Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ফলাফলেই হারিয়েছে

বিশেষজ্ঞদের অভিমত ৪ ধাপের পৌর নির্বাচনে আ.লীগ ১৫৬, বিএনপি ১০, জাতীয় পার্টি ১টিতে জয়ী

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

পৌরসভায় এককেন্দ্রিক ফলাফলই জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের বিশ্বাস যোগ্যতা হারিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ইতোমধ্যে চার ধাপে ২০১টি পৌরসভায় নির্বাচান অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ১৫৬টি পৌরসভায় বিজয়ী হয়েছেন। বিপরীতে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মাত্র একটিতে জয়লাভ করেছেন। অন্যদিকে রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মাত্র ১০টি পৌরসভায় জয়লাভ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন নির্বাচনের এই ফলাফল জনমনে ব্যাপক সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। তারা মনে করে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিরোধী দল সরকারি দলের চেয়ে বেশি পৌরসভায় বিজয়ী হতো।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করার আইনগত ক্ষমতা থাকার পরও ইসিকে নিষ্ক্রিয় দেখা গেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ইচ্ছা মতো নির্বাচন শেষ করছে আর কমিশন এতে সন্তোষ প্রকাশ করছে। নির্বাচনের যে ফলাফল এসেছে সেটাই জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। বিজয়ী প্রার্থীর সাথে নিকটতম প্রতিদ›দ্বী প্রার্থীর ভোটের যে পার্থক্য দেখা গেছে সেটা কারো কাছেই বিশ্বাস যোগ্য হয়নি। এ নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপি হয়েছে এমনটাই জনমনে ধারণা।

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, স্থানীয় সরকারের যেসব সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে তাতে এক ধরনের তেলেসমাতি দেখা গেছে। এই তেলেসমাতিটা কী? তেলেসমাতিটা হলো জাল ভোট, কারচুপি ও ইভিএমে জালিয়াতি। তেলেসমাতিটা হলো প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বপূর্ণ আচরণ। অনেকে বলছেন, ইভিএমে যা দেখাতে চায় তাই দেখানো যায়। অনেকে এও বলেছেন ইভিএমেও আগের রাতে ভোট দেওয়া হয়েছে। ইভিএম করা হয়েছে মূলত জাল ভোট বন্ধ করার জন্য। এখন দেখা যাচ্ছে ইভিএমেও জাল ভোট হচ্ছে। অর্থাৎ ইভিএমে ডিজিটাল জালিয়াতি হচ্ছে। ফলে এসব নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। কেবল জনগণের অর্থের অপচয় হচ্ছে। জনগণ এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু নির্বাচন মনে করে না। নির্বাচনের যে ফলাফল জনমেন সন্দেহ আরও প্রকট হয়েছে। তারা মনে করে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সরকারি দলের চেয়ে বিরোধী দল বেশি পৌরসভায় বিজয়ী হতো।

সারাদেশে ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে সারাদেশে চার ধাপে ২০১টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইসি সূত্রমতে, প্রথম চার ধাপের নির্বাচনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ১৫৬টি পৌরসভায় বিজয়ী হয়েছেন। বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মাত্র একটিতে জয়লাভ করেছেন। মাঠের বিরোধী দল বিএনপি সমর্থিত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা ১০টি পৌরসভায় জয়লাভ করেছেন। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩০টিতে জয়লাভ করেছেন। তবে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিতদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। চার ধাপের পৌরসভায় নির্বাচনে গড়ে ৬৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ ভোট পড়েছে।

গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের ২৩টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে গড়ে ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পড়ে। ইলেকট্রনিক্স ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের ২৩ পৌরসভার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়ে পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটা পৌরসভায়। এখানে ভোট পড়েছে ৮৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। বিপরীতে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড পৌরসভায়। এই পৌরসভা নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। প্রথম ধাপের ২৩ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ১৮টিতে, বিএনপি দুটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তিনটিতে জয়লাভ করে।

দ্বিতীয় ধাপে ৬০টি পৌরসভায় গত ১৬ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে গড়ে ৬১ দশমিক ৯২ শতাংশ ভোট পড়ে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪৬টি পৌরসভায় জয়লাভ করেছে। এর মধ্যে চারটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ১৪টি পৌরসভার মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আটটিতে, বিএনপি চারটি, জাতীয় পার্টি একটি এবং জাসদ একটি পৌরসভায় জয়লাভ করেছেন। গত ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপে ৬৩টি পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ৪৬টি পৌরসভায় জয়লাভ করে। এর মধ্যে দুইটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হন। বাকি ১৭টি পৌরসভার মধ্যে স্বতন্ত্র ১৪টিতে, বিএনপি তিনটিতে জয়লাভ করেছে। নির্বাচনে গড়ে ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ ভোট পড়েছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ ধাপে ৫৫ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ। চতুর্থ ধাপে ৫৫ পৌরসভার মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪৬টি, বিএনপি ১টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ৫টি পৌরসভায় জয় লাভ করে।



 

Show all comments
  • কে এম আরিফুল ইসলাম ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:১৪ এএম says : 0
    নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ।
    Total Reply(0) Reply
  • আরমান ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:১৫ এএম says : 0
    সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সরকারি দলের চেয়ে বিরোধী দল বেশি পৌরসভায় বিজয়ী হতো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ