পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তিন দশকে উজাড় অর্ধেক কেওড়া-বাইন-ঝাউবন : বিরান হচ্ছে প্রাকৃতিক ঢাল : বঙ্গোপসাগরের করাল গ্রাসে ব্যাপক ভূমিক্ষয় : লবণাক্ততার হার বৃদ্ধি : দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ছেই
সারা দেশে বনজ সম্পদ উজাড় ও ধ্বংসকান্ড চলছে অবাধে। এরমধ্যে সমুদ্র উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী বিরান হচ্ছে বেশি। ৭১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল বসবাস সঙ্কটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিশ^ব্যাপী ‘গ্রিন বেল্ট’ বা ‘সবুজ বেষ্টনী’ প্রসারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে অস্তিত্বের প্রয়োজনে। অথচ বাংলাদেশে তা রক্ষা পাচ্ছেনা। বরং ভূমিস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে। রক্ষকরাই অনেক ক্ষেত্রে ভক্ষকের ভূমিকায়। উপকূলজুড়ে বনখেকোরা বন উজাড় করছে নির্বিচারে। ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনছে দেশের সুসমৃদ্ধ উপকূলভাগ, চর ও দ্বীপাঞ্চলে। ‘উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী’ কথার কথায় পরিণত হচ্ছে।
সরেজমিনে ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দশকে দেশের উপকূলভাগে ৫০ ভাগেরও বেশি সুশোভিত কেওড়া-বাইন-ঝাউবন, প্যারাবন, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল উজাড় হয়ে গেছে। এর নেপথ্যে বনখেকো এবং ভূমিদস্যু চক্র তৎপর। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তখন সেই নাম ব্যবহার করেই ওরা প্রভাব খাটায়। বনবিভাগ, পুলিশ, জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই উপকূলের মানচিত্র পাল্টে দিচ্ছে এসব চক্র। দৈনিক কোটি কোটি টাকা হাতবদল করছে। সবুজ বেষ্টনীর প্রতিনিয়ত ঘটছে সর্বনাশ। বিরান হয়ে যাচ্ছে দুর্যোগে সুরক্ষায় প্রাকৃতিক ঢাল।
বন ও পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জানান, বঙ্গোপসাগর বিধৌত বাংলাদেশের চর-উপকূল-দ্বীপাঞ্চল এবং সেখানকার কোটি কোটি বাসিন্দা ও প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষার স্বার্থেই উপকূলীয় তটরেখা বরাবর অন্তত শতকরা ৮০ ভাগ সবুজ বেষ্টনী থাকা জরুরি। কিন্তু ক্রমাগত বন উজাড় ও নিধনের কারণে বর্তমানে স্থানভেদে মাত্র ২০ থেকে ৩০ ভাগ কোনোমতে টিকে আছে। অবশিষ্ট উপকূলীয় বনাঞ্চলও সঙ্কটাপন্ন।
উপকূলীয় বনায়নে প্রকল্পের পর প্রকল্প নতুন কিছু নয়। মাঠের বাস্তবতায় যা ঘটছে, উপকূলে যত বনায়ন হচ্ছে, ততই চলছে ধ্বংসযজ্ঞ। এটাই যেন ‘নিয়মে’ পরিণত হয়েছে। নেই তদারকি, সঠিক মনিটরিং। স্বচ্ছতা জবাবদিহিতার বালাই নেই। উপকূলজুড়ে বনায়ন কর্মসূচি সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। কিন্তু তাকে পুঁজি করে, আসল উদ্দেশ্যকে ভিন্ন খাতে ব্যবহারের মাধ্যমে চলছে বনায়নে লুটপাট।
১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিশেষ করে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে অপরূপ বালির সৈকত (স্যান্ডি বীচ) সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য প্রাকৃতিক বর্ম হিসেবে ‘নিবিড় ঝাউবীথি’ গড়ে তোলা এবং সমগ্র দেশের উপকূলীয় জনপদকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক থেকে সুরক্ষার লক্ষ্যে সর্বপ্রথম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এর বাস্তবায়নও শুরু হয়। অথচ আজ কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ সমুদ্র উপকূলের অধিকাংশ স্থানে ঝাউবন সঙ্কুচিত হতে হতে সৈকত এলাকার ন্যাড়া-ফাঁকা করুণদশা দৃশ্যমান। ঝাউবীথি কেটে সাবাড় করে অপরিকল্পিতভাবে একের পর এক স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে। ঝাউবন ও অন্যান্য গাছপালা হারিয়ে দুর্বল সৈকতে ভাঙন বাড়ছে। অখন্ড সৈকতে সৃষ্টি হচ্ছে খাদ ও খাল। সাগর গিলছে ভূমি।
দেশের উপকূলীয় জনপদে সবুজ বেষ্টনী বিরানের পরিণতিতে হুমকির মুখে পড়েছে বিস্তীর্ণ জনবসতি, ফল-ফসল, জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ-প্রতিবেশের ভারসাম্য এবং প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদরাশি। তাছাড়া নামেমাত্র উপকূলীয় বনায়নের তুলনায় বন ও বনজ সম্পদ ধ্বংসকরণ প্রক্রিয়া বৃদ্ধির ফলে বঙ্গোপসাগরের করাল গ্রাসে ব্যাপক ভূমিক্ষয় হচ্ছে। ভিটেমাটি ও চাষের জমি হারাচ্ছে উপকূলবাসী। বাড়ছে ক্রমাগত লবণাক্ততার আগ্রাসন। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস, নিম্নচাপ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে এসব দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকির মাত্রা বাড়ছেই।
সবুজ বেষ্টনীর ধ্বংসযজ্ঞ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডীন, বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, পরিবেশ-প্রতিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে জানমাল, ফল-ফসলের সুরক্ষার জন্য দেশে সামগ্রিকভাবে ২৫ শতাংশ বনাঞ্চল থাকাটা অপরিহার্য। অথচ সামাজিক বনায়নসহ আছে মাত্র ৮ থেকে ১০ ভাগ। উপকূলীয় অঞ্চলে ৮০ শতাংশ সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা জরুরি হলেও আছে মাত্র ২০ থেকে ৩০ ভাগ।
এর অস্তিত্ব সঙ্কটের পেছনে মানুষের আগ্রাসী অপতৎপরতা অনেকাংশে দায়ী। বন ও ভূমিদস্যুদের দখলবাজি, বনবিভাগের অব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষিত পর্যাপ্ত জনবলের অভাব, একশ্রেণির অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে বনভূমি বেহাত, বন উজাড় করে দিয়ে অপরিকল্পিত চিংড়ি ঘের, লবণ চাষ, শিপব্রেকিং ইয়ার্ড তৈরি ইত্যাদি কর্মকান্ড দায়ী। তাছাড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠি জ্বালানি কাঠ ও জীবিকার তাগিদে আর যাতে সবুজ বেষ্টনী নিধন না করে এরজন্য বিকল্প জ্বালানির সংস্থান করতে হবে।
তিনি জানান, ১৯৯১ সালের ভয়াল ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে ১৯৯৬-৯৭ সালে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বনায়ন তথা সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সৃজিত সবুজ বেষ্টনী অনেক জায়গায় উজাড় হয়ে গেছে। এককালে চকরিয়ায় যে সুন্দরবন ছিল সেটি অনেক আগেই ধ্বংস করে চিংড়ি ঘেরে রূপান্তরিত হয়।
তিনি বলেন, সমগ্র উপকূলে সবুজ বেষ্টনী গড়তে সরকার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা সহকারে উপকূল-বান্ধব ব্যাপক বনায়ন এবং তার সুরক্ষার উপায় নিশ্চিত করা হলে সমুদ্র উপকূলে ভূমিক্ষয় রোধ, নতুন করে চর ও ভূমি জাগিয়ে তোলা সম্ভব হবে। জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগের কবল থেকে দেশের সমৃদ্ধ উপকূলকে সুরক্ষা করা যাবে। এর পাশাপাশি সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনাসমূহকে কাজে লাগানোর পথ হবে সুগম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।