Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মাদকে নীল কুমিল্লা

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

কুমিল্লার ধর্মপুর রেলওয়ে আর শাসনগাছার অবস্থান কাছাকাছি। দুটো এলাকাই মাদক জোন হিসেবে পরিচিত। এ জোনে মাদক বিষে নীল হয়ে পড়েছে এক বাবার স্বপ্ন। শুধু সন্তান নয়, মাদকের করাল গ্রাসে বিপন্ন তার গোটা সংসার। বিষয়টি নিয়ে জানতে চইলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে জানান, ‘এসএসসি, এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া আমার সন্তানটি মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। এ খবরে পাড়া প্রতিবেশিও প্রায় আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকায়। লজ্জায় কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছি। কিন্তু অন্য সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে তাও পারছি না। নেশার টাকার জন্য পরিবারের সবাইকে নির্যাতন সইতে হয়েছে। বর্তমানে তাকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করেছি। আল্লাহ কাছে প্রতিনিয়ত প্রার্থনা করি যাতে আমার সন্তান তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।’
কেবল ধর্মপুর এলাকাই নয়, কুমিল্লা নগরীর সব এলাকাতেই মাদকের বিষাক্ত ছোবল কুমিল্লার অন্তত ত্রিশ হাজার তরুণ-যুবকের জীবন তছনছ করে দিচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লায় বর্তমানে মাদক নির্ভরতাদের মধ্যে বেশিরভাগই ইয়াবা ও ফেনসিডিলসেবী। গন্ধবিহীন সিরাপ, ফেনসিডিলের পাশাপাশি ইয়াবা নামের গোলাপি রংয়ের গোলাকার ছোট ট্যাবলেট এখন সমাজের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত পর্যায়ের তরুণ, যুবক ও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছেও প্রিয়। ফলে মাদকদ্রব্যের নেশায় ডুবে ছন্নছাড়া জীবন পার করছে হাজার হাজার তরুণ।
পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে তরুণ-যুবকরা দিন দিন দূরে ছিটকে পড়ছে। অভিভাবকদের নজরদারিও কমছে সন্তানদের উপর থেকে। এতে করে ছেলেরা পারিবারিক শাসনের বাইরে থেকে উচ্ছৃংখল হয়ে উঠছে। আর সঙ্গদোষে নেশার পথে পা বাড়িয়ে পারিবারিক জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে। কেবল তাই নয়, চুরি, ছিনতাই, সন্ত্রাস, খুনোখুনি পর্যন্ত ঘটছে মাদককে ঘিরে। কেবল তরুণ-যুবকরাই নয়, কুমিল্লার অনেক অভিজাত পরিবারের মেয়েরাও গোপনে ফেনসিডিল, বিয়ার, ইয়াবার নেশা গ্রহণ করে থাকে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদকাসক্ত ছেলে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে বা শখের বশেই এসব মেয়েরা মাদকের নেশা গিলে থাকে। খশের বশে হাতে নেয়া মাদককে একসময় ওরা আপন করে নেয়। কুমিল্লায় মাদকাসক্ত মেয়েদের সুস্থ হওয়ার জন্য কোন রিহাব সেন্টার না থাকায় অনেক অভিভাবক তাদের নেশাগ্রস্ত মেয়েকে নিয়েও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। আবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় বেসরকারি উদ্যোগে প্রায় ৮/৯টি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন থাকলেও সেখানে মাদকাসক্তদের বেশিরভাগই চিকিৎসা নিতে অনীহা দেখায়।
মাদকবিরোধী প্রচারণার ওপর জোর দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে সমাজকর্মী আলী আকবর মাসুম বলেন, মাদকের বিষাক্ত ছোবলে আমাদের সন্তানের স্বপ্ন ও সম্ভাবনাকে অন্ধকারে হারিয়ে যেতে দিতে পারিনা। মাদকবিরোধী আন্দোলনে দলমতের উর্ধ্বে থেকে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
কুমিল্লা হাউজিং এস্ট্রেটের দর্পণ মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরিচালক গোলাম মহিউদ্দিন জীবন জানান, কুমিল্লায় যে পরিমাণ যুবক, তরুণ নানা প্রকার মাদকদ্রব্যের নেশায় ডুবে রয়েছে। সেই তুলনায় সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য এখানকার মাদকাসক্তি চিকিৎসা সেন্টারগুলোতে আসক্তের সংখ্যা কম। সর্বোপরি পরিবারের অভিভাবক বা দায়িত্বশীল ব্যক্তিদেরকে মাদকাসক্ত সন্তানের সুস্থতার বিষয়টি আগে ভাবতে হবে। অভিভাবকরা উদ্যোগী হলেই আসক্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা সেন্টারে ভর্তি করিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
কাল পড়ুন : নেশায় বুঁদ ফেনীর তরুণরা



 

Show all comments
  • জাহিদ খান ২ জানুয়ারি, ২০২১, ১:০৯ এএম says : 0
    মাদক ক্রমাগত এক ভয়াবহ সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • জোহেব শাহরিয়ার ২ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
    সত্যি বলতে কি দেশের এমন কোনো এলাকা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে মাদকের থাবা নেই। দেশজুড়ে এক বিশাল জাল বিস্তার করে আছে এই মরণ নেশার ভয়াবহ সিন্ডিকেট।
    Total Reply(0) Reply
  • দু খী জীবন ২ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
    শুধু শহরেই নয়, গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে মাদক। তার বিষাক্ত ছোবল শেষ করে দিচ্ছে তারুণ্যের শক্তি ও অমিত সম্ভাবনা। ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের অবক্ষয়, প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির অসামঞ্জস্যতা, হতাশা এবং মূল্যবোধের অভাবের সুযোগ নিয়ে মাদক তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তরুণ সমাজের প্রতি।
    Total Reply(0) Reply
  • নীল আকাশ ২ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
    এই অবস্থা চলতে থাকলে একটি সমাজের অন্ধকারের অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • নাসিম ২ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১১ এএম says : 0
    মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে হলে মাদকদ্রব্যের প্রাপ্তি সহজলভ্য যাতে না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যে কোনো মূল্যে ঠেকাতে হবে মাদকের অনুপ্রবেশ
    Total Reply(0) Reply
  • কাজী হাফিজ ২ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১১ এএম says : 0
    দুঃখজনক হচ্ছে, মাঝে-মধ্যে মাদকের চালান ধরা পড়লেও তাদের মূল কুশীলবরা থেকে যায় ধরাছোয়ার বাইরে
    Total Reply(0) Reply
  • দুনাল্দ তারাম্ব ২ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:০৪ এএম says : 0
    এর জন্য কোনভাবেই শাওয়ামী লীগ সরকার দায়ী নয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদক

২২ অক্টোবর, ২০২২
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ