পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ছোট বেলা থেকে রাগী স্বভাবের রায়হান উদ্দিন রাকিব (২৩)। পড়ালেখা করার কোন ইচ্ছে তার ছিল না। শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ পরিবার তাকে সেলাই ও ইলেক্ট্রিক শেখার কাজে দিয়ে দেয়। পাড়ার খারাপ ছেলেদের সাথে মিশে ১৭ বছর বয়সে প্রথম মাদকে আসক্ত হয়। দুই বছর অসুস্থ থাকার পর সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেও পরে ২৩ বছর বয়সে আবার মাদকের নেশা তাকে আচ্ছন্ন করে। তার বেপরোয়া মারমুখী আচরণ পরিবারের সদস্যদের বিষিয়ে তোলে। পরে বাধ্য হয়ে তাকে আবদ্ধ করা হয় ফেনী মাদক নিরাময় কেন্দ্রে।
একই পরিণতি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতি এলাকার বিদেশ ফেরত মোর্শেদ আলমের (৪০)। বিদেশে থাকা অবস্থায় মাদকের নীল ছোবলে আসক্ত হন। দেশে আসার পর তার মাদকের আসক্তি বেড়ে যায়। সে টাকার জন্য নিজের বউকে মেরে রক্তাক্ত করে। স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে তার স্ত্রী বাপের বাড়ি চলে যায়। পরিবারের সদস্যদের ঘর থেকে বের করে তালা দিয়ে রাখেন। নেশার টাকা না পেয়ে মাকে মারধর করে বের করে দেয়। নিজ বাসা থাকলেও আত্মীয় স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছে তার মা।
এছাড়াও সর্বনাশা মাদকের নেশায় বুঁদ শহরের মাস্টার পাড়া নবী হাজারীর ছেলে নুরুল আফচার সোহেল(৩২), সোনাগাজীর সোহেল কামাল (২৭), ফুলগাজীর সুনিল চন্দ্র বণিকের ছেলে সুবাস চন্দ্র বণিক (৪৫), ও দাগনভ‚ঞার হাজী নুর নবীর ছেলে নুুরুল আফচার (২২)সহ হাজারো তরুণ। তাদের চিকিৎসা চলছে মাদক নিরাময় পুনর্বাসন কেন্দ্রে। কিন্তু তাদের পরিবারের কান্না থামছেই না। সমাজে তারা লোক লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছেনা। সমাজে মাদকাসক্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বনাশা মাদকনেশা গ্রাস করে ফেলেছে তরুণ-তরুণী,কিশোর ও যুবকদের। হত্যা, ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাই প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সমাজ ব্যবস্থার নৈতিক অবক্ষয় এবং গাড়িয়ানদের অবহেলা এ জন্য দায়ী।
স্নায়ু ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, মাদক মানবদেহের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ মদ, ফেনসিডিল ও ইয়াবা সেবন করার কারণে স্বরণ শক্তি হ্রাস পায়। যৌন শক্তি কমে যায়, দেখা দেয় মানসিক সমস্যা। অস্বাভাবিক আচরণ করা। হ্যালোসিনেসন ও সিজোফ্রেনিয়া রোগে ভুগতে হয়। এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে মাদকাসক্ত রোগী ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
ফেনীর সচেতন মহল বলেন, মাদকের বড় ভাই এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এসব কালচারে জড়িয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছেন। এ জন্য সকলে মাদকবিরোধী সামাজিক প্রতিরোধে আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। নাম প্রকাশে অনিশ্চুক ফেনী সদর উপজেলা, ফুলগাজী,পরশুরাম ও ছাগলানাইয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা জানান, দিনরাত মাদক কারবারীদের আনাঘোনা চলছে এসব পয়েন্টে। মাদকের বিস্তার এতই বেশি যে, অভিযানের পর কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকলেও পরে আবার অন্য পন্থায় মাদক কারবারীরা সক্রিয় হয়ে উঠছেন। বর্তমান সময়ে ফেনী জেলা, মাদক ও ইয়াবা কারবারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। মিয়ানমার থেকে আসছে ইয়াবার বড় চালান। পাশের দেশ ভারত থেকে আসছে ফেনসিডিল, গাঁজাসহ হরেক রকমের মাদক। এসব চালান পারাপারের একমাত্র মিডেল রুট হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল এলাকা। গত দুয়েক বছর আগে ফেনীতে অনেক মাদক কারবারী ব্যবসায়ীক দন্ধে কথিত বন্দুকযুদ্ধ ও ক্রসফায়ারে মারা যায়। তবুও থামছে না মাদকের কারবার। আড়ালে থেকে যাচ্ছে গড়ফাদররা।
এদিকে জেলা আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনী র্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর তাদের অব্যাহত মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করেও নিয়ন্ত্রণ করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ ইনকিলাবকে বলেন, ফেনীতে মাদকের আগ্রাসন বেশি। সীমান্তবর্তী ৪ টি উপজেলায় আমাদের টিম দিনরাত এক করে ওইসব এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছেন। কারণ ভারতের সীমান্ত এলাকা দিয়ে মাদকের আলামত গুলো বেশি ডুকছে। তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ে প্রতি মাসে ২শ’ থেকে ৩শ’ অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে সীমান্তবর্তী একটি জেলায় সীমিত জনবল নিয়ে আমাদের কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। জেলার ৬ টি উপজেলায় ১টি টিম কাজ করছে। এক্ষেত্রে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনার জন্য আরো জনবল সক্ষমতা বাড়ানো উচিত বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে ফেনী মাদক নিরাময় কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক জালাল উদ্দিন বলেন, ফেনীতে বেসরকারিভাবে মাদক নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে ৫টি। এসব নিরাময় কেন্দ্র গুলোতে ফেনীর বাহিরের জেলা উপজেলা থেকেও মাদকাসক্ত রোগী আসে। ফেনীর ৫ টি নিরাময় কেন্দ্রে প্রায় দেড়শ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্বাবধানে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। ফেনী গোয়েন্দা পুলিশের ওসি এএনএম নুরুজ্জামান বলেন, জেলায় মাদকের বিস্তার নির্মূল করার লক্ষে পুলিশ সবসময় আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে মাদক উদ্ধার ও ব্যবসায়ীদের আটক করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।