতোমধ্যে এ প্রকল্পটিকে ঘিরে স্থানীয়দের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। দ্রুত এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার দাবি করে আসছেন তারা। কজে দীর্ঘসময় ব্যয় ও অব্যবস্থাপনার কারণে আরও দুর্ঘটনা বাড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সড়কে যানবাহন ও মানুষের চলাচলকরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। সহজ যোগাযোগের জন্য উন্নয়ন করা হলেও চলমান প্রকল্পের অব্যবস্থাপনায় প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। গত ১৫ আগস্ট উত্তরা এলাকায় বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণ প্রকল্পের গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে নিহত হন পাঁচজন। এ ঘটনাটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গাফিলতি, অব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তাহীনতাই মূলকারণ হিসেবে দেখছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা।
তারা মনে করেন, ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত এই মহাসড়কে জায়গাটুকু সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, কূটনৈতিক, মন্ত্রী ও বিভিন্ন পর্যায়ের অতিথিরা আসেন। আবার তাদের সফর শেষে নিজ দেশে ফিরে যান। আমাদের দেশের প্রবাসীরাও নিয়মিত দেশে ফিরেন এবং বিদেশে যান। এই বিমানবন্দরকে ঘিরে প্রতিদিন হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে। এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করার সময় সাধারণ রোগীদের ভোগান্তি যেন বেড়ে যায়। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার জন্যও বের হলে সঠিক সময়ে যাওয়া যায় না। বেশিরভাগ অ্যাম্বুলেন্স ও মাইক্রোবাস এই সড়ক ব্যবহার করতে চান না।
সরেজমিন দেখা গেছে, এখনো অরক্ষিতভাবেই পড়ে আছে ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কের বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী। সম্প্রতি দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত ও কমপক্ষে তিনজন আহতের ঘটনার পরও শঙ্কায় রয়েছেন সাধারণ মানুষ। সড়কের মাঝে ফেলে রাখা হয়েছে গার্ডার। সøাবগুলো উম্মুক্তভাবে পড়ে আছে সড়কের পাশে। ইট, বালু, সিমেন্ট, রডসহ নানা নির্মাণসামগ্রীও একইভাবে রাখা হয়েছে। টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত মিল গেট, টঙ্গী কলেজ গেট, হোসেন মার্কেট, চেরাগআলী, বাসন সড়ক, কুনিয়া তারগাছ, বোর্ড বাজার, ভোগরা বাইপাস পর্যন্ত সব জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণভাবেই রাখা হয়েছে এসব জিনিস। গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এখানে বিশাল জায়গা নিয়ে উড়ালসেতু নির্মাণের কাজ চলছে। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত হাজার হাজার পথচারী চৌরাস্তা দিয়ে চলাচল করেন। চৌরাস্তার চারপাশে ইট, বালু সিমেন্ট ও নির্মাণ সামগ্রী ছড়িয়ে রয়েছে। ভারী যন্ত্রাংশ, নির্মাণসামগ্রী মাথার ওপর ঝুলে থাকলেও নিচে রাখা হয়নি কোনো বেষ্টনী। ঝুঁকি মাথায় নিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার পথচারী ও যানবাহন চলাচল করছে।
গতকাল শুক্রবার প্রকল্প পরিদর্শন করেন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পে এমডি শফিকুল ইসলাম। সকালে রাজধানীর বিমানবন্দরের বলাকা কার্যালয়ের সামনে থেকে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নিয়ে বিআরটি করিডোর পরিদর্শন করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রকল্প পরিদর্শন কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবং ঢাকা বিআরটি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এ এম আমানুল্লাহ নুরী। তার সঙ্গে ছিলেন সড়ক ও জনপদ অধিদফতর, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), সেতু কর্তৃপক্ষ, বুয়েটের বিশেষজ্ঞ এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পে এমডি শফিকুল ইসলাম বলেছেন, শতভাগ সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারলে যথাসময়ে কাজ শেষ করা যাবে। তবে এখন পর্যন্ত শতভাগ কাজ আমরা পাইনি। চাপ অব্যাহত রেখেছি। তাদের তিনটি শর্তপূরণ করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফান্ড ও লোকবলের ঘাটতি দূর করা এবং মেজর সেফটি শতভাগ নিশ্চিত করা। শর্তগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কাজ শুরুর অনুমতি দেয়া হবে না। তবে শিগগিরই শর্তপূরণের পর কাজ শুরু হবে। আমরা আশা করছি, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মেজর কাজগুলো শেষ হবে। বাকি কাজ ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যে সম্পন্ন হবে। ওই বছরের জুন নাগাদ প্রকল্পটি চালু করা যাবে বলে আমরা আশা করি।
গার্ডার দুর্ঘনায় নিহতের বিষয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টির তদন্ত চলছে। কার কার দায় আছে, সেটি তারা দেখবে। তবে কনসালটেন্টেরও দায়িত্ব থাকে।
এই রুটের কয়েকজন বাস চালক জানান, এখনো বিআরটি প্রকল্পের কাজ করার নির্মাণসামগ্রীর নিচ ও নিকট দিয়ে চলতে হয় যানবাহনগুলোকে। এছাড়াতো আর কোন উপায় নেই। বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত রাস্তার মাঝেই রাখা হয়েছে সকল নির্মাণসামগ্রী। দুর্ঘটনার পরও সরানো হয়নি। উপরে লোহা ও ইট বালি সিমেন্টের কাজ। ভারী জিনিসের কাজ চলার কারণে যেকোন মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রফেসর ড. শামসুল হক ইনকিলাবকে বলেন, এখন আমাদের প্রকল্পের কারণেই উন্নয়ন যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে। প্রকল্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল বলেই দুর্ঘটনা ঘটছে। এখানে সুশাসনের অভাব রয়েছে। এসব অব্যবস্থাপনায় কেউ সাহস নিয়ে কথা বলছে না। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজধানীর একটি চলাচলরত রাস্তায় এভাবে এতো বড় প্রকল্পের কাজ হচ্ছে কোন প্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া করা যাবে না। জনবহুল জায়গায় এভাবে কাজ হচ্ছে এটা কাম্য নয়। ###



 

Show all comments
  • Md Mobasharul Islam Jico ২৭ আগস্ট, ২০২২, ৮:১৭ এএম says : 0
    দাদার উপর দাদা আছে তাই। এ দেশে সব কিছুর দাম বাড়ে কিন্তু মানুষের দাম বাড়ে না। তাই যেখানে সেখানে মানুষ মরে পড়ে থাকে, আর দাদাদের যুক্তি মানুষ মরনশীল।
    Total Reply(0) Reply
  • Noyeem Ahammed ২৭ আগস্ট, ২০২২, ৮:১৭ এএম says : 0
    বাংলাদেশ বলে কথা আমার মনে হয় এটাই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যে দেশে মানুষের জীবনের কোন নিরাপত্তা নাই। যে দেশে আইন আছে কিন্তু সঠিক প্রয়োগ নাই। নেতা আছে লুটপাটের কথা কাজের মিল নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • রায়হান প্রমানিক ২৭ আগস্ট, ২০২২, ৮:১৮ এএম says : 0
    প্রতিদিন মানুষের যাতায়াতের সমস্যা হয় এটা নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নাই কোন প্রতিনিধির আমাদের এত মূল্যবান ভোট দিয়ে ধরনের মানুষকে ভোট দিয়ে জনগণের সেবা করার জন্য যে পাশে রাখি মানুষের কোন কাজে আসে না এমন নেতা এসব নেতা জনগণের পাও ধয়া যোগ্যতা নেই
    Total Reply(0) Reply
  • রায়হান প্রমানিক ২৭ আগস্ট, ২০২২, ৮:১৮ এএম says : 0
    প্রতিদিন মানুষের যাতায়াতের সমস্যা হয় এটা নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নাই কোন প্রতিনিধির আমাদের এত মূল্যবান ভোট দিয়ে ধরনের মানুষকে ভোট দিয়ে জনগণের সেবা করার জন্য যে পাশে রাখি মানুষের কোন কাজে আসে না এমন নেতা এসব নেতা জনগণের পাও ধয়া যোগ্যতা নেই
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Kader Zilani ২৭ আগস্ট, ২০২২, ৮:১৯ এএম says : 0
    কথার কথা ধরতে নেই। রাজনৈতিক কথা সিরিয়াসলি নিতে হয় না। বোকা!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রকল্প বিআরটি

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ