চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
ড. মুহাম্মদ সিদ্দিক
॥ শেষ কিস্তি ॥
“পরে হে মিথ্যারোপকারী বিভ্রান্তের দল, একান্তই তোমরা খাইবে যাক্কুম গাছ হতে, তদ্বারা তোমরা করবে উদর পূর্ণ।” (৫৬ ছুরা ওয়াক্বি’আহ : ৫১-৫৩ আয়াত)। “আর এই যা কিছু এখনই আমি তোমাকে দেখিয়েছি (মিরাজের মাধ্যমে) একে এবং কুরআনে অভিশপ্ত গাছ (যাক্কুম) কে আমি এদের জন্য একটি ফিতনা বানিয়ে রেখেছি।” (১৭ ছুরা বনি ই¯্রাইল : ৬০ আয়াত)।
ব্যাখ্যাকার বলেন, “আমাদের দেশে যাকে ফণীমনসা বলা হয় ‘যাক্কুম’ বলতে যদি সেই জিনিসকেই বুঝানো হয়ে থাকে তাহলে তা চিবালে যে রস নির্গত হবে তা তেলের তলানির সাথে বেশী সাদৃশ্য পূর্ণ হবে।”
অন্য ব্যাখ্যায় আছে, “যাক্কুম এক ধরনের গাছ। (আরবের) তিহামা এলাকায় এ গাছ দেখা যায়। এর স্বাদ হয় তিতা, গন্ধ বিরক্তিকর এবং ভাঙলে এর মধ্য থেকে এক ধরনের দুধের মতো পদার্থ বের হয় যা গায়ে লাগলে গা ফুলে ওঠে ও ফোস্কা পড়ে।” “অস্বীকারকারীরা কুরআনের নিন্দা ও নবী (সা:) কে বিদ্রƒপ করার একটি নতুন সুযোগ পেয়ে যায়। এর ফলে তারা ঠাট্টা করে বলতে থাকে, নাও এখন নতুন কথা শোনো। জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে নাকি আবার গাছ জন্মাবে।”
“এরূপ ভুল বুঝাবুঝি হওয়া চাই না যে, শয়তানের মাথা কে দেখেছে যে যাক্কুম গাছের ফুলকে তার সাথে তুলনা করা হয়েছে? আসলে এটি একটি কাল্পনিক উপমা। সাধারণভাবে প্রত্যেক ভাষার সাহিত্যে এর সাহায্য গ্রহণ করা হয়ে থাকে। যেমন আমরা একটি মেয়ের পরমা সুন্দরী হবার ধারণা প্রকাশ করার জন্য বলি, বাহ্ মেয়েটি পরীর মতো সুন্দরী। অন্যদিকে কোন মেয়ের চরম কদাকার রূপ বর্ণনা করার জন্য বলি, মেয়েটি যেন একটি পেতœী। কোন ব্যক্তির নূরানী চেহারার বর্ণনা দেবার জন্য বলে থাকি, ঠিক ফেরেশতার মতো চেহারা। আর কেউ যদি অত্যন্ত ভয়াল ভীষণ আকৃতি নিয়ে সামনে আসে তাহলে আমরা বলি, তাকে ঠিক শয়তানের মতো দেখাচ্ছে।...বুঝা যায় যে, জাহান্নামবাসীদের যখন ক্ষুধা-পিপাসায় কাতর হয়ে যেতে থাকবে তখন তাদেরকে হাঁকিয়ে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে যেখানে রয়েছে যাক্কুম গাছ ও টগবগে ফুটন্ত পানির ঝরনা।”
“যাক্কুম গাছকে অভিশপ্ত করার মানে হচ্ছে এই যে, আল্লাহর রহমত থেকে এ গাছটি দূরে থাকবে। অর্থাৎ এটি আল্লাহর রহমতের নিদর্শন নয়। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে লোকদের আহারের সংস্থান করার জন্য এ গাছটি উৎপন্ন করবেন না বরং এটি হবে তাঁর লানতের নিদর্শন। অভিশপ্ত লোকদের জন্য তিনি এটি উৎপন্ন করবেন। তারা ক্ষুধার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে একেই খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করবে। ফলে তাদের কষ্ট আরো বেড়ে যাবে।”
“আল্লাহ নবী (সা:) কে বলতে চান, মানুষের কল্যাণের জন্য আমি তোমাকে মি’রাজের মাধ্যমে বিভিন্ন জিনিস সরাসরি দেখিয়েছি, যাতে তোমাদের মতো সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যক্তির মাধ্যমে এ লোকেরা যথার্থ সত্যের জ্ঞান লাভ করতে পারে এবং এভাবে সতর্ক হয়ে সঠিক পথ অবলম্বন করতে সক্ষম হয়। কিন্তু এরা উল্টো এ ঘটনার ভিত্তিতে তোমাকে বিদ্রƒপ করেছে। আমি তোমার মাধ্যমে এদেরকে এ মর্মে সতর্ক করে দিয়েছি যে, এখানে হারাম খাওয়ার পরিণামে তোমাদের যাক্কুম খেতে বাধ্য করা হবে। কিন্তু তারা এ বক্তব্যকে বিদ্রƒপ করে বলেছে : দেখো, দেখো, এ ব্যক্তির অবস্থা দেখো, একদিকে বলছে, জাহান্নামে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলবে আবার অন্যদিকে খবর দিচ্ছে, সেখানে গাছ জন্মাবে”। ইংরেজ কবি আলেকজা-ার স্মিথ (১৮৩০-১৮৬৭) তার “ড্রিমথরপ : বুকস এন্ড গার্ডেনস” লেখায় বলেন : “যদি তুমি একটা গাছ লাগাও এতে সবসময় থাকবে একটা বিশেষ টান। সারা নরওয়ে ও আমেরিকার বন-জঙ্গলের চেয়ে একে তুমি বেশী ভালবাস। তুমি তো এটা লাগিয়েছ, আর এই কারণই যথেষ্ট সারা জাহানের গাছপালার ভিতর এর বিশেষত্বের।”
এই জন্যই কি আমার পরিবারসহ আমি আমার বাসার পশ্চিম পাশের নারিকেল গাছগুলোর জন্য এখনও কষ্ট পাই? হায়, সে গাছগুলো যেন আমাদের ঘরকে ছুঁয়ে আমাদের পরিবারেরই অংশ ছিল। এখনও মনে হয়, আমাদের কে যেন আর নেই। গাছগুলো রাস্তার কর্তৃপক্ষ কেটে ফেলে। একটা শুকনো খেজুর গাছের সঙ্গে নবী (সা:)-এর কিরূপ সম্পর্ক গড়ে উঠে। যার ফলে মসজিদে নববীর গাছটি নবী (সা:)-এর বিচ্ছেদে তার অনুভূতি প্রকাশ করেছিল। আর এটা অবশ্য নবী (সা:)-এর অলৌকিক কার্যকলাপ ছিল। হাদীসটি রয়েছে বোখারী ও মেশকাতে। গাছের যে প্রাণ আছে তা তো স্যার জগদীশ চন্দ্র বোসসহ বহু বৈজ্ঞানিক প্রমাণ করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।