Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মহামারি মোকাবিলার সফল উদাহরণ চীনা অর্থনীতি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনার প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ অ্যান্ড ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষকরা ‘মহামারী অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে, জনস্বাস্থ্যে হস্তক্ষেপকে নয়’ শিরোনামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন। আমেরিকাতে ১৯১৮ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীর প্রতিক্রিয়া যাচাই করে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে, যে শহরগুলি প্রাথমিক পর্যায়ে ও বলপূর্বক বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল, তাদের অর্থনৈতিক ফলাফল সর্বোত্তম ছিল।

যারা মহামারীর বিধি-নিষেধ মানতে বিলম্ব করেছিল, তাদের বিনিয়োগগুলি আটকে গিয়েছিল এবং ব্যবসা-বানিজ্য মন্দায় পতিত হয়েছিল। বিপরীতে, যে শহরগুলি কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল, জনস্বাস্থ্যের ক্ষয়ক্ষতি সীমাবদ্ধ করেছিল, তারা দ্রুত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিল। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত চীনের জিডিপির পরিসংখ্যানগুলি বলছে যে, ১৯১৮ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা গবেষকদের তথ্যগুলি যথার্থ ছিল।

চীন গত বছরে যে কোনও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিবন্ধিত করা মুষ্টিমেয় দেশগুলির মধ্যে একটি ছিল। দেশটির জিডিপি পুরো ২০২০ সালে বার্ষিক ২.৩ শতাংশ হারে প্রসারিত হয়েছিল। ২০২০ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকের প্রবৃদ্ধি ৬.৫ শতাংশ পৌছে, যা প্রাক করোনার চেয়েও দ্রত গতির। বছরের শুরুতে করোনা ভ্যাকসিন সরবরাহ করার পাশাপাশি, ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত হতে পারে। গত ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে যখন অন্যান্য দেশগুলি স্বাস্থ্য সঙ্কটের মাত্রা কমিয়ে আনতে লড়াই করছিল, চীন তখন তার কর্মীদের বিষয়ে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করে কারখানার দরজা পুনরায় খুলে দিয়েছিল। এর প্রায় ছয় মাস বছর দেশটি স্কুলগুলি সম্পূর্ণরূপে খুলে দেয়। চীনের কলকারখানাগুলি মহামারী বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতির উন্নতি থেকে উপকৃত হয়েছে। ২০২০ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে চীন ২ শ’ ২৪ বিলিয়ন মাস্ক রফতানি করেছে। লোকেরা ঘরে বসে বেশি সময় ব্যয় করায় দেশটির উৎপাদন সংস্থাগুলি ব্যাপক চাহিদা অনুযায়ী টিভি এবং সোফার বড় রফতানিকারক ছিল। ফলস্বরূপ, চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত গত বছর ৫ শ’ ৩৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৯ থেকে ২৭ শতাংশ বেশি।

তবে চীনের অভ্যন্তরীণ চাহিদা স্বল্পতা দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ধীরগতিকে নির্দেশ করে। অনেক সমৃদ্ধ দেশ চাকরি হারিয়েছে এমন লোকদের জন্য মহামারীর সময়ে নাটকীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা বাড়িয়ে দিয়েছে। এক্ষেত্রে চীন তার উদ্দীপনা ব্যয়কে কেন্দ্রীভূত করে নতুন অবকাঠামো প্রকল্পে এবং সংস্থাগুলিকে সস্তা ঋণ দিতে কাজে লাগিয়েছে, এই আশায় যে, তারা এর বিনিময়ে শ্রমিক নিয়োগ করবে এবং মজুরিতে সমর্থন দেবে। বছরের শেষের দিকে চীন গর্ব করতে পারে যে, শহরগুলিতে বেকারত্বের হার ২০১৯ এর শেষের মতো ৫.২ শতাংশে নেমেছে। গত বছর শহরগুলিতে প্রকৃত আয় বেড়েছে মাত্র ১.২ শতাংশ, যা দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধির তুলনায় অর্ধেক গতির। চীনের জন প্রতি সামগ্রিক ঋণ থেকে জিডিপির অনুপাত গত বছর প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়ে প্রায় ২৯০ শতাংশে এ পৌঁছেছে। এবছর, ঋণ হ্রাসের সাথে সাথে, ঋণের অনুপাতও স্থিতিশীল হয়ে আসতে পারে।

তারপরেও, চীনের কাছে করোনা নির্মূল করার সিদ্ধান্ত তার ২০২০ সালের অর্থনৈতিক ভাল-মন্দের থেকে খুব কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল। উত্তর প্রদেশের হেবেইতে বর্তমানে করোনার একটি ছোট্ট প্রাদুর্ভাব চলছে। এবং দেশটি গণহারে দ্রুত পরীক্ষা করা, স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশনগুলির মাধ্যমে বিস্তারিত সংস্পর্শ অনুসন্ধান, অঞ্চলগুলির মধ্যে ভ্রমণের সীমাবদ্ধতা, এবং যেখানেই সংক্রমণ ধরা পড়ছে সেখানেই কঠোর কোয়ারানটাইনের মাধ্যমে আবারো করোনা প্রতিরোধে তার কঠোরতা দেখিয়েছে দিয়েছে। অন্যান্য দেশ চীনকে স্বৈরাচারের তকমা দিয়ে দেশটির এজাতীয় কৌশল অবলম্বন করতে লজ্জা পায়। তবে, চীনের করোনা সংক্রান্ত সর্বোচ্চ কঠোরতা এই মহামারীর সময়ে এখন সেরা অনুশীলন হিসাবে স্বীকৃত হওয়া উচিত। মহামারীরর বিস্তার বন্ধ করার চেষ্টা করাই গুরুতর প্রথম পদক্ষেপ, যা অনুসরণ করে অর্থনৈতিক সহ বাকি সমস্ত ফলাফলগুলি ঘটে। সূত্র : দ্য ইকোনোমিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ