Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কোয়ারেন্টিনে সিলেটের প্রবাসীরা : ঘোষণা ছাড়াই কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ ৩ দিন বৃদ্ধি !

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৭:১৭ পিএম

প্রবাসীরা রেমিটেন্স যোদ্ধা, দেশের অর্থনীতির নিবেদিত শক্তি। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য প্রবাসী সিলেটিরা দেশের অহংকার। দেশের স্বাধীনতায় বহি:বিশ্বের সমর্থন আদায়ে তাদের ইতিহাস গৌরবদীপ্ত। সেই প্রবাসীদের অর্থে সিলেটের জৌলুসও অনন্য। সংটকময় মুর্হুতে তাদের ইতিবাচক সাড়া দেশের অগ্রগতিকে করেছে সুসংহত। কিন্তু সেই প্রবাসীরা চলমান করোনাকালীন সময়ে দেশে এসে পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিয়ে নানা রকম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যুক্তরাজ্য ফেরত প্রবাসীরা। সরকার নির্ধারিত ৭ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের নির্দেশ দিলেও সিলেটে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০ দিন। পূর্ব ঘোষণা ছাড়া কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ ৩ দিন বাড়ানোয় ক্ষোভ বিরাজ প্রবাসীদের মধ্যে। এছাড়া কোয়ারেন্টিনের জন্য নির্ধারিত অনেক হোটেলের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ নোংরা, অস্বাস্থ্যকর। অপ্রস্তুুত এক পরিবেশ-প্রতিবেশের মধ্যে প্রাতিষ্টানিক কোয়ারেন্টিন পালন করছেন তারা। কোয়ারেন্টিনের জন্য প্রস্তুতকৃত অনেক হোটেলগুলো কেবল নামেই সীমাবদ্ধ। সেই সব হোটেল মান-পরিবেশ যাচাই বাচাইয়ে কতটুকু খামখেয়ালী করেছেন কর্তৃপক্ষ, তা প্রবাসীদের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ধরা পড়েছে। এহেন তিক্ত অভিজ্ঞতার ঘটনা চলে যাচ্ছে প্রবাসেও। এতে দেশের প্রতি টান কমছে প্রবাসী প্রজন্মের। দেশ-বিমুখ মানসিকতা তৈরী হচ্ছে তাদের মন মননে। এর মধ্যে দিয়ে সিলেট-লন্ডন সর্ম্পক হুমকির মুখে পড়বে বলে অনেকের অভিমত। এর দায় নেবে কে ? এ প্রশ্ন এখন বিলিয়ন ডলারের।

জালালাবাদ প্রবাসী কল্যান পরিষদের নির্বাহী সদস্য এডভোকেট তাজ উদ্দিন বলেন, নির্ধারিত ৯টি হোটেল বিভিন্ন মানের। কিন্তু সেই হোটেলগুলো অবশ্যই নির্ধারনের পূর্বে সংশ্লিষ্টদের যাচাই-বাচাই করা উচিত ছিল মান সম্পন্ন কি না। বিশেষ করে নির্ধারিত হোটেল মধ্যে অনুরাগ হোটেলের অবস্থা যাচ্ছে তাই। এ হোটেল খ্যাতি এক সময় ছিল। কিন্তু বর্তমান অবস্থা তথৈবচ। যেকারনে এ হোটেলে উঠে চরম দূর্ভোগে পড়ছেন প্রবাসীরা। তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব এ হোটেল বাতিল করা দরকার। তিনি এও বলেন, নির্ধারিত হোটেলগুলোর রুম সহ বিস্তারিত তথ্যচিত্র ্ওয়েব সাইডে বা প্রবাসীদের বুকিং পূর্বে নজরে দেয়া জরুরী ছিল। কর্তৃপক্ষের গাফলাতি বা দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় এহেন বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন প্রবাসীরা। যা মোটেই সুখকর নয়।

গত ২৫ জানুয়ারি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে সিলেটে পৌছেন ১৪৩ জন প্রবাসী। সেই হিসেবে এক সপ্তাহের কোয়ারেন্টিন শেষে গতকাল (সোমবার) সকালে তারা নিজ নিজ বাসা-বাড়িতে চলে যাওয়ার কথা তাদের। সেরকম প্রস্তুতিও ছিল তাদের। কিন্তু গত রবিবার রাতে জানানো হয়, করোনা পরীক্ষার নমুনা প্রদান ও রিপোর্ট আসার পর কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র দেয়া হবে তাদেরকে। কোয়ারেন্টিনের নির্ধারিত এক সপ্তাহের মধ্যে নমুনা সংগ্রহ না করায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন প্রবাসীরা। এ নিয়ে কয়েকটি হোটেলে উত্তেজনাও দেখান তারা। এই অবস্থায় গতকাল সোমবার দুপুর থেকে কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রবাসীদের নমুনা সংগ্রহ শুরু করেন স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন। বিকেলে নমুনা পাঠানো হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে। পরীক্ষায় যাদের রিপোর্ট নেগেটিভ আসবে তারা কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়া পাবেন কাল (বুধবার)। আর কারো রিপোর্ট পজেটিভ আসলে তাকে পাঠানো হবে খাদিমস্থ আইসোলেশন সেন্টারে। মোটামোটি নিশ্চিত করোনা নেগেটিভ আসা প্রবাসীদেরকে এক সপ্তাহের পরিবর্তে দশম দিনে হোটেল থেকে ছাড় পেতে হচ্ছে।

এব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, দেশে ফেরার ৭ দিন পর প্রবাসীদের করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। যাদের রিপোর্ট নেগেটিভ আসবে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে কোয়ারেন্টিন থেকে। ৭দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের সরকারি নির্দেশনা থাকলেও কেন প্রবাসীদের ১০ দিন থাকতে হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. আনিসুর রহমান জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে সপ্তম দিনে। গতকাল সোমবার নমুনা সংগ্রহ ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। কাল (মঙ্গলবার) নমুনা পরীক্ষা হবে এবং বুধবার রিপোর্ট পাওয়ার পর কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রবাসীদের ব্যাপারে নেয়া হবে সিদ্ধান্ত।

এদিকে, কোয়ারেন্টিনের জন্য নির্ধারিত হোটেল অনুরাগে থাকা যুক্তরাজ্য ওয়াহিদুর রহমান সহ অনেক প্রবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোন মানের পরিবেশে হোটেল কোয়ারেন্টিনের জন্য নির্ধারিত করা হলো ? হোটেল এমন নোংরা থাকার পরও কোন রুচিতে তালিকাভূক্ত করা হলো। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ-প্রতিবেশ দেখলে গা শিহরে উঠছে। বাথরুমগুলো নোংরা, অপরিস্কার অপরিচ্ছন্ন। গরম পানির কোন হিটার নেই, দরজায় জং ধরেছে, খাটগুলো নড়েবড়ে। ফ্লোর বিবর্ণ, ময়লা। দেয়ালের রং পড়ে গেছে, অস্বাস্থ্যকরা চিত্রে ভয়াবহতা ফুটে উঠছে। তারা বলেন, হোটেলের সার্ভিস বয়দের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির কোন তোয়াক্তা নেই। তিনি বলেন, প্রবাসীদের সাথে এমন তামাশার মানে হয় না। রুমে বসে যুক্তরাজ্যে রেখে আসা পরিবার সদস্যদের সাথে ভিডিও কলে কথা বলার সময় সেই চিত্র তারাও দেখছে। অকল্পনীয় এ চিত্র দেখে তাজ্জব বনে যাচ্ছে তারা। অনেকে দেশে আসার পরিকল্পনা বাদ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতি কারো জন্য মঙ্গলজনক নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিলেট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ