বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
প্রশাসনের কঠোর নজরদারি আর সাংবাদিকদের প্রশংসনীয় ভ‚মিকায় ময়মনসিংহের গৌরীপুরে পৌরসভা নির্বাচনে নীরব ব্যালট বিপ্লবে এক অনন্য নজির সৃষ্টি হয়েছে। এনিয়ে গৌরীপুর থেকে জেলার সর্বত্র আলোচনার টেবিলে স্থান করে নিয়েছে এ নির্বাচনের আদিঅন্ত। এতে প্রশংসা কুড়িয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ ভ‚মিকা। ফলে ভোটের মাঠের টানা দিনগুলো কারাগার আর গৃহবন্দি থেকেও ব্যাপক জনপ্রিয়তায় বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম।
স্থানীয়রা জানায়, এ নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাসুদুর রহমান শুভ্র হত্যাকান্ডের ঘটনায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আসামি হয়েছেন গৌরীপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। আসামি করা হয়েছে তার ভাইদেরও। পরে শুভ্র হত্যা মামলায় উচ্চ আদালতের জামিন নিয়ে ৩ জানুয়ারি মুক্তি লাভ করেন রফিক। কিন্তু ভোটের মাঠে ক্ষমতাসীন নৌকা সমর্থকদের একছত্র আধিপত্য আর দাপটে কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও কার্যত ছিলেন গৃহবন্দি। এভাবে টানা ২৭দিন ধৈর্য্যরে সাথে গৃহবন্দি থেকেই তিনি নিজ বাসভবনে বসেই করেছেন গণসংযোগ।
তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মো. বাচ্চু মিয়া জানান, নির্বাচনের শুরু থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ক্ষমতার প্রভাবে আমরা ছিলাম কোনঠাসা। ভোটের মাঠে আমাদের একদিনও ওয়ার্ক করতে দেয়া হয়নি। মাইক কিনে এনে প্রচারণা করতে হয়েছে। তারপরও আটো-মাইক ভাঙচুর করা হয়েছে। পোস্টার লাগাতে দেয়া হয়নি। প্রার্থী বাড়ির বাইরে বের হতে পারেনি। অনেক কষ্টে নির্বাচনের দিন ৯টি কেন্দ্রে এজেন্ট দেয়া হয়েছে। এরা মারপিট খেয়েও কেন্দ্রে টিকে থাকার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বেলা তিনটায় ৩টি কেন্দ্র থেকে আমাদের এজেন্ট বের করে দেয়া হয়। তবে জনগণ নিরব ব্যালটে এসবের জবাব দিয়েছেন।
জানা যায়, ব্যালট ছিনতাই, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, মারপিট, হামলা-ভাঙচুর ও জালভোটের মধ্যদিয়ে গত শনিবার তৃতীয় দফায় ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়। ওইদিন বেলা ১২টার দিকে গৌরীপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাই করে নিয়ে যাবার সময় হাতেনাতে বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভিপি শহীদ, জনি ও সাবেক চেয়ারম্যান দুলালসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু নির্বাচন চলাকালীন সময়েই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করলে পুলিশ তাদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়।
সূত্র জানায়, এসব ঘটনায় শেষ হারানোর আশঙ্কায় ভোট গণণার আগে ক্ষেপে উঠেন বিদ্রোহী প্রার্থী সৈয়দ রফিকের সমর্থকরা। দলে দলে হাজারো সমর্থক জড়ো হয় উপজেলা পরিষদের সামনে। এতে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। এ সময় কন্টোল রুমের বাইরে চলছিল নিরপেক্ষ ফলাফলের দাবিতে স্লোগ্নান। আর ভেতরে চলছিল ভোটের ফলাফল ঘোষণা। অবশেষে ৬১২ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ের হাসি হাসেন আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সৈয়দ রফিকুল ইসলাম।
এদিকে নির্বাচনের দিন বিকেল ৪টা ১৭মিনিটে ভোটের মাঠে আচরনবিধি লঙ্গন করে প্রভাব বিস্তার করায় স্থানীয় সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদের মোবাইল ফোনে কল ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেয়র প্রার্থী সৈয়দ রফিকুল। এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সাংসদ নাজিম। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি তদন্ত মো. ফারুক হোসেন জানান, সংসদ সদস্যের জিডি তদন্তের জন্য আদালতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। অনুমতি পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে এবিষয়ে পৌর মেয়র রফিকুল বলেন, ‘নির্বাচনি আচরণ বিধি অনুযায়ী, সংসদ সদস্য ভোটের সময় থাকতে পারেন না। উনাকে (এমপিকে) বারবার বলার পরেও উনি নির্বাচনের দিনও কেন্দ্রের ভেতর প্রবেশ করেছেন। এ জন্য নির্বাচন অফিসে নিয়ম অনুযায়ী অভিযোগও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।’ এবিষয়ে সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি সংসদ সদস্যের অস্থায়ী কার্যালয়ে ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় কাগজ নিতে গিয়েছিলাম। সেখানে ১০ মিনিটও বসিনি। নির্বাচনে কোনো প্রভাব বিস্তার করিনি।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।