পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চীনা অর্থায়নে প্রকল্পগুলোতে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করা হচ্ছে। এতে বিনা দরপত্রে বিভিন্ন প্রকল্পে সরাসরি চীনা ঠিকাদার (ডিপিএম) নিয়োগ দেয়া যাবে। চীনা ঠিকাদার নিয়োগে এরই মধ্যে একটি খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। সম্প্রতি এ বিষয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত গ্রহণের জন্য চিঠি পাঠিয়েছে ইআরডি। চিঠিতে ১০ জানুয়ারির মধ্যে মতামত পাঠাতে বলা হয়েছে।
২০১৬ সালের অক্টোবরে ঢাকা সফরে আসেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সে সময় চীনের সঙ্গে সাড়ে ২৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদানে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে মাত্র ছয়টি প্রকল্পে ঋণ প্রদান শুরু করেছে চীন। বাকি প্রকল্পগুলো পৌনে চার বছর ঝুলে আছে। মূলত ঠিকাদার নিয়োগ জটিলতায় ঝুলে আছে প্রকল্পগুলো। প্রকল্পগুলো চালু করতেই নতুন নীতিমালা করা হচ্ছে, যাতে বাংলাদেশে চীনা প্রকল্পগুলোতে গতির সঞ্চার হবে।
ইআরডির চিঠিতে বলা হয়েছে, চীনা সরকারি অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীন সরকারের নতুন নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে হবে। গত ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় সীমিত দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। তবে উভয় দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যেন অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা বা অন্যান্য বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে সীমিত পর্যায়ে প্রয়োজনে ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
এ বিবেচনায় বিশেষ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন গ্রহণপূর্বক সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে। সীমিত দরপত্রের ক্ষেত্রে অনুসৃতব্য নীতিমালা ও পদ্ধতির জন্য গত ২০১৭ সালের ৯ মার্চ পরিপত্র করা হলেও সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির জন্য অনুসৃতব্য কোনো স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতি প্রণয়ন করা হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীনা সরকারি অর্থায়নে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাস্তবায়িতব্য প্রকল্পের ক্ষেত্রে ঠিকাদার নির্বাচন ও প্রকল্পের মূল্য নির্ধারণে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ভ্যালু ফর মানি নিশ্চিতকল্পে বাংলাদেশে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে।
খসড়া নীতিমালায় সরাসরি ঠিকাদার নিয়োগের আগে বেশকিছু ধাপ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো, প্রকল্প চিহ্নিতকরণ ও সম্ভাব্যতা জরিপ, পরিকল্পনা কমিশন অথবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ কর্তৃক পিডিপিপি (প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) অনুমোদন, ইআরডির মাধ্যমে বৈদেশিক সহায়তা অনুসন্ধান কমিটি কর্তৃক সম্ভাব্য উন্নয়ন সহযোগী নির্বাচন, চীন সরকারের কাছে প্রস্তাব প্রেরণের লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন গ্রহণ, চীন সরকারের কাছে সম্ভাব্যতা জরিপ প্রতিবেদন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টসহ প্রাথমিক ঋণ আবেদনপত্র প্রেরণ, চীন সরকারের কাছ থেকে সম্মতিপত্র প্রাপ্তি এবং বাংলাদেশ পক্ষ কর্তৃক চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের জন্য ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস কর্তৃক পত্র প্রেরণ।
খসড়া নীতিমালায় ঠিকাদার নির্বাচনের কয়েকটি ধাপও তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: ১. সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অথবা বিভাগ ও উদ্যোগী সংস্থা কমপক্ষে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হতে আগ্রহপত্র সংগ্রহ করবে। তবে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এ সংখ্যা শিথিল করতে পারবে। ২. দাখিলকৃত আগ্রহপত্র পর্যালোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার কারিগরিভাবে দক্ষ প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধি, ইআরডির প্রতিনিধি, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের প্রতিনিধি এবং কারিগরিভাবে দক্ষ অন্যান্য প্রতিনিধির (বুয়েট, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য) সমন্বয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন হবে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানসমূহ উক্ত কমিটির সম্মুখে তাদের আগ্রহপত্র ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয় উপস্থাপন করবে।
এদিকে বিশেষজ্ঞ কমিটি আগ্রহপত্র দাখিলকৃত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তাব, অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা, কারিগরি দক্ষতা ইত্যাদি পর্যালোচনা করবে। কমিটি প্রয়োজনবোধে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ দাখিলের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করবে। বিশেষজ্ঞ কমিটি আগ্রহপত্র ও অন্যান্য কাগজপত্র পর্যালোচনা ও যাচাই-বাছাইপূর্বক একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মনোনয়ন সুপারিশ করবে। আর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ওই প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগের জন্য অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন গ্রহণ করবে। এরপর নির্বাচিত ঠিকাদারের নাম চীন সরকারের কাছে পাঠানোর জন্য ইআরডিতে প্রেরণ করবে। আর ইআরডি তা চীন সরকারের কাছে প্রেরণ করবে। চীনা কর্তৃপক্ষ সম্মতি দিলে ও বাণিজ্যিক চুক্তি নেগোসিয়েশনের জন্য অনুরোধ করবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ বাণিজ্যিক চুক্তি নেগোসিয়েশনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রতিনিধি অথবা বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করবে। ওই কমিটি প্রস্তাবিত মূল্য যাচাইকরণের জন্য ও নেগোসিয়েশনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ অথবা সংস্থা পরামর্শক নিয়োগ করবে। নেগোসিয়েশন শেষে চুক্তি অনুমোদনের পর তার ভিত্তিতে প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) অনুমোদন, ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন গ্রহণ, চুক্তি সই এবং পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ ও ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরের সব দলিলপত্র ইআরডিতে প্রেরণ করবে। উল্লিখিত সব প্রক্রিয়া শেষে চীনা অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নে ইআরডি প্রচলিত নিয়মে অর্থায়ন প্রক্রিয়া সম্পাদনে চীন সরকার ও অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের (চায়না এক্সিম ব্যাংক) সঙ্গে ঋণ চুক্তি সই করবে।
জানা গেছে, চীনের ঋণ দুই ধরনের হয়ে থাকে। এগুলো হলো-গভর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন (জিসিএল) ও প্রেফারেন্সিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি)। কোনো প্রকল্পে ঋণের পরিমাণ ৩০ কোটি ডলারের কম হলে তা হবে জিসিএল। আর ঋণের পরিমাণ ৩০ কোটি ডলারের বেশি হলে পিবিসি হিসেবে ঋণ দেবে চীন। আর পিবিসির ক্ষেত্রে চুক্তিমূল্যের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ বাংলাদেশকে অর্থায়ন করতে হয়।
ইআরডির সূত্রমতে, চীনের ঋণে ২ শতাংশ সুদহার ছাড়াও দশমিক ২০ শতাংশ কমিটমেন্ট চার্জ ও দশমিক ২০ শতাংশ ম্যানেজমেন্ট চার্জ দিতে হবে। ঋণ ছাড় করতে যত দেরি হবে কমিটমেন্ট ও ম্যানেজমেন্ট চার্জ তত বাড়তে থাকবে। আর ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরে পরিশোধ করতে হবে পুরো ঋণ। এছাড়া ঋণের কিছু অংশ হবে বাণিজ্যিকভিত্তিক। এ ঋণের সুদের হার হবে ৪ শতাংশ ও পরিশোধ করতে হবে ১৫ বছরে। এর বাইরে জিসিএল ও পিবিসি প্রক্রিয়াকরণের শর্তও রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জিসিএল বা পিবিসির জন্য চীন সরকার একটা রিজার্ভ তৈরি করবে। এটি পাঁচ বছরের বেশি স্থায়ী হবে না। অর্থাৎ পাঁচ বছরের মধ্যে ঋণ ব্যবহার করতে হবে।
সূত্র জানায়, জিসিএলের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ঋণ চুক্তির আগে চীনের এক্সিম ব্যাংক ও বাংলাদেশের ইআরডির মধ্যে একটি কাঠামো চুক্তি সই হবে, যা তিন বছর বিদ্যমান থাকবে। এর মধ্যে প্রকল্পের দরপ্রক্রিয়া ও ঋণ চুক্তি সই করতে হবে। তবে পিবিসিএ’র ক্ষেত্রে এ ধরনের ধরা-বাধা কোনো নিয়ম থাকবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।