Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে এবার আকাশ দখলের লড়াই!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৬:৫৩ পিএম

আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে দলবদল ঘিরে সরগরম পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি। তাতে অন্য মাত্রা যোগ করেছে একটি চার্টার্ড বিমান। এই বিমানের ব্যবহার বুঝিয়ে দিয়েছে, রাজ্যে ভোটের প্রচারে এবার বিপুল টাকা খরচ করবে রাজনৈতিক দলগুলো।

ভোটের মুখে তৃণমূল থেকে একের পর এক বড় থেকে ছোট নেতা পদ্ম শিবিরে যোগ দিচ্ছেন। চার্টার্ড বিমানে সওয়ার রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্যান্য নেতারা দিল্লি গিয়ে অমিত শাহের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন। এভাবে বিশেষ বিমানে সফরের পর যোগদান ঘিরে প্রশ্ন উঠছে। আর নির্বাচনের সময় বিভিন্ন জনসভায় যোগ দেয়ার জন্য হেলিকপ্টার সফর শুরু হল বলে! রাজনীতিকদের মতে, বিমান-কপ্টার ছাড়া দেশের সব প্রান্তের মানুষের কাছে পৌঁছনো প্রায় অসম্ভব। তা বলে শুধু দলে যোগ দেয়ার জন্য বিমান ভাড়া করা হচ্ছে! তা হলে কি এ বারের বিধানসভা ভোটের প্রচারে আকাশপথের দখলদারি নিয়ে প্রতিযোগিতা চলবে? পশ্চিমবঙ্গের ভোট প্রচারে হেলিকপ্টার ব্যবহারের রেওয়াজ বেশি দিনের নয়। বাম নেতারা প্রচারে যেতেন সড়কপথে। তৃণমূলের হাত ধরেই মূলত এই রেওয়াজ পশ্চিমবঙ্গে এসেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বময় নেত্রী, তিনিই দলের ক্রাউড পুলার‍। তাই তাকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সফর করতে হয়। প্রয়োজন হয় হেলিকপ্টারের। এ নিয়ে বামপন্থিরা মমতার সমালোচনা করতে ছাড়েন না।

ভারতের শাসক দল বিজেপি কিংবা বিরোধী কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা নিয়মিতই আকাশপথে সফর করেন। এ নিয়ে দুই দলই একে অপরের দিকে আঙুল তোলে। গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ও বিজেপি দলের মধ্যে চার্টার্ড বিমান এবং হেলিকপ্টার ব্যবহার নিয়ে বাকযুদ্ধ হয়েছিল। কংগ্রেসের মুখপাত্র, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আনন্দ শর্মা বলেছিলেন, ‘এ এক অসম লড়াই। নেতাদের প্রচারের জন্য বিমান-হেলিকপ্টার পাওয়া যাচ্ছে না। প্রচারে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা খরচ করছে বিজেপি।’ যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিরোধীদের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি মন্তব্য করেন, ‘বিরোধীদের কাছে অর্থশক্তি আর বিজেপির আছে জনশক্তি।’

রাজনৈতিক দলগুলি ভোটের প্রচারে কপ্টার, ব্যক্তিগত বিমান ব্যবহার করে। তাই ভোট বাজারে রীতিমতো পৌষমাস বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোর। সাধারণভাবে একটি হেলিকপ্টার প্রতি ঘণ্টায় ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা ভাড়া নেয়। এক-দুই ঘণ্টা নয়, প্রচারের সময় দিনে কয়েক ঘণ্টার জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া নিতে হয় রাজনৈতিক দলগুলোকে। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষিত হলে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বারবার রাজ্যে প্রচারে আসবেন। নির্বাচনী প্রচারে ঝড় তুলবেন তারা, ফলে হেলিকপ্টার ব্যবহারে বৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী।

গত বিহার বিধানসভা ভোটে দেখা গিয়েছে, অন্যবারের তুলনায় অনেক কম হেলিকপ্টার, বিমান ব্যবহার হয়েছে। করোনা মহামারীর জেরে ভোটের প্রচারে সামাজিক মাধ্যমে জোর দেয়া হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণ নিম্নগামী। জনজীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে। ফলে নির্বাচনের প্রচারে কাটছাঁট হবে বলে মনে হয় না। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে প্রত্যেক প্রার্থীর নির্বাচনি খরচের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়েছে। ২৮ লাখ খেকে ৩০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু, পুরনো প্রশ্নটি সামনে আসছে। কীভাবে ভোটের বেহিসেবি খরচে লাগাম টানা যাবে?

অর্থনীতিবীদ রতন খাসনবিস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এ বার বাংলার ভোটে দেখা যাবে হেলিকপ্টার যুদ্ধ। এর জন্য শিল্পপতিদের কাছ থেকে অনুদান নেয় রাজনৈতিক দলগুলো। ক্রোনি ক্যাপিটালিস্টরা এর সুযোগ নেয়। তারা প্রচারের টাকা দেয়, বিনিময়ে সরকারের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করে। কেন্দ্র ও রাজ্যে একই ছবি।’ নির্বাচনি সংস্কারের মাধ্যমে শিল্পপতি নয়, রাষ্ট্রের অনুদানে দলগুলোর ভোটে লড়ার প্রস্তাব এসেছে বারবার। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পশ্চিম বঙ্গ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ