পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে একযোগে করোনার টিকাদান কর্মসূচী শুরু হয়েছে। ওই দিন টিকা নিয়েছেন কয়েকজন মন্ত্রী, কয়েকজন সচিব, কয়েক’শ প্রতিনিধি, প্রধান বিচারপতিসহ অর্ধশতাধিক বিচারপতি, সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-শিক্ষক, পেশাজীবী নেতাদের অনেকে এবং বয়স্ক নাগরিকবৃন্দ। সবমিলে টিকা নিয়েছেন ৩১ হাজার ৯৬০ জন। ১ হাজার ৫টি হাসপাতালে এই কর্মসূচী পরিচালিত হয়েছে। ঢাকার ৫০টি হাসপাতালে ২০৪টি টিম এবং সারাদেশে ৯৫৫টি হাসপাতালে ২ হাজার ১৯৬টি টিকাটিম এই কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। গত ২৭ জানুয়ারি টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন ২৬ জন টিকা নেন। পরদিন আরো ৫৪১ জনকে টিকা দেয়া হয়। টিকা গ্রহণকারীরা সবাই সুস্থ আছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিকা গ্রহণের জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন সাড়ে ৩ লাখের মতো মানুষ। শুরুতে নানা প্রকার দ্বিধা-দ্ব›দ্ব ও নেতিবাচক প্রচারণার কারণে মানুষের মধ্যে কিছুটা অনাগ্রহের ভাব লক্ষ্য করা গেলেও প্রথম দু’দিনে টিকা গ্রহণকারীরা সুস্থ থাকায় এবং বিভিন্ন মহল থেকে টিকা নেয়ার পক্ষে প্রচারণা চালানোর ফলে মানুষের মধ্যে সন্দহ-সংশয় ও ভয় দ্রুত কেটে যাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। গণ টিকাদান কার্যক্রম উৎসবের মেজাজ লাভ করায় সেটা বিশেষভাবে প্রমাণিত হয়। আশা করা হচ্ছে, আগামীতে নিবন্ধন ও টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। করোনা থেকে মুক্ত থাকার জন্য টিকা নেয়ার বিকল্প নেই। কাজেই, সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিবন্ধন ও টিকা নিতে এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্বের খুব কম দেশই এখন পর্যন্ত টিকা পেয়েছে এবং গণটিকাদান কর্মসূচী শুরু করতে পেরেছে। বাংলাদেশে সেই স্বল্পসংখ্যক দেশের অন্তর্ভুক্ত। অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ব্রাজিল, ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রভৃতি। টিকার জন্য সারাবিশ্বে হাহাকার চলছে। শতাধিক দেশ এখনো টিকা সংগ্রহ ও টিকাদান কর্মসূচী শুরু করতে পারেনি।
করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পেয়েছে। এজন্য মূল কৃতিত্ব অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তার সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত ও দূরদর্শী পদক্ষেপের ফলে দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা এত কম হয়েছে। উদ্যমী স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ দেশের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্র্মীদের নিরলস কর্মপ্রয়াস এই সাফল্যকে সম্ভবপর করে তুলেছে। আরো একজন ব্যক্তির কথা না বললে এই সাফল্যগাঁথা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। করোনার টিকা আনার ক্ষেত্রে তার অগ্রবর্তী ভূমিকার কথা কারো অবিদিত নেই। তার বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে কোভিশিল্ড নামের অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা আনার জন্য চুক্তি করে। সেই চুক্তি মোতাবেক টিকা এসেছে ৫০ লাখ ডোজ। আর ভারত সরকার বাংলাদেশকে উপহার হিসাবে দিয়েছে ২০ লাখ ডোজ। সব মিলে বাংলাদেশের কাছে টিকার মজুদ ৭০ লাখ ডোজ, যাতে দু’ ডোজের হিসাবে ৩৫ লাখ লোককে টিকা দেয়া যাবে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ পাবে। এভাবে সবমিলে পাবে ২ কোটি ৫০ লাখ ডোজ। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত টিকার মজুদ এবং গণটিকাদানের ক্ষেত্রে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। করোনা মোকাবেলার ওই অগ্রগতি ও সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে। এই সঙ্গে যারা রয়েছেন সম্মুখযোদ্ধার ভূমিকায়, তাদেরও ধন্যবাদ জানাই।
করোনা প্রতিরোধে বিভিন্ন ব্যবস্থাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, আক্রান্তদের চিকিৎসা, টিকা সংগ্রহ এবং টিকাদান কর্মসূচী শুরু করার মধ্যদিয়ে যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে তাকে এগিয়ে নিতে হবে চূড়ান্ত সাফল্যের লক্ষ্যে। করোনা থেকে দেশের সকল মানুষকে নিরাপদ করাই সেই চূড়ান্ত লক্ষ্য। এই পর্যায়ে প্রথমেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সকলের জন্য টিকা নিশ্চিত করতে হবে। টিকা গ্রহণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। নিবন্ধন ব্যবস্থা সহজ করতে হবে। দেশের অধিকাংশ মানুষের পক্ষে অনলাইনে নিবন্ধন করা সম্ভব নয়। এজন্য সরকারিভাবে নিবন্ধন করার ব্যবস্থাও যুক্ত করতে হবে। টিকাদান কর্মসূচী যত জোরদার হবে, তত দ্রুত দেশ করোনামুক্ত হবে। এজন্য টিকার সংগ্রহ এবং মজুদ বাড়াতে হবে। কোভিশিল্ড ছাড়াও বিশ্বে যেসব টিকা ইতোমধ্যে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে, সেসব টিকা সংগ্রহ করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিশ্বের সকল দেশেরই টিকার প্রয়োজন। টিকা নিয়ে রাজনীতি ও ব্যবসা সবই হচ্ছে এবং হবে। এতে দরিদ্র ও প্রভাবহীন দেশগুলোর টিকা পাওয়া খুব সহজ হবে না। টিকা নিয়ে প্রতিযোগিতাও চলবে। এসব দিক খেয়াল রেখে আমাদের দ্রুততার সঙ্গে টিকার নিরাপদ মজুদ গড়ে তুলতে হবে। এবং টিকাদান কার্যক্রম দ্রুতায়িত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।