বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ঈমান ও ইসলাম সঠিকভাবে বুঝতে না পারাই বর্তমান মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সমস্যা। আর সমস্যাটা তৈরি করা হয়েছে খুব সুপরিকল্পিকতভাবে। মুসলিম জনপদগুলোর শিক্ষাব্যবস্থায় শত্রুদের হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকায় মুসলমানদের শিক্ষাব্যবস্থা ইসলাম নির্ভর হয়ে উঠেনি। পাশ্চাত্য শক্তি পরোক্ষভাবে গোটা মুসলিম বিশ্বের ওপর এখনো একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। ভৌগলিকভাবে এক ধরনের কাগজপত্রের স্বাধীনতা মুসলিম জনপদগুলো পেলেও সত্যিকার স্বনির্ভর স্বাধীনতা এখনো পায়নি।
আর এই জন্যই দেখা যায়, মুসলিম জনপদের অনেক বড় বড় শিক্ষিত মানুষ কোরআনের মৌলিক জ্ঞান সম্পর্কে কোনরূপ পরিষ্কার ধারণা রাখে না। হাদীসের যে বিশাল জ্ঞান ভান্ডার রয়েছে সে সম্পর্কে এতই অস্পষ্ট ধারণা পোষণ করে, যে কারণে একজন জ্ঞানী মানুষ নিজেকে মুসলিম ভাবতেও লজ্জা বোধ করে। তারা জাগতিক জ্ঞানকে যতটা বিশ্লেষণ করে করে শেখার চেষ্টা করে, পবিত্র কোরআন-হাদীস বুঝার জন্য তার সামান্যতম চেষ্টাও থাকে না। এ রকম একজন মুসলিম মনে করে, সে কোরআন ও হাদীস সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে। না জানার এই গর্বটাই বর্তমান মুসলিম বিশ্বের বড় সমস্যা। এই না জানা জ্ঞানীদের হাতেই রাষ্ট্রের দায়িত্ব থাকায় তারা মনে করে, তিনি যতটুকু ইসলাম জানেন, দ্বীন মানেন, ততটুকই দ্বীন, ততটুকুই ইসলাম। ফলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় কোরআন ও হাদীস ভালোভাবে বুঝার, শেখার কোনো সুযোগও তারা দেয় না। প্রয়োজনও মনে করে না।
পবিত্র কোরআন এমন এক গভীর বিশ্লেষণধর্মী কিতাব যাকে নিয়ে গবেষণা করতে থাকলে ইহজাগতিক ও পরকালীণ সকল জ্ঞানের মূলসূত্র এখানে দেখতে পাওয়া যায়। ইসলাম যেহেতু নিছকই কোনো ধর্ম নয়, ইসলাম মানবজাতির পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, এহেন কারণে কোরআন মানবজাতির জন্য প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ে করণীয় কি তা ইঙ্গিত করে রেখেছে। জাগতিক উৎকর্ষতা অর্জনের চ‚ড়ান্ত নির্দেশ কোরআনে যেমন এসেছে তেমনি মানবিক গুণাবলির বিকাশেও এসেছে হাজারো নজির, হাজারো নির্দেশ। জাগতিক উন্নতি যতই উৎকর্ষতা লাভ করুক না কেন তা কোরআনের কাছে খুবই তুচ্ছ।
আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. জগতবাসির সামনে এমন এক বিস্ময়কর কিতাব রেখে গেছেন, যা সামনে রাখলে জগতের সবকিছুকে সবসময়ই তুচ্ছ মনে হবে। সৌরজগতের এমনসব বিস্ময়কর তথ্য এখানে রয়েছে যা কিয়ামত অবধি যত বিজ্ঞানী আসবে, তাদের যত আবিষ্কার প্রকাশ পাবে, সবকিছুই তুচ্ছ মনে হবে এই কোরআনের সামনে। যেহেতু এই কিতাব এমন এক মহাপ্রতাপশালি স্রষ্টার পক্ষ থেকে যেখানে কোনো ত্রæটি নেই, নেই কোনোপ্রকার জ্ঞানগত দ্বন্ধ। পবিত্র কোরআনে আধ্যাত্মিকতার চ‚ড়ান্তরূপ যেমন নির্দেশ করেছে, তেমনি গোটা জগতের সকল কিছু ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রাতি বিষয়ও এখানে সন্নিবেশিত হয়েছে। আকাশ-যমিন থেকে নিয়ে পাহাড়, পর্বত, খাল-বিল, নদী-নালা, পোকা-মাকড় সবকিছুর উদারহণ এখানে রয়েছে। প্রতিটি সৃষ্টির নিগুঢ় রহস্য এখানে বিশ্লেষায়িত হয়েছে।
মানুষ সৃষ্টির সুগভীর রহস্য এখানে যেমন বিশ্লেষিত হয়েছে, তেমনি অতীতের অনেক ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মানবজাতিকে সতর্কতার জালে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সুরা হুদ এর শেষ দিকে সুস্পষ্টভাবে এটা বলে দেয়া হয়েছে যে, কোনো কল্যাণ যদি আসে, সেটা তাঁর পক্ষ থেকেই, আর যদি কোনো অকল্যাণ আসে, সেটাও তাঁর পক্ষ থেকে। এর হেরফের করার কোনো শক্তি কারো নেই।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বলে দেয়া হয়েছে, হে নবী! আপনি বলে দিন, সত্য আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে। এখন যে এটা গ্রহণ করবে, সেটা তার নিজের ভালোর জন্যই করবে, আর যে এটা প্রত্যাখ্যান করবে, সে তার অকল্যাণ নিজেই ডেকে আনবে। এজন্য কাউকে চাপ সৃষ্টি করার দায়িত্ব আল্লাহর রাসূল সা. এর নয়। হে নবী! আপনার ওপরে যা অবতীর্ণ হয়েছে আপনি এটাকে দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরে রেখে অনুশীলন করে যেতে থাকুন। আর এ কারণে যদি কোনো চাপ আসে, কষ্ট আসে, তাহলে ধৈর্যধারণ করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা মহাপরাক্রমশীল ও সর্বোত্তম মিমাংসাকারী। কোরআন ও হাদীসই জ্ঞানের প্রকৃত উৎস। যতদিন না মুসলিম জনপদে জ্ঞানের উৎস হিসেবে কোরআন ও হাদীসকে প্রতিষ্ঠিত না করবে ততদিন মুমিন হতাশ হতে থাকবে, বিপদগ্রস্ত হবে, দিশা হারাবে। নিজেদের অসহায় মনে করবে। আর যখনই মুমিন তাঁর আসল উৎসে ফিরে আসবে, ফিরে আসবে মুমিনের ঘরে ঘরে সুখ ও সমৃদ্ধি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।