Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিবচরে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ; তদন্তে নেমেছে প্রশাসন

মাদারীপুর সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০২১, ৬:৫৮ পিএম

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাঁশকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল বাশারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগে ইউপি চেয়ারম্যানের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত অভিযোগটি দেন বাঁশকান্দি এলাকার জসিম উদ্দিন।

লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, বাঁশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল আশার স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, বাজার কমিটির সভাপতি ও সিনিয়র মাদ্রাসার বিদ্যাৎসাহী সদস্য। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে এতগুলো পদে থাকায় তিনি পরিষদে নিয়মিত বসেন না এবং দায়িত্বও ঠিকমত পালন করেন না। শুধু তাই নয়, ইউপি চেয়ারমান আবুল বাশার স্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়ে নিজ বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দকৃত স্কুল ভবনের ঠিকাদারি কাজ নিজেই সম্পূর্ণ করেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগ। বাশার নিজেই চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে নিজ স্কুলের নামে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একাধিকবার বরাদ্দ দিয়েছেন। ইউপি ভবন নির্মাণ ও সংস্কার নামে একাধিক বরাদ্দ নিয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তার নিজ এলাকার ৪নং ওয়ার্ড সদস্য জামালের বাড়ি, ছলেনামা পাকা রাস্তা থেকে বাড়ি পর্যন্ত সড়ক ও উত্তর বাশকান্দি এলাকার একটি রাস্তা সংস্কারের বরাদ্দ এনে কাজ না করেই কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। নিজ এলাকায় বাড়ির রাস্তা, মসজিদের বিভিন্ন কাজের জন্য বার বার বরাদ্দ নিয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন এই ইউপি চেয়ারম্যান।

লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, চেয়ারম্যান হওয়ার আগে তিনি ২০ শতক জমির মালিক ছিলেন কিন্তু এখন তার রয়েছে অনেক জমিজমা ও অর্থ প্রাচুর্য। তিনি শেখপুর বাজারে জলিল ঢালীর কাছ হতে দোতলা একটি ভবন ক্রয় করে ৩ তলায় উন্নত করেছেন। এ ছাড়াও শিবচর উপজেলায় দাদাভাই উপশহরের একাধিক প্লোট কিনেছেন। স¤প্রতি তিনি রাজধানী ঢাকার বাসাবো এলাকায় একটি ফ্লাটও কিনেছেন। প্রভাবশালী এই ইউপি চেয়ারম্যান এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে নিজেই অন্যের নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স করে শেখপুর বাজারের উন্নয়ন মার্কেট, টলঘর, ড্রেন ও রাস্তার একাধিক কাজ নিজেই সম্পন্ন করেন। এ ছাড়াও এডিবির বরাদ্দকৃত ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে পুলিশ সদস্যদের থাকার জন্য ২টি কক্ষ নির্মাণ কাজ নিজেই করেছেন। অভিযোগ রয়েছে উপজেলা পরিষদের মার্কেটের ওই পুলিশ ক্যাম্প অবৈধভাবে তিনি পরিষদের মার্কেটে বিনা খরচে থাকতে দিয়েছেন। পুলিশদের বিনা খরচে থাকার ব্যবস্থা করায় পুলিশকে ব্যবহারের সুবিধাও ভোগ করেন।

ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাশার নিজে দুর্নীতির করেননি, তার খালাতো ভাই মাসুম মোল্লা ও চাচাতো ভাই লিটু মুন্সিকে তিনি ব্যবহার করেছেন। তাদের দুজনের নামে প্রাধানমন্ত্রীর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারও এনে দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাশার। মাসুম সেই কর্মসূচির চালের ৬৮ বস্তা অন্যত্র বিক্রির সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়। আর লিটু মুন্সির বিরুদ্ধে চাল দেওয়ার অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ে তদন্তধীন আছে।

অভিযোগ আছে, আবুল বাসার নিজ বিদ্যালয়ে বসেই ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম সম্পাদন করেন। এতে স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে। এ ছাড়া তিনি গরীব ভ্যানচালকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৪০০ টাকা করে উত্তোলন করে লাইসেন্সের নামে। এ ব্যাপারেও মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুনের কাছে এলাকাবাসী একটি অভিযোগপত্র দিয়েছেন।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাশার বলেন, আমি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, এটি সত্যি। আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগ থেকে ২০১৩ সাল থেকে আমি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। আমি স্কুল থেকে বেতন নেই কিন্তু পরিষদ থেকে কোন সম্মানী নেই না। তা ছাড়া আমার বিরুদ্ধে যে অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন তাই প্রতিপক্ষ আমার নামে মিথ্যে কথা সাজিয়ে ডিসির কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এর সঙ্গে আমার কোন সত্যতা নেই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল আশারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের কথা উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ হাতে পেয়েছি। বিষয়টি আমলে নিয়ে আমরা তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছি। তিনি যদি দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে জড়িত হন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



 

Show all comments
  • Golam mostafa ১২ মার্চ, ২০২১, ১০:৪০ এএম says : 0
    মিথ্যা এবং তার বিরুদ্ধে সরযন্ত্র
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদারীপুর

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ