Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চোরাচালানে সক্রিয় ১৪ চক্র

শাহজালাল বিমানবন্দরে অবৈধ পথে বাড়ছে সোনা ও মাদক আসা

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৪ এএম

হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চোরাচালান থামছেই না। ১৪ চোরাচালান চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে স্বর্ণ ও মাদকসহ অন্যান্য পণ্যের নিরাপদ এই রুট। প্রতিদিন নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে চোরাচালানের সাথে জড়িতরা। যত স্বর্ণ ও মাদক ধরা পড়ছে তার চেয়ে শতগুণ বেশি পাচার হয়ে যাচ্ছে। এসব চক্রের সাথে জড়িত রয়েছে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, একাধিক সংস্থার কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, মানি এক্সচেঞ্জ ও হুন্ডি ব্যবসায়ী। তবে তারা সবাই বাংলাদেশি নয়। এদের সাথে দুবাই ও ভারতের স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও মাদক চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্তরা জড়িত আছেন। আর নিয়ন্ত্রণ করেন দুবাই, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকে। বাংলাদেশি চক্রের সদস্যরা মূলত চোরাই স্বর্ণ বা মাদক প্রাপকের হাতে পৌঁছে দেয়ার কাজটি করেন। আবার কেউ কেউ বিনিয়োগও করেন। সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো একটি সংস্থার প্রতিবেদনে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

অন্যদিকে স¤প্রতি ঢাকা কাস্টম হাউজ শাহজালালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠিতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিরাপত্তা বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি সূত্রে জানা গেছে, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দ্বিতীয় তলায় একটি স্টাফ গেইট আছে। ওই গেইট দিয়ে এয়ারলাইন্সসহ বিমানবন্দরে দায়িত্বরত কর্মীরা আসা-যাওয়া করেন।

ঢাকা কাস্টমের প্রতিবেদন বলছে, এখানে লাগেজ বা মানুষের শরীর পরীক্ষায় স্ক্যানিং মেশিন নেই। সেই সুযোগ নিয়ে এয়ারলাইন্সসহ বিমানবন্দরের অনেক কর্মী চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ছে। এর আগে এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে ধরা পড়ার নজিরও রয়েছে। অপরদিকে বহির্গমন হলেও নেই ব্যাগেজ স্ক্যানার। ফলে সব যাত্রীকে সঠিকভাবে তল্লাশি করা যায় না। আর স্থায়ী স্ক্যানার না থাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতদের ম্যানেজ করার সুযোগও থেকে যায়। এছাড়া আগমনী হলেও নেই আধুনিক স্ক্যানার মেশিন।

প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, প্রতিদিন হ্যাঙ্গার গেইট দিয়ে অসংখ্য গাড়ি বিমানবন্দরে প্রবেশ করে আর বের হয়। এখানকার স্ক্যানিং মেশিনটিও পুরনো। সেটিও প্রায় সময় নষ্ট থাকে। এখানে একটি আধুনিক ভেহিক্যাল স্ক্যানার থাকলে পণ্য যাচ্ছে কি যাচ্ছে না সেটা জানা সম্ভব। এছাড়া কুরিয়ারে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার বিল অব এন্ট্রি শুল্কায়ান হয়। কিন্তু এগুলোর বেশির ভাগই স্ক্যানিং হয় না। এদিকে এয়ারফ্রেইটে স্ক্যানার রয়েছে মাত্র একটি। যা দিয়ে সব চালান পরীক্ষা করা অসম্ভব। আর পদ্মা গেইটেও নেই কোনো গাড়ি স্ক্যানার। ফলে জানা যায় না তেল পরিবহনে নিয়োজিত গাড়ির মাধ্যমে কোনো চোরাচালান হচ্ছে কি না।
বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের পুলিশ সুপার মো. রাশেদুল ইসলাম খান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, চোরাচালান বন্ধের জন্য নিয়মিত অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে অনেক আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে। জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে। তবে সকল সংস্থাকে সমন্বয় করে কাজ করলে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে রয়েছে সমঝোতার অভাব। ফলে ঝামেলা রয়েই গেছে। এর আগে কয়েকজন ভারতীয় নাগরিককে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে কলকাতার বাহাদুর রোডের নাগরিক দীপক কুমার আচারিয়া, ভারতের মুম্বাইয়ের লালবাগের দিনেশ মঙ্গিলাল জেন, মুম্বাইয়ের খাদাক রোডের জিগনেস কুমার সুরেশ কুমার, নেপালের কাঠমান্ডুর গাওয়াপুরের গৌরাঙ্গ রোসান ও ভারতের জেমস প্রিন্স রয়েছেন। ধরা পড়ার পর তারা জানিয়েছেন, সে দেশের বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা সোনা আনতে লগ্নি করেন।

গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানবন্দরে কর্মরত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যোগসাজশে সোনার বড় চালান নির্বিঘেœ বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যায়। এ কাজে সহায়তা করেন শুল্ক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও বিমানের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদের নিয়ন্ত্রণ করে ১৪ চোরাচালান সিন্ডিকেট। নির্দিষ্ট এজেন্টের মাধ্যমে বড় অংকের টাকা খরচ করে তারা। ১০ তোলা ওজনের একেকটি স্বর্ণের বার বিমানবন্দর থেকে বাইরে এনে দিলে চোরাচালানিদের কাছ থেকে এক হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পান তারা।

দুবাই, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে আসার সময় বিমানের কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বর্ণ পরিবহনে সহায়তা করেন। বাহকদের হাতে স্বর্ণ ধরিয়ে দেন দুবাইয়ে অবস্থানরত চক্রের প্রধানরা। বাহক সেই স্বর্ণ বিমানের আসনের নিচে, শৌচাগারে বা অন্য কোনো স্থানে লুকিয়ে রেখে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। পরে বিমানবন্দরে কর্মরত লোকজন নিজ দায়িত্বে সেই স্বর্ণ বের করে বাইরে নিয়ে আসেন। মানি এক্সচেঞ্জের মালিকেরা স্বর্ণ হাতবদলে মধ্যস্থতা করে কমিশন পান, আবার তারা কখনো কখনো টাকা বিনিয়োগও করেন।

একটি সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বর্ণ ও মাদক চোরাচালান চক্রের প্রধানদের অধিকাংশকে গ্রেফতার করা হয়েছে বিভিন্ন সময়। অনেকে গা ঢাকা দিয়ে আছেন। কিন্ত গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের প্রায় সবাই জামিনে বেরিয়ে আবার চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ছেন। এ কারণে চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না। হুন্ডি ব্যবসায়ী সালেহ আহম্মেদ ও স্বর্ণ চোরাচালানি নজরুল ইসলাম একাধিকবার গ্রেফতার হলেও তারা জামিনে বেরিয়ে দুবাই চলে যান, সেখানে আবার চোরাচালানে যুক্ত হয়েছেন।

এছাড়া আবদুল আলীম দুবাই, কামাল হোসেন, আবদুস সালাম, দেব কুমার, রিয়াজ উদ্দিন, নেওয়াজ খান, মিজানুর রহমান, জাহাঙ্গীর,আসাদুজ্জামান, মোহাম্মদ আলী ও মাসুদ করিমসহ আরো কিছু ব্যক্তি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্বর্ণ ও মাদকসহ অন্যান্য পণ্য চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে একাধিকবার প্রতিবেদন পাঠানো হলেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না রহস্যজনক কারণে।
আর্মড পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও ঢাকা কাস্টম হাউস যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এক হাজার ৭০০ কার্টন সিগারেট এবং ১৫৪ কেজি কসমেটিকসসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে। বিকাল ৪টার সময় বিমানবন্দরের আমদানি কার্গোর পার্কিং এলাকা থেকে মালামালসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়।

মোহাম্মদ মঞ্জুর জেনারেল ট্রেডিং লিমিটেড নামে একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের নামে এবং নেক্সাস কুরিয়ার যোগে আসা এ সব মালামাল শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আমদানি কার্গোর কুরিয়ার গেট এলাকায় কাভার্ড ভ্যানে বোঝাই করা অবস্থায় আটক করা হয়। এ সময় মো. সাজু (২৫), সুমন মিয়া (৩০) ও জাবেদ মিয়া (২৩) নামে তিন জনকে হাতেনাতে ধরা হয়। আটক মালামালের মধ্যে ৩০৩ এসএস ব্রাউন ২ লাখ ৪০ হাজার শলাকা, ইজি স্পেশাল গোল্ড ৯০ হাজার শলাকা এবং মোন্ড সুপার সিøম ১০ হাজার শলাকা সিগারেট রয়েছে। এছাড়া ডিউ, গোরি, চাঁদনি, নেভিয়া, ফেস মিরাকল এবং গোল্ড সোয়ান ব্রান্ডের ১৫৪ কেজি কসমেটিক্স আটক করা হয়। আটক মালামালের দাম এক কোটি ২০ লাখ টাকা বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে গত ২২ জানুয়ারি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৬২টি স্বর্ণবার এবং ৯৮ গ্রাম স্বর্ণালংকারসহ ৭.২৯০ কেজি স্বর্ণসহ একজনকে আটক করেন বিমানবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তারা। উদ্ধারকৃত স্বর্ণ ও স্বর্ণালঙ্কারের বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। গ্রেফতারকৃত সারোয়ার উদ্দিনের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলায়। তিনি দীর্ঘ দিন ধরেই চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ত বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চোরাচালান

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->