বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
পৃথিবীর মানুষ ইচ্ছা করলেই যে কোনো পোশাক বা অলঙ্কারে নিজেকে সাজাতে পারে। তবে আকৃতি বদলাতে পারে না। কিন্তু জান্নাতে প্রতি শুক্রবার এমন একটি বাজার বসবে, যেখানে আকৃতিও বদলানো যাবে। শুধু তাই নয়, নিজের পছন্দসই প্রতিকৃতিও পাওয়া যাবে। যাদের মনে চায় তারা সেখানে যাবে। পরস্পরে দেখা সাক্ষাত হবে। তবে জান্নাতের বাজারের নিয়ম-রীতি পৃথিবীর বাজারগুলোর চেয়ে আলাদা। সেখানে ব্যবসায়িক কোনো কর্মকাণ্ড থাকবে না। কোনো ধরনের বেচাকেনা হবে না।
রাসূলে কারীম (সা.) বলেন, জান্নাতে এমন একটি বাজার থাকবে, যাতে মানুষের প্রতিকৃতি ব্যতীত কিছুই ক্রয়-বিক্রয় হবে না। যদি কেউ কোনো প্রতিকৃতি পছন্দ করে তৎক্ষণাৎ সে ওই প্রতিকৃতিতে রূপান্তরিত হবে। (তিরমিজি : ২৫৫০)।
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, জান্নাতে একটি বাজার থাকবে। প্রত্যেক জুমায় জান্নাতি লোকেরা তাতে একত্রিত হবেন। সেখানে উত্তর দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হবে। এ বায়ুর প্রভাবে জান্নাতীদের রূপ ও সৌন্দর্য বেড়ে যাবে। বাজার থেকে ফিরে আসার পর সঙ্গী সাথিরা তাদের রূপ সৌন্দর্যের প্রশংসা করবে। আবার সেও তাদের রূপ-সৌন্দর্যের প্রশংসা করবে। এটা তাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি তীব্র আকর্ষণ, প্রেম-ভালোবাসার একটি প্রকাশ। যা তাদের দাম্পত্য সূখ-শান্তি আরো বাড়িয়ে দিবে।
হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, জান্নাতে একটি বাজার রয়েছে। সেখানে যখনই কোনো ব্যক্তির যে ধরনের মুখাবয়ব (ও প্রতিকৃতি) ধারণ করতে চাইবে, সঙ্গে সঙ্গে সে সেই আকৃতি ধারণ করতে পারবে। (মিশকাত, হাদিস নং: ৫৬৪৬, ১৯৮২; তিরমিজি, হাদিস নং: ২৫৫০)
সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব (রহ.) থেকে বর্ণিত রয়েছে। তিনি একদিন আবু হুরায়রা (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যেন তিনি আমাকে এবং তোমাকে জান্নাতের বাজারে একত্রিত করেন।
সাঈদ ইবুনল মুসাইয়াব তখন বললেন, জান্নাতে কি বাজারও থাকবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ, রাসুল (সা.) আমাকে জানিয়েছেন যে, জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করার পর নিজ নিজ আমলের আধিক্য অনুসারে যথাযোগ্য বাসস্থান গ্রহণ করবে। পরে দুনিয়ার দিন হিসাবে প্রতি জুমাবার তারা আল্লাহ তাআলা সাক্ষাতে আসবে। তাদের জন্য তার আরশ প্রকাশ করা হবে।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি আমাদের প্রতিপালকের দর্শন পাব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সূর্য বা পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কোনো অসুবিধা হয়? আমরা বললাম, না।
তিনি বললেন, তেমনিভাবে তোমাদের প্রতিপালকের সাক্ষাতেও কোনো অসুবিধা থাকবে না। ওই মজলিসে এমন কোনো ব্যক্তি অবশিষ্ট থাকবে না, যার সঙ্গে আল্লাহ তাআলার কথোপকথন না হবে।
সেখান থেকে জান্নাতিরা জান্নাতের বাজারে আসবে। ফেরেশতারা তা ঘিরে রাখবেন। তাতে এমন সব জিনিস থাকবে, যা কোনো চোখ কখনও দেখেনি, কোনো কান কোনো দিন শোনেনি, কোনো হৃদয়ে তা কল্পনাও হয়নি। সেখানে কিছুর কেনাবেচা হবে না। এই বাজারেই জান্নাতিদের পরস্পর সাক্ষাৎ হবে।
জান্নাতিরা নিজ নিজ আবাসে ফিরে আসার পর স্ত্রীরা এসে অভ্যর্থনা জানাবে। বলবে, স্বাগতম ও শুভেচ্ছা। আমাদের নিকট থেকে যখন গিয়েছিলেন, তখনকার তুলনায় এখন আপনারা আরো বেশি সুন্দর হয়ে ফিরে এসেছেন। তখন জান্নাতি পুরুষরা বলবে, আমরা তো আজ মহাপরাক্রমশালী আমাদের প্রভুর মজলিসে বসে এসেছি। (তিরমিজি, হাদিস নং: ২৫৪৯; ইবনু মাজাহ, হাদিস নং: ৪৩৩৬)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।