পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বেশি দিন আগের কথা নয়। মৌসুমের সবজি সারা বছরই পাওয়া যায়। আর অসংখ্য সবজি থাকলেও তালিকায় ক্যাপসিকাম শব্দটি কখনো কেউই চিন্তা করেননি। যতই দিন যাচ্ছে অভিজাত সবজির তালিকায় পাকাপোক্ত জায়গা করে নিচ্ছে ক্যাপসিকাম। এর আরেকটি নাম হচ্ছে মিষ্টি মরিচ।
গ্রামের মাঠে ফলানো ক্যাপসিকাম শহরে এসে প্রায় সবার বাসা-বাড়ি ও হোটেল রের্স্তোায় জায়গা করে নিয়েছে। বর্তমানে শহর ছাড়িয়ে গ্রামবাসীদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ক্যাপসিকাম। জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় থেকে নৃবিজ্ঞানে ডিগ্রি নিয়ে নেওয়াজ শরিফ বেকার ছিলেন। চাকরির পিছনে না ছুটে চাষের ঝুঁকে পড়েন। এখন তিনিই ক্যাপসিকাম চাষের মডেল।
ঝিনাইদহ উপজেলার শৈলকুপা পৌর এলাকার পাঠানপাড়া গ্রামের ছেলে নেওয়াজ শরিফ। জন্মের পর প্রত্যন্তপল্লীর যে মাঠে ঘাটে ছুটে বড় হয়েছেন সেখানেই বুনেছেন আগামীর স্বপ্ন। নিজের উপজেলা ও জেলার সীমানা ছাড়িয়ে তিনি এখন একজন আদর্শ চাষি। শিক্ষায় সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে মাটিকে আঁকড়ে ধরে স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা শুনুন তার মুখ থেকে।
শৈলকুপা কৃষি অফিসের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন তুহিনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগই সামনের দিকে অগ্রসরের পথকে অনেকটা সহজ করে দেয়। কর্মকর্তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে নিজের গ্রামের মাঠে চাষ শুরু করেন ক্যাপসিকামের। সবুজ রঙের ক্যাপসিকাম ক্ষেত নিয়ে স্থানীয়দের আগ্রহের শেষ নেই। বাস্তবতার স্বপ্ন রাঙাতে পৌর এলাকার পাঠানপাড়া গ্রামে দৃষ্টিনন্দন ৪০ শতাংশ জমিতে দোল খাচ্ছে ক্যাপসিকামের আবাদ।
সরেজমিন ক্যাপসিকামের চাষ দেখার পর নেওয়াজ শরিফ বলেন, করোনাকালীন মহামারীর মধ্যে অর্থ সঙ্কট পিছু নেয়। অন্যদিকে বেকারত্ব মনকে বিষণœ করে রাখে। এক পর্যায়ে বন্ধু রাশেদুল আলম বনির সাথে আলোচনা করে আদর্শ চাষি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
প্রথমে শিক্ষিত ছেলের চাকরি না করার কোনো যুক্তি খুঁজে পাননি বাবা শরিফুল ইসলাম। লেখাপাড়া শেষে চাকরি করবে এমন স্বপ্ন বাবার কাছে ক্রমশ ফিকে হতে শুরু করে। প্রথম দিকে রাজি না হলেও সন্তানের স্বপ্নের কথা শুনে তা পূরণে রাজি হয়ে পাঁচ হাজার চারা লাগানোর উপযোগি জমি তৈরিতে সাহায্য করেন।
বিজ্ঞানভিত্তিক একটি উন্নত প্রজাতির কৃষি খামার গড়ে তোলার লক্ষ্যেই হাসছে ক্যাপসিকাম। আসছে ফেব্রæয়ারি মার্চের মধ্যেই জমি থেকে সম্পূর্ণ ক্যাপসিকাম সংগ্রহ করা যাবে। কমপক্ষে পাঁচ টন ফল উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। স্বাভাবিক বাজার মূল্য সাড়ে তিন লাখ টাকা।
মিষ্টি মরিচ থেকে চার মাসে বিশাল অঙ্কের টার্গেটকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে আদর্শ-সফল চাষি। পরিচ্ছন্ন পরিপাটি ক্ষেতের চারদিকে বেষ্ঠনী ছাড়াও রয়েছে সেচ ব্যবস্থা ও পাহারাদার। মেধা শ্রম ও সাধনার সমন্বয় ঘটিয়ে নেওয়াজ শরিফ অন্যান্য শিক্ষিত বেকার যুবকদের কাছে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম মডেল।
নেওয়াজ শরিফের বিশ্বাস শুধু চাকরিতে নয় কৃষিতেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। এ জন্য যথার্থভাবে লেখাপড়াকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি খামার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে তার নিরন্তর যাত্রা শুরু হয়েছে। ক্যাপসিকাম দেশীয় প্রচলিত সবজি না হলেও বর্তমানে এর চাষ প্রসারিত হচ্ছে। এই মিষ্টি মরিচ বা ক্যাপসিকাম রফতানির সম্ভাবনাও প্রচুর। দেশে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারা বিশ্বে টমেটোর পরেই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে ক্যাপসিকাম। প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ এই সবজি খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী।
শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আকরাম হোসেন জানান, অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ক্যাপসিকাম চাষের উপযোগি সময়। পাঠানপাড়া গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবক নেওয়াজ শরিফের ক্ষেতটি নিয়মিত দেখভাল করা হয়। এখান থেকে অনেক যুবক অনুপ্রানিত হবে মনে মনে করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।