Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্রিটেনের ‘অবক্ষয়’ নিয়ে হতাশা বাড়ছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২১, ৭:৫৪ পিএম

ব্রেক্সিট পরবর্তী ব্রিটেনে ডিক্লিনিজম বা অবক্ষয় নিয়ে হতাশা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। দ্য ইকোনমিস্টের পক্ষে ইপসোস মোরি পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ৬৫ শতাংশ ব্রিটিশরা মনে করে যে, দেশটির ‘আবক্ষয়’ হচ্ছে। আবার ৫৭ শতাংশ ব্রিটিশ মনে করেন যে, আজকের যুবকরা তাদের পিতামাতার চেয়ে খারাপ জীবন কাটাবে। তবে তাদের মধ্যে কিছু আশাবাদীও আছেন। ব্রেক্সিটপন্থীদের (৫৪ শতাংশ) থেকে বিরোধীরাই (৭৬ শতাংশ) বেশি হতাশা প্রকাশ করেছেন। ক্ষমতাসীন টরি দলের সমর্থকদের থেকে লেবার পার্টির সমর্থকরা বেশি হতাশ হয়ে পড়েছেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ব্রিটেনের রাজনীতির সবচেয়ে শক্তিশালী ধারণা ছিল এই ডিক্লিনিজম (অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অধঃপতন হচ্ছে বলে বিশ্বাস)। এটি থেকে বাঁচার প্রচেষ্টা বাম ও ডানপন্থীদের একীভূত করে ফেলেছিল। এটি ১৯৬০ এর দশকে হ্যারল্ড উইলসনের ‘প্রযুক্তির শুভ্র তাপ’ এবং ৮০ এর দশকে মার্গারেট থ্যাচারের ‘মুক্ত-বাজার বিপ্লব’ পরিচালিত করেছিল। সামরিক ইতিহাসবিদ করেলি বার্নেট মনে করতেন, উনিশ শতকে অভিজাতদের নমনীয় মনোভাব থেকেই সমস্যাটি শুরু হয়েছিল। থ্যাচারও এই ধারণা থেকে প্রভাবিত হয়েছিলেন। ব্রিটেনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যান্থনি সাম্পসন বিজ্ঞানমনস্ক প্রযুক্তিবিদদের পরিবর্তে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব অল্প-শিক্ষিত নেতাদের হাতে থাকাটাই এর জন্য দায়ী করেন। বোরিস জনসনের বিদায়ী প্রধান উপদেষ্টা ডমিনিক কামিংসও ৫০ বছর পরে সেই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছিলেন।

ডিক্লিনিজম থেকেই ইতালি, ফ্রান্স এবং জার্মানির অর্থনীতির দ্রুত পুনরুদ্ধার দেখে ব্রিটে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়। বিশ্লেষক কন অ‘নেইলের মতে, ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সম্প্রদায়ের বাইরে, ব্রিটেন একটি বিচ্ছিন্ন এবং অপ্রাসঙ্গিক ‘বৃহত্তর সুইডেন’ এ পরিণত হবে বলে। সেই ডিক্লিনিজম আবার ব্রিটেনকে ইইউ থেকে বেরিয়ে আসতে প্ররোচিত করে। ব্রেক্সিটপন্থীরা মনে করেছিলেন ইউরোপ থেকে বেরিয়ে আসলে তাদের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। ব্রেক্সিটের পরে এখন, ইউরোপীয়পন্থীরা আবার হতাশাগ্রস্থ। তবে এর পেছনে কারণও আছে। ব্রেক্সিট ব্রিটেনের দীর্ঘমেয়াদে বৃদ্ধির সম্ভাবনাগুলো হ্রাস করে, ব্রাসেলস এবং ওয়াশিংটনে এর প্রভাব হ্রাস করে এবং যুক্তরাজ্যের কাঠামোতে চাপ দেয়। ‘ইরাসমুস’ এর মতো শিক্ষার্থী বিনিময় কর্মসূচী ত্যাগ করার মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে আরও দুর্বল করেছে। এ বিষয়ে ব্রেক্সিটপন্থী টোরি দলের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী মাইকেল হেলসেটিন বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না কোনটা আগে হবে, আমরা স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে ফেলব না, স্কটল্যান্ডকে হারানোর আগে আমরা আবার ইইউতে যোগদান করব?’ ব্রেক্সিট একটি বিপর্যয় বলে তিনি মনে করেন।

জনসন জনপ্রিয় কারণ তিনি ডিক্লিনিজম-বিরোধী। ‘ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যারা বাজি ধরেছিল তারা তাদের কাপড় হারাতে চলেছে,’ তিনি দায়িত্ব নেয়ার পরে ডাউনিং স্ট্রিটের বসে ঘোষণা করেছিলেন। তিনি ব্রেক্সিটের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন। তিনি পরে বলেছিলেন, যারা মনে করে যে ‘জাতি হিসাবে আমাদের সময় অতিবাহিত হয়েছে, আমাদের মধ্যস্থতা এবং ব্যবস্থাপনার অবনতিতে সন্তুষ্ট থাকা উচিত’, আমাদের উচিত তাদের প্রত্যাখ্যান করা। নতুন বছরে ব্রিটিশদের জন্য আশা করার মতোও অনেক কিছু রয়েছে। করোনার ভ্যাকসিন দেয়ার ক্ষেত্রে ব্রিটেনই হচ্ছে প্রথম দেশ। লকডাইন উঠে গেলে অর্থনীতিরও উন্নতি হতে পারে। এই বছরের শেষের দিকে জি ৭ সভা এবং নভেম্বরে কোপ২৬ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করছে ব্রিটেন। এর মাধ্যমে তারা সঙ্কট কাটিয়ে উঠার বার্তা দিতে পারে। সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাজ্য


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ