Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দেড়যুগ পর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ?

ভূমি হীনদের ঘর নির্মাণে কেলেঙ্কারি....

মহসিন রাজু | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:১৮ পিএম

৩০ জানুয়ারি বগুড়া সদরের দশটিকা গ্রামে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে গুচ্ছ গ্রামের খাস জমিতে ৪৫ টি পাকা ঘর নির্মাণে দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন সময় টেলিভিশনের ২ সাংবাদিক মাজেদ রহমান ও রবিউল ইসলাম রবি। 

হামলাকারী সন্ত্রাসীরা তাদের ভিডিও ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন ৩১ ডিসেম্বর সকালের দিকে বগুড়া শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় জড়ো হয়ে হামলার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার দাবি করে সাংবাদিক সহ শত শত বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ।
দুপুরে এই ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ফলে পুলিশ তৎপর হয়ে উঠলে টনক নড়ে হামলার নেপথ্যের কুশীলবরা।
ওই দিনই সাংবাদিকদের মানব বন্ধনকে কাউন্টার দিতে তড়িঘড়ি করে দশটিকা গ্রামে প্রকল্পস্থলে পাল্টা মানব বন্ধন কর্মসুচি পালন করা হয়।
এছাড়া বিকেলে বগুড়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান শফিক বগুড়া সদরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিজুর রহমান ও উপজেলা প্রকৌশলী মেহেদী হাসানকে ডিফেন্ট করে কৌশলী সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন।

উপজেলা পরিষদের নিজস্ব সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলন উপজেলা চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হামলাকারীদের জাস্টিফায়েড করতে বলেন ওই সাংবাদিক দুজন প্রকল্পের একটি পিলার ধাক্কা দিয়ে ভেঙে ফেললে কে বা কারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরি করে।

অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে অনুষ্ঠিত এই সাংবাদিক সম্মেলনের পর অনেকেই দেড় যুগ আগে বগুড়ার খাদ্য বিভাগের পচা ও নিম্নমানের ভারতীয় গম সংগ্রহের সংবাদ মিডিয়ায় প্রচার হলে নাটকীয়ভাবে তৎকালীন এমপি হেলালুজ্জামান লালু খাদ্য বিভাগের গোডাউনে মজুদ পচা গমকে ভালো বলে সার্টিফিকেট দিলে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।
গম কেলেঙ্কারির সাথে এমপি লালুর বিজনেস পার্টনার টেলুর সংশ্লিষ্টতা প্রকাশ হয়ে পড়ে। ২০০২
সালের ওই ঘটনাটি তৎকালীন ৪ জোট সরকারের ভাবমুর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন হয়। এম পি লালুও
"গম লালু' রুপে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
দীর্ঘ দেড় যুগের পর মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভুমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার একটি করে "পাকা বাড়ি "প্রদানের কর্মসুচি লোভী আমলা ও উদাসীন জনপ্রতিনিধিদের বগুড়ায় পুরোই ভেস্তে যেতে বসেছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, বগুড়ার ১২ উপজেলায় ১,৪৫২ টি পাকা বাড়ি ভুমিহীনদের বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে।
প্রতিটি ঘর নির্মানের জন্য সরকারি বরাদ্দ রয়েছে ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা।
এই প্রকল্প সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, সরাসরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগনই উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে কর্মসুচি বাস্তবায়নের কাজ
করে যাচ্ছে।

এর পরিপত্র বা নিয়মকানুন সম্পর্কে জনপ্রতিনিধি বা মিডিয়াকেও কিছুই জানানো হচ্ছেনা।
প্রকল্পটির সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বগুড়া সদরের। বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা, করতোয়া নদী সহ বিভিন্ন বালু মহাল থেকে বে আইনী বালু উত্তোলন সহ সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের বহু অভিযোগ মিডিয়ায় প্রকাশ হলেও কর্তৃপক্ষ তাদের কোনো অভিযোগই আমলেই নেয়নি।

বেশ কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য জানিয়েছেন, সরকারি প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতি খোলাখুলিভাবে চলছে। অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার না হওয়ায়
সবাই হতাশ।

এদিকে ভুমিহীনদের জন্য ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকায় ঘর নির্মান প্রকল্পের কাজ যেভাবে হচ্ছে, তাতে অনিয়ম পর্যবেক্ষন করে একাধিক জনপ্রতিনিধি বলেছেন, বগুড়া সদরের দশটিকা গ্রামের প্রকল্পের ঘর নির্মানে ১লক্ষ ৭১ হাজার টাকাও খরচ করা হয়েছে কি না তা' নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
মুলত সেকারণেই গত ৩০ ডিসেম্বর সরে জমিনে সংবাদ চিত্র ধারন করতে গেলে সময় টিভির ২ সাংবাদিককে মারপিট করে টেলিভিশন ক্যামেরা ও মোবাইল ছিনতাই করা হয়।
এই ঘটনায় দোষীদের শাস্তির পদক্ষেপের বদলে উল্টো সাংবাদিকদের ভিক্টিমাইজ করতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিক সাংবাদিক সম্মেলনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দোষ প্রমানের চেষ্টা করেছেন।
যার ফলে প্রকল্পটির দুর্নীতির সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতাই ধরা পড়ে গেছে। এতে সরকারের ভাবমুর্তিও ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করছেন সরকার দলীয় অনেক সচেতন নেতা কর্মিরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কেলেঙ্কারি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ