পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনামহামারি ইতোমধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির অপরিমেয় ক্ষতি সাধন করেছে। এমন কোনো দেশ নেই, করোনায় যার অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপর্যস্ত করেনি। অর্থনীতিবিদদের মতে, বিশ্ব এখন একটা মহামন্দার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে, যা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন। বেরিয়ে আসতে অন্তত কয়েক বছর লাগতে পারে। তবে শর্ত হলো, করোনাপরিস্থিতির দ্রুত ও ব্যাপক উন্নতি হতে হবে। বিশ্বজুড়ে করোনার টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। আবার নতুন ধরনের করোনার সন্ধানও পাওয়া যাচ্ছে। অবস্থা এখনো স্বস্তিকর হয়ে উঠেনি। এর মধ্যেই অবশ্য অর্থনীতিকে সচল ও সবল করার চেষ্টা চলছে দেশে দেশে। করোনায় বাংলাদেশের অর্থনীতিরও অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে। মানুষ কর্ম হারিয়েছে, আয় হারিয়েছে, বিনিয়োগের সুযোগ হারিয়েছে। শিল্পকারখানা-ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ থাকায় উৎপাদন ও রফতানির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ছোট ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। সঞ্চিত ছোট-খাটো পুঁজি খাটিয়ে কিছু আয়- রোজগার করার সুযোগও সংকুচিত হয়েছে। এক সময় সীমিত পুঁজির মানুষের জন্য বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ছিল একটা বড় অবলম্বন। করোনাকালে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে অনেকেরই আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে এবং বড় পুঁজির মালিকদেরও এখানে ঢুকে পড়তে দেখা গেছে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থার ঘাটতি থাকলেও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এখানে আস্তে আস্তে ভীড় জমিয়েছে। বড় বিনিয়োগকারীরাও এসেছে। বলা যায়, বাস্তবতাই এক্ষেত্রে নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে। পুঁজিবাজারে গত কয়েক মাস ধরে লেনদেনে এক ধরনের স্থিতিশীলতা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। এটা ইতিবাচক দিক। অন্যদিকে সরকার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার, উৎপাদন-রফতানি বাড়ানোর নানা পদক্ষেপ নেয়ায় সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারিত হচ্ছে ধীরে ধীরে। এটা নুতন করে বলার প্রয়োজন নেই যে, অর্থনীতিকে সচল-গতিশীল করতে এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে ব্যাপক বিনিয়োগের কোনো বিকল্প হয় না। তবে চাইলেই কোনো দেশ কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ পেতে পারেনা। বিনিয়োগের উৎস দ্বিবিধ : অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক। প্রধান উৎস অভ্যন্তরীণ। বৈদেশিক উৎস থেকে বিনিয়োগ পেতে হলেও অভ্যন্তরীণ উৎসের সবলতা প্রয়োজন হয়। বিনিয়োগযোগ্য পুঁজির অন্যতম প্রধান যোগানদার পুঁজিবাজার। দুর্ভাগ্যজনক হলেও একাধিকবার এই পুঁজিবাজার লুণ্ঠিত হয়েছে।
নতুন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা ফিরে আসতে থাকায় বিনিয়োগ বা অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজিবাজারের যে ভূমিকা, কার্যকরভাবে সেটা রাখার সুযোগ দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম আগামী দুই বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পুঁজিবাজার থেকে শিল্পায়নে অর্থের যোগান বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেছেন, এ বাজার থেকে অর্থ উত্তোলণের পরিমাণ বাড়াতে হবে, যাতে শিল্পায়ন বিকশিত হতে পারে। তিনি যথার্থই বলেছেন, শিল্পে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন করার কথা পুঁজিবাজারের। অথচ ব্যাংক তা করছে। এটা ব্যাংকের পক্ষে করা সম্ভব নয়। কীভাবে পুঁজিবাজারের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে সঠিক ভূমিকা রাখার উপযোগী করে তোলা যায়, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, আমাদের বন্ড মার্কেটের দিকে বেশি নজর দিতে হবে। আমাদের ৫-৬টি কোম্পানী আছে, যাদের বার্ষিক টার্নওভার ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এসব প্রতিষ্ঠান যাতে বন্ড ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে সেজন্য বন্ডের ওপর আমরা জোর দিচ্ছি। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, এর পাশাপাশি ভালো ভালো কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে। তিনি একই সঙ্গে এও উল্লেখ করছেন যে, বিশ্বের ফিনান্সিয়াল হাবগুলোর সঙ্গে যোগযোগ করা হচ্ছে, ভালো সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে। মিউচুয়াল ফান্ড নিয়েও কাজ হচ্ছে, যেখানে বিদেশী বিনিয়োগ আসবে। বিনিয়োগকারীরা ডিডিডেন্ট পেলে তাদের মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থা আরো বাড়বে। পুঁজিবাজারে প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ওপরই বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়ার বিষয়টি নির্ভর করে। বিনিয়োগকারীরা উৎসাহভরে স্বতর্স্ফূতভাবে এগিয়ে না এলে পুঁজিবাজারের বল ও সক্ষমতা বাড়তে পারে না। ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে যে লুটপাট চলে, তার প্রতিক্রিয়া এখনো বহমান। এমতাবস্থায়, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সবচেয়ে বড় কাজ।
আশার কথা, অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর পুঁজিবাজারে শুভ পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার সুবাদে বাজারে পুঁজি প্রবাহ বেড়েছে। তিনি নিজেই উল্লেখ করেছেন, যখন তিনি দায়িত্ব নেন তখন বাজার মূলধন ছিল সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা। গত ৯ মাসে তা বেড়ে ৫ লাখ কোটি টাকার আশেপাশে অবস্থান করছে। বলাই বাহুল্য, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে মূলধন আরো বাড়বে। এর মধ্যেই যেসব উদ্যোগ-পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা যেমন দৃঢ় হবে, তেমনি দেশ-বিদেশী উভয় পর্যায় থেকেই বিনিয়োগ ও বাড়বে। অন্যান্য ক্ষেত্রের মত পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রেও সুশাসনের কোনো বিকল্প নেই। ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময় সুশাসনের শোচনীয় ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। নূন্যতম সুশাসন ও জবাবদিহিতা থাকলে পুঁজিবাজার দু’দুবার নির্বিচার লুণ্ঠনের শিকার হতে পারতো না। দুর্নীতি, চক্রান্ত ও অভিসন্ধিমূলক কাজ থেকে পুঁজিবাজারকে সুরক্ষা করতে হবে। যে কোনো অপকর্ম ও দুষ্কর্মের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।