পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাভাইরাস মোকাবেলা এই মুহূর্তে বিশ্বের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। করোনার কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষের আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঘটনা ইতিহাসে আর কখনো ঘটেনি। একইভাবে এত দ্রæত টিকা আবিষ্কারও সম্ভব হয়নি। এক বছরের মধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার, তিন ধাপের ট্রায়াল, বাণিজ্যিক উৎপাদন ও সর্বস্তরে ব্যবহার শুরুর মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাস মোকাবেলার এই সক্ষমতা বিশ্বের বায়োটেক ও বায়োলজিক্যাল গবেষণায় বড় ধরনের অগ্রগতি নির্দেশ করছে। বছরের শুরু থেকেই দেশে দেশে করোনা ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরু হলেও এখনো শতাধিক দেশ তা শুরু করতে পারেনি। বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যকর উদ্যোগে গত ৭ ফেব্রæয়ারী থেকে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনা ভ্যাকসিনেশন শুরু হয়েছে। তবে করোনা ভ্যাকসিনেশন নিয়ে দেশে দেশে নানা ধরনের পদ্ধতিগত জটিলতা ও আস্থাহীনতার কথা শোনা গেছে। বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ভারতে বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনা ভ্যাকসিন নিতে অনাগ্রহ দেখা গেলেও বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই আস্থাহীনতা কাটতে শুরু করেছে। টিকা কেন্দ্রগুলোতে ক্রমশ ভীড় বাড়ছে। তবে ভ্যাকসিন অ্যাপে নিবন্ধন নিয়ে প্রযুক্তিগত জটিলতার কারণে অনেকে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। অনেক সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শ্রমজীবী ও নি¤œবিত্তের মানুষও টিকার বাইরে রয়ে গেছে।
টিকা নিবন্ধনের অ্যাপ নিয়ে শুরুতে বিতর্ক তৈরি হলেও এখন তার ব্যবহারে জটিলতা দেখা দিয়েছে। নিবন্ধনের নির্দিষ্ট সময়সীমা এবং সবার পক্ষে ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব না হওয়ায় টিকার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। যাদের প্রযুক্তিগত সুবিধা রয়েছে তারা নিবন্ধন করতে পারলেও বিপুল সংখ্যক মানুষের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনার মতো ভয়াবহ ভাইরাস মোকাবেলায় টিকা প্রদান যত দ্রæত সম্ভব হবে, তত দ্রæত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। এজন্য দ্রত সময়ে দেশের সব মানুষকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এর প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করা জরুরী। দেখা যাচ্ছে, যে অ্যাপের মাধ্যমে টিকা নেয়ার রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, তাতে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিয়েছে। অনেকে নিবন্ধন করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। এতে টিকা প্রদান কার্যক্রম প্রলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশে করোনা ভ্যাকসিনেশন শুরুর প্রথম ১০ দিনে ১১ লাখ মানুষ টিকা গ্রহণ করেছেন বলে জানা যায়। টিকা প্রদানে অনলাইন নিবন্ধনের জটিল প্রক্রিয়ায় নিরাশ হয়ে অনেকেই টিকা কেন্দ্র থেকে ফিরে যাচ্ছেন বলে গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। অ্যাপে নিবন্ধন করতে গিয়ে অনাবশ্যক জটিলতা, সময়ক্ষেপণ এবং ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ডের (ওটিপি) কারণে অনেকেই নিবন্ধন করতে পারছে না। দেখা যাচ্ছে, নিবন্ধনের সুবিধা যাদের রয়েছে জটিলতা সত্তে¡ও তারাই কেবল টিকা গ্রহণ করতে পারছে। তবে খেটে খাওয়া মানুষ, কৃষক, শ্রমিকসহ বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে না কিংবা এ সুবিধার বাইরে তাদের আগ্রহ থাকলেও টিকা নিতে পারছে না। যেখানে দেশের সব প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে দ্রæত টিকার আওতায় আনা প্রয়োজন সেখানে টিকা গ্রহণের পদ্ধতিগত জটিলতা কাম্য হতে পারে না।
ইতিমধ্যে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে দুই দফায় ৭০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের মূল্য অগ্রিম প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে সাথে চীন-রাশিয়া, ফাইজারসহ অন্যান্য দেশ থেকেও টিকা আমদানির প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে বলা যায়। এটি সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অনেক বড় সাফল্য। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা টিকা গ্রহণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে। তবে টিকা প্রদানের প্রক্রিয়াটিতে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় অনেক মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। আমরা মনে করি, টিকা প্রদানের প্রক্রিয়াটি সহজ করে দেয়া উচিৎ। অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে নির্দিষ্ট সময়সীমার বাধ্যবাধকতা, বার বার চেষ্টা করে নিবন্ধনে সফল না হওয়া, নিবন্ধনের পরও টিকাদানের দিন তারিখ জানাতে বিলম্ব করা, ওটিপি নিয়ে বিভ্রান্তির দ্রæত সমাধান করা জরুরি। অ্যাপের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে এই কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে বয়ষ্ক ব্যক্তি, শ্রমিক শ্রেণী ও সাধারণ মানুষকে করোনা ভ্যাকসিন অ্যাপের জটিল প্রক্রিয়া থেকে মুক্ত রেখে টিকা কেন্দ্রে সরাসরি টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নির্ধারিত স্থানে, নির্ধারিত দিনে টিকা গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। অশিক্ষিত ও তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা ও দক্ষতা থেকে বঞ্চিত মানুষের টিকাদান নিশ্চিত করতে অ্যাপের জটিলতা পরিহার করে ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচিকে আরো সহজ করার বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।