Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশে নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে

সংসদে হারুনুর রশীদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

হারুনুর রশীদ বলেছেন, দেশে নির্বাচন নামে কোনো সংস্কৃতি নেই। নির্বাচন নামে একটি প্রহসন এবং তামাশা হচ্ছে। গতকাল স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে প্রেসিডেন্টের ভাষণের ওপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
হারুনুর রশীদ বলেন, প্রেসিডেন্ট তার ভাষণে বলেছেন- সংসদ হচ্ছে আলাপ-আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বলেছেন, বাংলাদেশে কার্যকরবিরোধী দল নেই। বিরোধীদল ব্যর্থ। প্রেসিডেন্টের ভাষণে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন একটি গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক অবাধ সুষ্ঠু। এই নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক বিরোধ রয়েছে। আড়াইশ’র অধিক যারা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছিল, আদালতে তাদের মামলা বিদ্যমান। এ সংসদের মেয়াদ শেষ হবে; কিন্তু ওই মামলার শুনানি শেষ হবে না।
তিনি বলেন, সত্য বললে মহাজোটের শরীক সবাই অসন্তুষ্ট হবেন। এই নির্বাচনকে নিয়ে রাশেদ খান মেনন কি বলেছিলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি জনগণ ভোট দিতে পারেনি। মাইকে আজান দিয়েও ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের আনা যাবে না। মির্জা কাদের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি। উনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, আজকে যদি বৃহত্তর নোয়াখালীতে নির্বাচন হয় ২/৩টি আসন ছাড়া যারা আজকে সংসদ সদস্য আছেন, তারা পালানোর দরজা খুঁজে পাবেন না। একথাগুলো কি অসত্য?
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন অনিয়মের একটি নির্বাচনের মডেল। মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব থেকে বলেছেন যে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। সহিংসতা এবং নির্বাচন একসাথে চলতে পারে না।
হারুনুর রশীদ বলেন, যশোরের একজন এমপির সাথে ওসির কথোপকথন ভাইরাল হয়েছে। সে সরাসরি ওসিকে বলছে তুমি থানায় বোমা নিক্ষেপ কর এবং তার বিরুদ্ধে মামলা কর। আমি বিস্মিত হই চট্টগ্রামে মেজর সিনহা হত্যার পর যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল হয়েছে। র‌্যাব যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছে এটি উদ্বেগজনক।
তিনি বলেন, এই সংসদের একজন সদস্য হাজী সেলিমের পুত্র ইরফান সেলিমের বাড়ি ঘেরাও করে ওকিটকি, মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করা হলো, তার ফাইনাল তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হচ্ছে। তাহলে র‌্যাবের ডিজি বলেছেন, আমরা যে রিপোর্ট দাখিল করেছি সেটা সত্য। আর পুলিশ দিচ্ছেন ফাইনাল রিপোর্ট এগুলো আইনের শাসনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। মাদক নির্মূলের নামে শত শত নিরপরাধ মানুষকে ফাঁসানো হয়েছে।
হারুন অর রশিদ বলেন, বিদেশে কত লাখ টাকা পাচার হচ্ছে সেই বিষয়গুলো আলোচনার মধ্য নেই। নতুন শিশু জন্মগ্রহণ করলে ৩০ হাজার টাকার অধিক মাথায় ঋণের বোঝা নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। লাখ লাখ টাকা বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে আসছেন, মেগা প্রকল্প বানাচ্ছেন, আর জাতীয় উন্নয়নের নামে জাতীয় লুটপাট হচ্ছে।
বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য বলেন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ধ্বংস। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সরকার যাদের মনোনয়ন দিচ্ছে তারাই সেখানে নির্বাচিত হচ্ছে। দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হচ্ছে। নির্বাচন নামে কোনো সংস্কৃতি নেই। নির্বাচন নামে একটি প্রহসন এবং তামাশা হচ্ছে।
বিএনপি এই নেতা বলেন, নষ্ট রাজনীতি নষ্ট মানুষ তৈরি করে। দুর্বৃত্তায়ন দুর্নীতিবাজ রাজনীতি তৈরি করে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণে জাতীয় মূল সংকট সেটি আজকে আড়াল হয়ে যাচ্ছে। এর কারণে সরকার দায় এড়াতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, চোর ধরে চোর হয়ে যাচ্ছি- বাস্তব কথা বলেছেন। সত্যকে কখনো মিথ্যা দিয়ে ডাকা যাবে না। অনিয়ম দুর্নীতির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনপ্রতিনিধি দুর্নীতির মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করেছেন এর মধ্য দিয়ে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন এবং দুর্নীতিমুক্ত জনপ্রতিনিধি তৈরি করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, সংসদে বিরোধী দল আছে? বিরোধী দল বলতে গেলে রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু তারা বলছেন, ফরমায়েশি বিরোধী দল দিয়ে জাতীয় সংসদ কার্যকর করতে পারবেন না। আজকে যখন আমরা কথা বলি কথার কাউন্টার দেয় বিরোধী দলের চেয়ারে বসে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হচ্ছে- সেখানে বিরোধী দলের কোনো প্রার্থী আছে? বাইরে তো একাকার। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে অন্যান্য জায়গায় মহাজোটের শরীকরা একসাথে ভোট করছে। সত্যিকার অর্থে ১৯৮৮ সালেও জেনারেল এরশাদ সংসদে একটি গৃহপালিত বিরোধী দল তৈরি করেছিল। ২০১৮ সালে মধ্যরাতে ভোট করে যাদের বিরোধী দলের চেয়ারে বসালেন, একই সাথে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করলেন তারা এখন বিরোধী দলের চেয়ারে, এটা হয়? কিভাবে সংসদ কার্যকর হবে।
তিনি বলেন, দুর্নীতির মাত্রা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে? ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বর্তমান মেয়র একজন অপরের বিরুদ্ধে চুনোপুটি অভিযোগ নিয়ে আসছে। দুদক কি এগুলো ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না।
স্পিকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, সংসদ সত্যিকার অর্থে বিরোধী দলের কণ্ঠস্তব্ধ করে না দিয়ে এখানে কাজ করার সুযোগ দেন, তাহলে আমাদের সুযোগ দিতে হবে। কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। জিয়াউর রহমানকে বলবেন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা নয়, যতই চেষ্টা করেন জিয়াউর রহমানকে আল্লাহ যে সম্মান এবং মর্যাদা দিয়েছেন তাকে চেষ্টা করেও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-বিমানবন্দর থেকে নাম মুছে দিয়েও অসম্মানিত করতে পারবেন না। বঙ্গবন্ধুর যে সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন, আমি বা অন্য কেউ চেষ্টা করেও তা বন্ধ করতে পারব না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ