Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের দর্পচূর্ণ করতে বার বার শিক্ষা দেবে চীন

যেভাবে চীনের কাছে হেরেছিল ভারত ২

ডানা ইশরাত | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:৪১ এএম

যুদ্ধের তাৎক্ষণিক কারণটি ছিল ভারত ও চীনের সংলগ্ন দু’টি সীমান্ত অঞ্চল নিয়ে বিরোধ। দেশ দু’টির একদিকে ৩টি অংশে বিভক্ত নেপাল, সিকিম (তৎকালীন ভারতীয় প্রটেক্টরেট) এবং ভুটান ঘেঁষে বিস্তৃত একটি দীর্ঘ সীমান্ত যা মিয়ানমার ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যবর্তী হিমালয়মুখী অঞ্চল। অন্যদিকে, পূর্বাঞ্চলে মিয়ানমার এবং ভুটানের মধ্যবর্তী বর্তমান ভারতের অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে গঠিত অঞ্চল। এ সীমান্তে বেশ কয়েকটি বিতর্কিত অঞ্চল রয়েছে।

তবে, যুদ্ধের মূল কারণ ছিল বিচ্ছিন্ন আকসাই চীন এবং অরুণাচল প্রদেশ সীমান্ত অঞ্চলগুলোর সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিরোধ। চীন ও তিব্বতের মধ্যকার ঔপনিবেশিক সীমান্তরেখায় কিছু অঞ্চলের সীমান্ত অস্পষ্ট ছিল। শিনজিয়াং এবং তিব্বতের মধ্যকার চীনা স্বায়ত্তশাসিত সুইজারল্যান্ড আকারের আকসাইন চীন অঞ্চল (যা চীন ১৯৬৫ সালে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করে) ভারতের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। ভারত লাদাখের এবং চীন শিনজিয়াংয়ের অংশ বলে দাবি করা আকসাই চীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যোগাযোগ রয়েছে যা চীনা অঞ্চল তিব্বত এবং শিনজিয়াংকে সংযুক্ত করে। চীনের এ রাস্তাটির নির্মাণ দ্ব›েদ্বর অন্যতম কারণ ছিল। যদিও, ১৯৫৪ সালে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ‘হিন্দি-চীনি ভাই-ভাই’ স্লোগান প্রচার করেছিলেন এবং দুই দেশ শান্তিময় সহাবস্থানের ৫টি নীতিমালা অবলম্বন করেছিল, যার অধীনে ভারত তিব্বতে চীনা শাসনের স্বীকৃতি দিয়েছিল, কিন্তু দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় যখন একই বছরে চীনা মানচিত্রগুলো ভারতের হিসাবে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার সীমান্ত অঞ্চলকে চীনের হিসাবে দেখিয়েছিল এবং নেহ্রু ভারতের দাবি অনুযায়ী সমস্ত সীমান্তে সুনির্দিষ্ট সীমানা দেখানোর জন্য ভারতের মানচিত্রে একটি সংশোধনীর একটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

যুদ্ধের আগের বছরগুলোতে এ ধরনের অসংখ্য ঘটনা ঘটেছিল, যার ফলস্বরূপ উভয় পক্ষেই হালকা হতাহতের ঘটনা ঘটে। ভারত চীনের দাবিকৃত অঞ্চলটিতে সেনা মোতায়েন করেছিল। এ মোতায়েন সম্পর্কে চীনের সতর্কতা এবং ফলস্বরূপ সীমান্তে বিশাল চীনা সেনাবাহিনী মোতায়েন উভয় বিষয়কেই উপেক্ষা করেছিল ভারত। দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছিল যখন মাও সেতুং দাবি করেছিলেন যে, ভারত চীনের বিরুদ্ধে তিব্বতে লাসা বিদ্রোহ ঘটিয়েছিল।

পাশাপাশি, মাও সেতুং ১৯৫৯ সালের মার্চে তিব্বতের পলাতক ধর্মগুরু ভারতে আশ্রয়প্রাপ্ত দালাই লামার সংবর্ধনার কথা শুনে প্রচন্ড অপমানিত বোধ করেছিলেন। চীনের তিব্বত শাসনের জন্য হুমকি হয়ে ওঠা ভারত চীন-ভারত যুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। চীন যখন ঘোষণা করেছিল যে, তারা তিব্বতে সম্পূর্ণ চীনা শাসন কায়েম করবে, তখন ভারত তিব্বত ইস্যুতে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে প্রতিবাদনামা পাঠিয়েছিল। এ কারণে আকসাই চীন সীমান্তে সেনা মোতায়েন করতে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের চেয়ে আরও সক্রিয় ছিল চীন।

সিআইএর উন্মুক্ত করা পোলো নথিতে যুদ্ধের সময় চীনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমেরিকান সমকালীন বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে। এ দলিল অনুসারে, ‘১৯৬২ সালে পিএলএ’র বাহিনী যে ভ‚মিতে অবস্থান নিয়েছিল এবং সেই ভ‚মিটি অধিগ্রহণের চেষ্টা করার জন্য ভারতীয়দের শাস্তি দিতে উদ্বুদ্ধ চীন প্রাথমিক আক্রমণ করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছিল।’

ইরাকে প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত আরএস কালহা একটি নিবন্ধে লিখেছেন, ‘তৎকালীন চীনা প্রেসিডেন্ট লিউ শাওচি শ্রীলঙ্কার নেতা ফেলিক্স বন্দরানায়েককে বলেছিলেন যে, ১৯৬২ সালের যুদ্ধটি ছিল ভারতের দম্ভ এবং মহিমার বিভ্রমকে ধ্বংস করার জন্য। চীন ভারতকে শিক্ষা দিয়েছে এবং তা বারবার করবে।’

মাও সেতুং ১৯৬৪ সালে নেপালি প্রতিনিধিদের কাছে একই অভিব্যক্তি দিয়ে বলেন, ‘ভারত ও চীনের মধ্যে প্রধান সমস্যা ম্যাকমাহন লাইন নয়, তিব্বত প্রশ্নে ছিল।’ ১৯৭৩ সালে চৌ এন লাই আমেরিকার তৎকালীন স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারকে বলছিলেন যে, নেহরু বাড়াবাড়ি করায় এ যুদ্ধ সঙ্ঘটিত হয়েছিল। সূত্র : ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট, উইকিপেডিয়া, ইন্টারনেট। (চলবে)



 

Show all comments
  • শান্তা ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:২০ এএম says : 0
    ওদেরকে উচিত শিক্ষা দেয়া উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • Monika Hira ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৪৩ এএম says : 0
    অতীতেও ভারতের দর্পচূর্ণ হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে
    Total Reply(0) Reply
  • গিয়াসউদ্দীন একরাম ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৪৪ এএম says : 0
    ইতিহাসভিত্তিক এই ধারাবাহিক লেখাটির জন্য দৈনিক ইনকিলাব ও লেখককে ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • টুটুল ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৪৫ এএম says : 0
    চীন ভারতকে শিক্ষা দিয়েছে এবং তা বারবার করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • জব্বার ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৪৬ এএম says : 0
    ভারতের মোড়লগিরির দিন শেষ
    Total Reply(0) Reply
  • বাতি ঘর ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৮:২৭ এএম says : 0
    ভারতকে সবাই শিক্ষা দেয় শুধু বাংলাদেশই পারে না।
    Total Reply(0) Reply
  • হাসান মুনাব্বেহ সাআদ ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৮:২৮ এএম says : 0
    প্রতিবেশী দেশগুলো একত্রে হয়ে ভারতকে মাটিতে মিশিয়ে দেয়ার দরকার।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ