Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আগামী বছরেই হলমার্ক কেলেঙ্কারির পরিসমাপ্তি

আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

সোনালী ব্যাংকের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেছেন, হলমার্ক আমাদের থামিয়ে রাখেনি, তবে আমাদের জন্য বড় ধরনের একটি ধাক্কা ছিল। যা সামাল দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে আসতে সাহায্য করেছে। হলার্কের সম্পদগুলো ইতিমধ্যে সোনালী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে মো. আতাউর রহমান বলেন, কোর্টের রায়ের মাধ্যমে বেশ কিছু জমিজমা আমরা পেয়েছি। এখন আমরা চিন্তা করছি কিভাবে এটিকে নিষ্পত্তি করা যায়। দুটি লক্ষ নিয়ে কাজ করছি। প্রাপ্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে অথবা একটি স্পেশাল ইকনোমিক জোন তৈরি করে কিভাবে কাজে লাগানো যায়। তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ, যেভাবে কাজ হচ্ছে, তাতে এ বছরে না হলেও আগামী বছরের মধ্যেই হলমার্কের বিষয়ে একটি নিষ্পত্তি আসবে। আমি আশাবাদি, আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা এখান থেকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে। হলমার্কের কারণে মূলধন ঘাটতি- একথা অনুঘটক হতে পারে। তবে হলমার্কের কারণেই আমাদের মূলধন ঘাটতি হয়েছে- এমন কথা বলা যাবে না।

গতকাল বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন প্রতিশ্রুতি দেন। মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর ব্যাংকটির আইনি কাঠামোঠামো জোরালো হয়েছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা ব্যাংকটিতে আর ঘটেনি বলেও জানান তিনি।

ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, মূলধন ঘাটতির কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকের আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও লেনদেন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় এ ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ এখন এক লাখ ৩১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। যার বিপরীতে ঋণ রয়েছে ৬৯ হাজার ১১ কোটি টাকা। তিনি জানান, বড় অঙ্কের এ ঋণের বিপরীতে খেলাপি ঋণের হার ১৬ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চে ব্যাংকটির ৫৬৮ কোটি পরিচালন মুনাফা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, করোনার মধ্যে সোনালী ব্যাংক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে ব্যাপক এগিয়েছে। আগামী দিনে গ্রাহক সেবার মান বাড়াতে প্রযুক্তির ব্যবহারে আরো বেশি জোর দেয়া হচ্ছে বলেও জানান আতাউর রহমান প্রধান।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে হলমার্কের ঋণ জালিয়াতির খবর প্রথম প্রকাশিত হয়। হলমার্কসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা (হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল) শাখা থেকে ঋণের নামে তিন হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। আলোচিত এ কেলেঙ্কারির হোতা হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ হলেও এর সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। এ ঘটনায় ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর রমনা থানায় মামলা করে দুদক।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বছর মার্চে পরিচালন মুনাফা ছিল ৪৩০ কোটি টাকা এবং চলতি বছর মার্চে অপারেটিং মুনাফা ৫৬৮ কোটি টাকা। গত বছরের তুলনায় মুনাফা বৃদ্ধির পরিমাণ ১৩৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটিতে ঋণের পরিমাণ ৬৯,০১১ কোটি টাকা। মার্চ, ২০২২ পর্যন্ত ঋণের পরিমাণ ৭১.৫৪৮.৯১ কোটি টাকা। বিগত তিন মাসে ২,৫৩৭.৯১ কোটি টাকা ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্চ ২০২১ সালে ঋণের পরিমাণ ছিল ৬০,২৭০ কোটি টাকা। ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণ ১১,২৭৮.৯১ কোটি টাকা। বিগত তিন মাসে এডিও বৃদ্ধি পেয়ে ৫৪.৩৭ এ উন্নীত হয়েছে যা ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ছিল এডিও ৫১.১১। মার্চ ২০২১-এ এডি রেশিও ছিল ৪৭.৫৩। আমানতঃ মার্চ ২০২২ আমানতের পরিমাণ ১,৩১,৫৯০ কোটি টাকা এবং মার্চ ২০২১-এ আমানত ছিল ১,২৬,৮১৩ কোটি টাকা। গত বছরের তুলনায় আমানত বৃদ্ধির পরিমাণ ৪,৭৭৭ কোটি টাকা।

গত ০৩ মাসে সোনালী ব্যাংক থেকে আহরিত বৈদেশিক রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৩০২.৭৯ মিলিয়ন (বা ১০৩৩ কোটি টাকা)। গত ২৪ মার্চ অর্থমন্ত্রী এজেন্ট ব্যাংকিং উদ্বোধন করেন। ইতিমধ্যে আমরা ২০টি এজেন্ট আউটলেট চালু এবং জুনের আরো ১০০০টি এজেন্ট পয়েন্ট চালু হবে। গ্রাহকদের উন্নত ব্যাংকিং সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের নিজস্ব কল সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া সোনালী ব্যাংক কার্ড সার্ভিস আরো বেগবান করার জন্য নিজস্ব কার্ড মন্ট গেটওয়ে প্রকিউরমেন্ট কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সোনালী ব্যাংকের সকল শাখায় ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো চালু করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হলমার্ক কেলেঙ্কারির
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ