Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৬ জুন ২০২৪, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে জসিম গ্রেপ্তার হলেও বাকিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৬:১২ পিএম

নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জে ধর্ষণসহ একাধিক মামলার আসামী, পেশাদার ছিনতাইকারী ও মাদক সিন্ডিকেটের মুলহোতা জসিম গ্রেপ্তার হলেও তার বাহিনীর অপর সদস্যরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেরাচ্ছে বীরদর্পে। বর্তমানে জসিম সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকলেও একটি অদৃশ্য শক্তির শেল্টারে থেমে নেই তার বাহিনীর মাদক ব্যবসাসহ অপকর্ম। এই বাহিনীর দৌরাত্ব থেকে রক্ষা পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রæত হস্তক্ষেপ কামনা করছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
জানা যায়, গত রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারী) নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবিরের আদালত জসিমকে ২দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে পুলিশ আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। শুনানী শেষে আদালত ২দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোর্ট পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রোকন উজ্জামান।

এরআগে গত ১ ফেব্রæয়ারী সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জের এক নম্বর ওয়ার্ডের মিজমিজি টিসি রোড এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিমের বাড়ির সামনের গলি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে বিদেশী একটি চাকু (সুইচ গিয়ার) ও ছিনতাইকৃত দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পরের দিন তাকে পুলিশের দায়ের করা একটি মামলায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেফতারকৃত জসিম সিদ্ধিরগঞ্জের নামধারী যুবলীগ নেতা টাইগার ওরফে চিকনা ফারুক এবং মহানগর ছাত্রদল নেতা মোঃ জুয়েল রানার ভাই এবং আদমজী জুটমিলের সাবেক শ্রমিক আবু সাঈদের ছেলে। বর্তমান তারা সিদ্ধিরগঞ্জ থনাধীন নাসিক এক নম্বর ওয়ার্ডস্থ পাগলাবাড়ি এলাকায় প্রায় পাঁচ কাঠা জমির উপর পঞ্চমতলা বাড়ী করে আয়েশী দিন যাপন করছে। এদিকে, তাদের তৃতীয় ছোট ভাই বিএনপির ছাত্রদলের নেতা জুয়েল রানা তার বড়ভাই ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ দলীয় নামধারী যুবলীগ নেতা টাইগার ওরফে চিকনা ফারুকের দাপটে মিজিমিজি মতিন হুজুরের বাড়ীর দিকে জায়গা কিনে বালু ভরাট এর কাজ করছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি দলের অন্যান্য নেতারা রাজনীতি করতে গিয়ে সবকিছু বেঁচে নি:শেষ হলেও জুয়েল আয়েশেই করছে বিএনপি। তাদের দুই ভাইয়ের প্রত্যক্ষ শেল্টারে জসিম এক নম্বর ওয়ার্ডে গড়ে তুলেছে একটি মাদকের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তার নেতৃত্বেই এই ওয়ার্ডে অবাধে চলছে মাদক, চুরি, ছিনতাই, মারামারী, নারীনিয়ে ফুর্তী। বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই আদমজীর নিউ কলোনী থেকে এসে এই এলাকায় গড়ে তুলেছে রাম রাজত্ব । ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় শীর্ষ নেতার ছত্র-ছায়ায় বনে গেছে যুবলীগ নেতা। লোক চক্ষুর অন্তরালে অবৈধ কর্মকান্ড করে বনে গেছেন কোটি পতি। যা দেখে অনেকেই হতভম্ব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি থেকে নিজেদেরকে আড়াল করে তাদের এই অবৈধ কর্মকান্ড ঠিক রাখতে আবার সোর্সের ভুমিকায়ও দাবরিয়ে বেড়াতো জসিম। কেউ তার অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে দিয়ে হয়রানী করতো সে।
বিভিন্ন সূত্রে থেকে জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জ পাইনাদী কবরস্থানের পিছনে পুষ্কুনীপাড়, সিআই খোলা বৌ-বাজার, তেরা মার্কেট, আল আমিন নগর, মজিব নগর, কাঠেরপুল, সাইলোরোড এর চৌরাবাড়ী পাম্প সংলগ্ন পুকুরপার, গেরেজ, সাইলোগেট, নদীর পাড়, আজিবপুর রেলনাইন, মিজমিজি পাগলাবাড়িসহ অলিগলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জসিম বাহিনীর সদস্যরা।

এরা হলো, চাঁন বাদশা (চাঁন্দু), তার স্ত্রী সুমি, কতিথ সোর্স, ডাকাতী মামলার আসামী ও বর্তমান মাদক ব্যাবসায়ী ইলিয়াস, শুভ, বাবু, মিলন, করিম, ইমরান, পলাশ, সোয়াদ, খোকন, মানিক, দেলুসহ সিন্ডিকেটের আরো অনেকে। এদের অনেকেই নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ মাদকদ্রব্যসহ একাধিকবার গ্রেফতারও করেছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলাও রয়েছে। যতবারই তারা গ্রেফতার হয়েছে কিছুদিন পর আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে অভিনব কৌশলে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কতিথ কিছু সোর্সসহ এদের একটি সিন্ডিকেট তৈরী করে এ মাদক ব্যবসাটি চালিয়ে আসছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানায়। এদের বিরুদ্ধে একাধিক বার সংবাদ প্রকাশও হয়েছে। তারা শক্তিশালী একটি সঙ্গবদ্ধ সিন্ডিকেট গড়ে তুলে যার ফলে ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ, বৃদ্ধি পাচ্ছে এলাকায় মারামারী রক্তক্ষয়ী সংঘর্স, ছিনতাই, চুরি, দর্ষণ’সহ সামাজিক অপরাধ।

তবে রহস্যজনক কারনে স্থানীয় কিছু বড় ভাইয়েরা দেখলেও সুবিধা পেয়ে দেখেনা। যেমন, তাদের কথা শুনা, ডাক দিলেই পাওয়া যায়, মিটিং, মিছিল, রাস্তায় ফিটিং, বড় ভাইদের সেবনের জন্য ফ্রি মাদক সরবরাহ, কেও মানতিও খায়, (মানে প্রতিদিন কিছু খরচ) স্থানীয়দের এই অবস্থ দেখে কোনঠাসা হয়ে এখন নিরব বসবাসকারীরা। যারা এখানে এসে বাড়ী-ঘর করে বসবাস করছে। বসবাসকারী নিরহ জনসাধারণ প্রশাসনের প্রতি সুদৃষ্টি দিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সুষ্ঠ তদন্ত করে এই ছিনতাইকারী, চোর, ধর্ষণকারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিষাক্ত এ ছোবল থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী। এসব মাদক ব্যবসায়ী ও তার মদদ দাতাদের বিরদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য র‌্যাব-১১ ও নারায়নগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকার সচেতন মহল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্রেফতার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ